স্পোকেন টিউটোরিয়াল (Spoken Tutorial), জ্ঞান দর্শন (Gyan Darshan), জ্ঞান বাণী (Gyan Vani), সাক্ষাত পোর্টাল (Sakshat Portal), ই-জ্ঞানকোষ (e-Gyankosh)
স্পোকেন টিউটোরিয়াল (Spoken Tutorial) :
Spoken Tutorial প্রকল্পটি ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়) তত্ত্বাবধানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দ্বারা পরিচালিত জাতীয় শিক্ষা মিশনের (NMEICT) অন্তর্গত 'Talk to teacher' কার্যকলাপের উদ্যোগ। 2010 সালে ভারত সরকারের অধীনস্থ সংস্থা IIT বোম্বের গবেষকরা এই প্রকল্পটির বাস্তবিক রূপ দান করেছিলেন।
এই প্রকল্পটি মূলতঃ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তা দানের জন্যই গ্রহণ করা হয়েছিল। এটি একটি ওয়েবভিত্তিক শিক্ষা যা আমাদের দেশের সমস্ত মানুষের কাছে বিনামূল্যে ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার (FOSS) সহ প্রযুক্তির জ্ঞান প্রেরণ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় স্পোকেন টিউটোরিয়ালকে পরিচালনা করার দ্বারা সারা দেশের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে শিক্ষাদান করা সম্ভব হয়েছে। এখানে কোন বিষয়বস্তুর অ্যানিমেশন এবং বর্ণনা যখন একসাথে উপস্থাপন করা হয় তখন শিখন অনেক বেশী কার্যকরী হয় ওঠে। এছাড়া অডিও-ভিডিও প্রদর্শনগুলি অধিক স্পষ্টতার সাথে অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যগুলিকে চিহ্নিত করতে পারে। বর্তমানে স্পোকেন টিউটোরিয়াল প্রকল্পটি LaTeX, PHP, MySQL, Python 3.4.3 প্রভৃতি সফ্টওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রোগ্রামিং বিভিন্ন ভাষার উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।
স্পোকেন টিউটোরিয়ালের সুবিধা-
- এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সফ্টওয়্যার বিষয়ক প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
- বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বিভিন্ন কর্মশালা প্রস্তুত করতে এর সুবিধা পাওয়া যায়।
- নিজস্ব টিউটোরিয়াল তৈরীর মাধ্যমে সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা যায়।
- দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণের মাধ্যমে শিক্ষালাভের দরুন বিষয়বস্তু সম্পর্কে সার্বিক জ্ঞান লাভ করা যায়।
- বিভিন্ন ভাষাতে শিক্ষাগ্রহণ করার সুযোগ থাকার কারণে যেকোনো ভাষাভাষীর শিক্ষার্থী এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করে।
- রেকর্ডিং করে রাখা কোনো তথ্য প্রয়োজন অনুসারে পুনরায় চালনা করার সুযোগ রয়েছে।
জ্ঞান দর্শন (Gyan Darshan):
জ্ঞান দর্শন হল শিক্ষা সম্প্রচারমূলক দূরদর্শন চ্যানেল। ভারতবর্ষের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার দপ্তর, প্রসার ভারতী ও ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে 2000 সালের 26শে জানুয়ারি এই টেলিভিশন চ্যানেলটির শুভ সূচনা করা হয়। প্রথমাবস্থায় মুক্ত ও প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের দায়িত্ব (IGNOU)-র হাতে অর্পণ করা হয়। ক্রমশই শিক্ষার্থীরা এই চ্যানেলটির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সময়সীমা বাড়ানো হতে থাকে। এই ভাবে দিনের পর দিন চ্যানেলটির প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ঠিক এক বছরের মাথায় অর্থাৎ 2001 সালের 26শে জানুয়ারী এই চ্যানেলটি সম্প্রচারের সময়সীমা বাড়িয়ে 24 ঘণ্টা করে দেওয়া হয়। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধামত দিনের যেকোনো সময়ে প্রয়োজনীয় বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।
জ্ঞান
দর্শন-I
|
এটি জ্ঞান দর্শনের প্রধান চ্যানেল। এই চ্যানেলটি IGNOU দ্বারা
পরিচালিত। এখানে CEC/UGC-র মাধ্যমে দেশব্যাপী বিভিন্ন ভার্চুয়াল শ্রেণিকক্ষ, IIT-র মাধ্যমে
টেকনোভিসন এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থান (RSKS) এর মাধ্যমে ভাষা মন্দাকিনীর (5th Sept. 2003) অনুষ্ঠানের
সম্প্রচার করা হয়।
|
জ্ঞান
দর্শন-II/TDCC
|
জ্ঞান দর্শনের এই চ্যানেলটি স্যাটেলাইটভিত্তিক ভিডিও
ইন্টারেক্টিভ সিস্টেম। এখানে শিক্ষার্থীরা সরাসরি শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞদের দেখার
সুযোগ পায়। এখানে IGNOU টেলিকনফারেন্সিং এর জন্য প্রায় 79 টি শহরে
টেলিফোনের সাহায্যে কথোপকথনের জন্য 1-600-1-12345 টোল ফ্রি নম্বরের ব্যবস্থা করেছে এবং (Training & Development Communication
Channel) হল একটি দ্বিমুখী স্যাটেলাইটভিত্তিক অডিও
ইন্টারেক্টিভ সিস্টেম। এটি প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নমূলক যোগাযোগ চ্যানেল হিসেবে কাজ করে।
|
জ্ঞান
দর্শন-III
|
এই চ্যানেলটি IIT দিল্লী দ্বারা পরিচালিত। এটি 'একলব্য
প্রযুক্তি' চ্যানেল নামে পরিচিত। এটি বৃত্তিমূলক ও কারিগরি
শিক্ষাসংক্রান্ত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে। এখানে দেশের প্রমুখ আইআইটি
শ্রেণিকক্ষের বক্তৃতাগুলি সম্প্রচার করা হয়ে থাকে।
|
জ্ঞান
দর্শন-IV
|
জ্ঞানদর্শনের এই চ্যানেলটি 'ব্যাস' নামে
পরিচিত। এটি UGC/CEC দ্বারা পরিচালিত। এই চ্যানেলটির লক্ষ্য হল উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে 'গুণগতশিক্ষা'-র সম্প্রসারণ ঘটানো। এছাড়া এখানে কৃষি, কারিগরি
শিক্ষা ও বিদ্যালয় সম্পর্কিত শিক্ষা পরিবেশন করা হয়।
|
জ্ঞান দর্শন চ্যানেলের সুবিধা-
- দূরদর্শনের মাধ্যমে বাড়িতে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
- দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণের মাধ্যমে বিষয়বস্তু উপস্থাপনের ফলে শিক্ষার্থীরা সহজে এবং সঠিক জ্ঞানলাভে সক্ষম হয়।
- গতানুগতিক শ্রেণীকক্ষ অপেক্ষা দূরদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষাদান শিক্ষার্থীদের কাছে যেমন আকর্ষণীয় হয় তেমনি আগ্রহেরও সৃষ্টি করে।
- যে কোন অনুষ্ঠানের পুনঃসম্প্রচার করার সুবিধা থাকে।
- বিষয়গত আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্যসমৃদ্ধ ও সৃজনমূলক আলোচনা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে।
- এই চ্যানেলটি দূরশিক্ষার একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে।
- ভারতবর্ষের প্রত্যেক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমানভাবে এখানে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।
জ্ঞান বাণী (Gyan Vani):

জ্ঞান বাণী হল একটি শিক্ষামূলক FM রেডিও চ্যানেল। জ্ঞান দর্শন চ্যানেলের মত এই FM স্টেশনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম হিসেবে IGNOU, NCERT, UGC, IIT এবং বিভিন্ন মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে। এর মাধ্যমে প্রতিদিনই নতুন নতুন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতে থাকে। এই সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান গুলির মধ্যে একদিকে যেমন বিভিন্ন পরিবেশ সম্পর্কিত ও কৃষিকাজ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায় তেমনি অন্যদিকে স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং নারী ও শিশুকল্যাণ বিষয়ক তথ্যের সন্ধান মেলে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্যও এটি একটি উপযুক্ত শিক্ষামূলক মাধ্যম। সকলের সুবিধার্থে এখানে প্রতিটি অনুষ্ঠান হিন্দি, ইংরেজি ও আঞ্চলিক ভাষায় সম্প্রচার করা হয়ে থাকে। এখানে প্রতিটি রেডিও স্টেশন 70 কিলোমিটার ব্যাসার্ধযুক্ত এক-একটি এলাকায় বিস্তৃত থাকে এবং অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সময়কাল স্টেশনভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে যা 8-12 ঘণ্টার মধ্যে সীমায়িত থাকে।
ভারতের বিভিন্ন শহরে এটি শিক্ষামূলক রেডিও স্টেশন হিসেবে এটি পরিচিতি লাভ করেছে। জ্ঞান বাণী FM রেডিও স্টেশন প্রধানত স্টিরিওফোনিক এফএম ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে থাকে। এর প্রতিটি স্টেশনই IGNOU-র মিডিয়া প্রোডাকশন সেন্টারের (EMPC) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এই ইএমপিসি সেন্টারটি বিভিন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর, বেসরকারি সংগঠন, কর্পোরেট সংস্থা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষাগত উপাদানের প্রস্তুতি ও সম্প্রসারণে সাহায্য করে থাকে।
2000 সালের মার্চ মাসে যখন FM ফ্রিকোয়েন্সি লাইসেন্সগুলি নিলাম করা হয়েছিল সেই সময় ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে (MHRD) শিক্ষাগত তথ্য সম্প্রচার করার জন্য একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি প্রদান করা হয়েছিল। তৎকালীন ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রোডাকশন সেন্টারের চেয়ারম্যান ডঃ আর শ্রীধর এই কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করার জন্য কতগুলি মৌলিক উদ্ভাবনী সৃজনশীল অনুষ্ঠানের নকশা তৈরি করেছিলেন। তার চিন্তাভাবনায় ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে দৃশ্য-শ্রাব্য স্টুডিওগুলির সংযোগ স্থাপনের দ্বারা সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানকে আরও জনপ্রিয় করে তোলা। এই রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য IGNOU-র উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কারণ তাদের সম্প্রচার সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। এই কর্মসূচিকে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে প্রসার ভারতী ও IGNOU-র মধ্যে একটি মৌ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল এবং কথা হয়েছিল প্রসার ভারতী পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও এই রেডিও স্টেশনটিকে পরিচালনার জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম IGNOU-কে সরবরাহ করবে।
IGNOU-র পক্ষ থেকে এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কে এস প্রসাদ রাও এবং অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছিলেন তাদের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার হরিওম শ্রীবাস্তব। IGNOU-র উপাচার্য এইচ পি দীক্ষিত এবং প্রসার ভারতীর প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা অনিল বাইজালের উপস্থিতিতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়েছিল। প্রথমদিকে IGNOU এলাহাবাদ, বেঙ্গালুরু, ভোপাল, কোয়েম্বাটুর, লখনউ, বিশাখাপত্তনমে তাদের প্রথম সম্প্রচার শুরু করেছিল। 2003 সালের প্রথমদিকে দশটি FM স্টেশনের দ্বারা দশটি শহরে তাদের সম্প্রচার শুরু করেছিল। পরবর্তীকালে মোট 37 টি শহরে এই FM স্টেশন বিস্তার লাভ করে। আমাদের রাজ্যের কলকাতায় FM 105.4 স্টেশনটির মাধ্যমে সকাল 6টা থেকে রাত্রি 12টা এবং সন্ধ্যা 6টা থেকে সকাল 11টা সময়ের মধ্যে এই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়ে থাকে।
সাক্ষাত পোর্টাল (Sakshat Portal):
ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (MHRD) বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে 'Sakshat' নামক একটি ওয়ানস্টপ শিক্ষাসংক্রান্ত পোর্টাল তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। 2006 সালের 30শে অক্টোবর এই পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডক্টর এপিজে আব্দুল কালাম 'সাক্ষাত' নামক পোর্টালটির আনুষ্ঠানিক সূচনার মধ্য দিয়ে। শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এই পোর্টাল এমন একটি প্রবেশ পথ যার মাধ্যমে যেকোনো সময়ে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনমতো বৈদ্যুতিক বিষয়বস্তু গ্রহণ করতে পারে।
এই সুবিধার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সাক্ষাত পোর্টালকে শিক্ষাদানের সঠিক মাধ্যম হিসেবে সদর্থকভাবে গ্রহণ করে এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের প্রায় 5 লক্ষ শিক্ষককে ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে এই পোর্টাল এর সাথে যুক্ত করে। UGC, AICTE, IGNOU, NCERT, KVS, CBSE, NVS ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি এই পোর্টালের জন্য বিভিন্ন বিষয়প্রাসঙ্গিক e-content লিংক তৈরী করে থাকে যার প্রধান উদ্দেশ্য জ্ঞানীয় সম্পদ, শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য, পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন ধরনের উপদেশ ও অন্যান্য শিক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় লিংকগুলিকে সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়া। সাক্ষাৎ পোর্টাল এর উদ্দেশ্য-
- সারা দেশে বিনামূল্যে ও বাধামুক্ত ওয়েবভিত্তিক লার্নিং রিসোর্স প্রদান করা।
- বিশ্বমানের নিরীখে একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ মাল্টিমিডিয়া লার্নিং কনটেন্টের ভান্ডার তৈরি করা।
- সিনক্রোনাস ও অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন মোডের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের ওয়েবভিত্তিক নির্দেশনা প্রদান করা।
- অনলাইন মেন্টরিং ও পরীক্ষা মূলক পরিসেবা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করা।
- শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে আদান-প্রদানের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করা।
- কাস্টমাইজড অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতিকে যাচাই করা এবং পেশা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবগত করার জন্য অনলাইন ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এর সুবিধা প্রদান করা।
ই-জ্ঞানকোষ (e-Gyankosh):
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে ই-লার্নিং এর অগ্রগতি এবং এর বহুল প্রচলন শিক্ষাবিদদের শ্রেণীকক্ষের বাইরেও শিক্ষণ উপাদান তৈরিতে সাহায্য করছে। বর্তমানে শিক্ষকের দক্ষতা, গুণ, আগ্রহ, কর্মক্ষমতা ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল না হয়েও শিক্ষার্থীরা e-content এর ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেরাই বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সম্যক্ ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ভারত সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দ্বারা পরিচালিত জাতীয় শিক্ষা মিশনে e-content এর বিকাশের জন্য বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেগুলির মধ্যে e-PGPathshala, NPTEL এবং e-Gyankosh উল্লেখযোগ্য। e-Gyankosh শব্দটি তিনটি শব্দের মিলিত রূপ: e= ইলেকট্রনিক, Gyan= জ্ঞান ও kosh= ভান্ডার। e-Gyankosh হল একটি জাতীয় ডিজিটাল ভান্ডার (National Digital Repository)। এই প্রকল্পটিকে 2005 সালের অক্টোবর মাসে ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চালু করা হয়েছিল।
স্ব-নির্দেশনামূলক উপাদানগুলিকে ডিজিটালকরণের উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পটি চালু করা হয়। বিশ্বের বৃহত্তম শিক্ষামূলক ভাণ্ডারের মধ্যে অন্যতম হল ই-জ্ঞানকোষ। এতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের 2200 টি কোর্সের উপর প্রায় 40,000 স্ব-নির্দেশনামূলক টেক্সট কন্টেন্ট ও 2200 ভিডিও লেকচার রয়েছে। প্রকল্পটি চালু হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এবং সারা বিশ্বে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সম্প্রদায়ের কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল। বর্তমানে এটিতে প্রায় 2 লক্ষ সক্রিয় নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছেন। স্ব-নির্দেশনামূলক শিক্ষা উপাদানের প্রায় 95 শতাংশ ইতিমধ্যেই ডিজিটালাইজ করা সম্ভবপর হয়েছে ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য সেগুলিকে ই-জ্ঞানকোষের সাইটে আপলোড করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ই-জ্ঞানকোষ শুধুমাত্র ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু 2008 সালের জুন মাস থেকে ই জ্ঞানকোষের সমস্ত কনটেন্টকে সকলের ব্যবহারের জন্য সুযোগ প্রদান করা হয়েছিল। তারপর থেকে যে কোন ব্যক্তি বিনামূল্যে রেজিস্টার করার মাধ্যমে ই-জ্ঞানকোষ থেকে তার প্রয়োজনীয় শিখন উপাদান মুদ্রণ এবং ভিডিও ফরম্যাটে সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া ই-জ্ঞানকোষ শিক্ষার্থীদের শিখন সংক্রান্ত উপাদানের পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি ব্যক্তিগত শিখন প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে থাকে, যার দ্বারা শিক্ষার্থীরা নিজেদের শিক্ষাগত চাহিদা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শিখন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। ই-জ্ঞানকোষ সারা দেশের মুক্ত ও দূরাগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ডিজিটাল লার্নিং রিসোর্স আদান-প্রদানে সাহায্য করে থাকে। এর অন্তর্গত সকল কোর্সের উপকরণকে বিনামূল্যে অ্যাক্সেস ও ডাউনলোড করা যায়। একবার রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সমস্ত শিক্ষামূলক উপাদানগুলিকে খুব সহজেই অ্যাক্সেস করা যায়। ই-জ্ঞানকোষের মাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করা হয়। যেমন- সমাজবিজ্ঞান, মানবিক বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব, ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিজ্ঞান, গণিত, প্রযুক্তি ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ইত্যাদি।
0 Comments: