হ্যাপটিক প্রযুক্তি (Haptic Technology)
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

হ্যাপটিক প্রযুক্তি (Haptic Technology)

হ্যাপটিক প্রযুক্তি (Haptic Technology)

 হ্যাপটিক প্রযুক্তি 

(Haptic Technology)

    হ্যাপটিক হল এমন একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যেখানে স্পর্শের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে নিয়ন্ত্রণ এবং যোগাযোগ সম্ভব। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী কম্পন গতিশক্তির দ্বারা স্পর্শ করতে পারে। হ্যাপটিক প্রযুক্তি মূলত ভার্চুয়াল বস্তু তৈরি করতে, সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা মেশিন এবং ডিভাইসগুলির রিমোট কন্ট্রোলের উন্নতিতে ব্যবহৃত হয়। Haptics শব্দটি গ্রীক শব্দ 'Haptikos' থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে, যার অর্থ হল 'able to come into contact with' অর্থাৎ স্পর্শের মাধ্যমে সংবেদন সৃষ্টি করতে সাহায্য করা। এককথায় হ্যাপটিক হল কম্পিউটারের স্পর্শ এবং অনুভূতি সংবেদন যোগ করার প্রযুক্তি। মানুষের স্পর্শেন্দ্রিয়গুলি কিভাবে ভার্চুয়াল বস্তুগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা এর মাধ্যমে জানা সম্ভব।


    পূর্বে হ্যাপটিক প্রযুক্তি বৃহৎ বিমানের সার্ভমেকানিজম্ সিস্টেমের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হত যাতে বিমানের উপরিতল ও পৃষ্ঠতল কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হত। যদি কখনও বিমান কোন বিপদের সম্মুখীন হত তাহলে বিমান চালককে কম্পনের অনুভূতির মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হত। এটি অদৃশ্য বাধা-বিপত্তিকে সরিয়ে চালককে বিমান চালাতে যেমন সাহায্য করত তেমনি মেশিনের ক্ষতির ঝুঁকিও অনেকটা কমিয়ে দিত। 

    পরবর্তীকালে এই হ্যাপটিক প্রযুক্তিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। যেমন 1995 সালে নরওয়ের ইলেকট্রনিক মিউজিশিয়ান ও কম্পোজার Geir Jenssen এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি হাতঘড়ি তৈরি করেন। এটি এমন একটি হাতঘড়ি যেখানে ব্লুটুথ এর মাধ্যমে মোবাইল ফোনের সংযোগ স্থাপন করা যায়। এর মাধ্যমে মোবাইল কলারদের শনাক্ত করা যায় এবং নির্বাচিত সংক্ষিপ্ত বার্তার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানো যায়। 2015 সালে চালু হওয়া অ্যাপেলের স্কিন ট্যাপ রিস্টওয়াচ ঘড়ি যেটি পরিধান করলে ব্যক্তি মোবাইল ফোনের বিভিন্ন সর্তকতা ও বিজ্ঞপ্তি ঘড়ির মাধ্যমে জানতে পারে। 


হ্যাপটিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষেত্র:-

  1. Medical applications:- হ্যাপটিক প্রযুক্তির সাহায্যে একদিকে যেমন laparoscopy ও interventional radiology প্রশিক্ষণের সুবিধা পাওয়া যায় তেমনি দূরবর্তী সার্জারির ক্ষেত্রেও এটি সাহায্য করে থাকে, ফলে চিকিৎসক বিনা ক্লেশে অস্ত্রোপাচার করতে পারে। এছাড়া স্পর্শানুভূতির মাধ্যমে ডিজিটাল ছবিও তৈরি করা যায়। 
  2. Military applications:- সৈনিকদের জন্য এই প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন ভূখণ্ডের চটজলদি তথ্য জানতে এটি একটি কার্যকরী যোগাযোগ চ্যানেল হয়ে উঠতে পারে। 
  3. Video games:- 1976 সালের সিজা কোম্পানির মোটর বাইক গেম মোটর-ক্রস-এ প্রথম হ্যাপটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই খেলাতে যখনই মোটর বাইকের মধ্যে সংঘর্ষ হত তখনই খেলোয়াড়ের হ্যান্ডেল বার-এ কম্পন সৃষ্টি হত। পরবর্তীকালে বিভিন্ন খেলাতে খেলোয়াড়দের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরীর উদ্দেশ্যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।
  4. Museum display:-  শিল্পীদের স্থাপত্য ভাস্কর্য এবং অমূল্য আলংকারিক নিদর্শন 3D ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে CD-ROM এর সাহায্যে যেকোন সময়ে উপলব্ধ হয়। 
  5. Tactile electronic display:- স্পর্শানুভূতি সম্পন্ন ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে হল এমন একটি বস্তু যেখানে স্পর্শের মাধ্যমে অনুভূতি সৃষ্টি করে তথ্য উপস্থাপন করা হয়। 
  6. Robotics:- যে সমস্ত রোবটিক যন্ত্র রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো shadow hand। এই হাতে প্রযুক্তির প্রয়োগ করে স্পর্শ, চাপ, কোন বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করা যায়। ফলে কোন ব্যক্তি কোন একটি নির্দিষ্ট বস্তুকে সরাসরি হাত না দিয়েও তাকে সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারে। 
  7. Holographic interaction:- হলোগ্রাম হল একটি ত্রিমাত্রিক ছবি। আর হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি হল এমন একটি টেলি-কমিউনিকেশন সিস্টেম যার সাহায্যে ত্রিমাত্রিক পরিবেশ (3D) তৈরীর মাধ্যমে এমন কিছু উপস্থাপন করা হয় যেটিকে বাস্তব মনে হলেও মূলত বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব নেই। কোন মিটিং বা কনফারেন্সে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 
  8. Assistive Technology for the blind and visually impaired:- অন্ধ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে স্পর্শের মাধ্যমে বিভিন্ন গাণিতিক সমাধান ও মানচিত্র অনুভবের দ্বারা শিখন সম্ভব।
  9. Personal computer:- অ্যাপেল ম্যাকবুক 2008 সালে কম্পিউটারে স্পর্শানুভূতি টাচপ্যাড-এর নকশা তৈরি করে যার মাধ্যমে কম্পিউটারকে নির্দেশ প্রদান করা যায়। 
  10. Mobile device:- আজকাল হ্যাপটিক প্রযুক্তি আমাদের সকলের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। যেকোন মোবাইল ফোনে এই হ্যাপটিক প্রযুক্তির ব্যবহার এখন একটি সাধারণ বিষয়। মোবাইলে স্পর্শের মাধ্যমে কম্পন সৃষ্টিই হল হ্যাপটিক প্রযুক্তি।
হ্যাপটিক প্রযুক্তির সুবিধা-

  • যে কোন ডিভাইসে স্পর্শের মাধ্যমে সংবেদন সৃষ্টি করা যায়।
  • মানুষের স্পর্শেন্দ্রিয়গুলি কিভাবে কাজ করে তা এই হ্যাপটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা সম্ভব।
  • এর মাধ্যমে ব্লুটুথ ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়।
  • এর মাধ্যমে দূর থেকে কোন বস্তুর মধ্যে উদ্দীপনা তৈরী করে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • কোন ভিডিও গেমস খেলোয়াড়ের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরী করার জন্য এটিকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক ডিজাইন বা অ্যানিমেশন তৈরীর ক্ষেত্রে এটি সাহায্য করে।
  • চিকিৎসাক্ষেত্রে দূরবর্তী সার্জারি করতে এটি বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
  • মোবাইলের মধ্যে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কম্পন সৃষ্টি করা যায়।

হ্যাপটিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা-

  • এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
  • এই প্রযুক্তির উপকরণগুলি আকারে অনেক বড় এবং ওজনে ভারী হয় (বিশেষত যেগুলি পরিধানযোগ্য)।
  • এই প্রযুক্তি সীমিত মাত্রায় শক্তি প্রয়োগ করতে পারে, সমস্ত ক্ষেত্রে সমান ভাবে শক্তি প্রয়োগে অক্ষম।
  • অনেক ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে অযথা সময় নষ্ট হয়।








0 Comments: