.jpeg)
বহুসাংস্কৃতিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের ভূমিকা (The role of the teacher in the multicultural classroom)
বহুসাংস্কৃতিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের ভূমিকা
(The role of the teacher in the multicultural classroom)
বহুসাংস্কৃতিক শ্রেণিকক্ষের প্রধান উদ্দেশ্য হল বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করা। একজন শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ বৃহত্তর সমাজে মানিয়ে চলার শিক্ষা দিতে সক্ষম। একজন ধৈর্যশীল, সহনশীল, পক্ষপাতিত্বহীন, সুদক্ষ, উদার মানসিকতাযুক্ত, সর্বগুণসম্পন্ন শিক্ষকই এই ধরনের শ্রেণিকক্ষ পরিচালনার জন্য উপযুক্ত। বহুসাংস্কৃতিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলিকে সফল করার জন্য আদর্শ শিক্ষককে নিম্নলিখিত ভূমিকাগুলি পালন করতে হবে-
১) সুষ্ঠু পরিবেশ গঠন- বহুসাংস্কৃতিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক প্রথমেই শ্রেণীকক্ষের নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। যে কোন রকম দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনমূলক আচরণ থেকে তিনি বিরত থাকবেন এছাড়া শ্রেণীকক্ষে সৃষ্ট যেকোন ধরনের সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করার চেষ্টা করবেন।
২) পাঠক্রমের উপযুক্ততা যাচাইকরন- পাঠক্রমটি নির্দিষ্ট শ্রেণিকক্ষের জন্য উপযুক্ত কিনা তা শিক্ষক মহাশয় প্রথমেই যাচাই করে তবেই তিনি পঠন-পাঠনে অগ্রসর হবেন।
৩) শিক্ষার্থীর মানসিকতা বিকাশে সহায়তা- এই ধরনের শ্রেণিকক্ষে যেহেতু বিবিধ ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির শিক্ষার্থীরা একত্রে শিক্ষালাভ করে তাই শিক্ষকের কাজ হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেই ধরনের জ্ঞান, বোধ ও দক্ষতার বিকাশ ঘটানো যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে যে তারা এই বৃহত্তর মানব সমাজেরই অংশ।
৪) শ্রেণীকক্ষের বৈচিত্র্য চিহ্নিতকরণ- বহুসাংস্কৃতিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের ধর্ম, জাতি, সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা। যাতে শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্য চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে তিনি উপযুক্ত শিক্ষাদান করতে পারেন।
৫) শ্রদ্ধা ও সহানুভূতিশীলতার শিক্ষাদান- শিক্ষার্থীরা যাতে বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে, প্রশংসা করে ও সম্মান দিতে শেখে এবং নিজেকে এর একটা অংশ বলে মনে করতে পারে শিক্ষক তার জন্য উপযুক্ত শিক্ষা দেবেন। সেইসঙ্গে অন্যের ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করা ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শেখাবেন।
৬) পক্ষপাতহীন শ্রেণী শিক্ষণ- বহুসাংস্কৃতিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানকালে শিক্ষক কোন বিশেষ ধর্ম বা জাতির ভাষাকে কখনোই গুরুত্ব দেবেন না। তার কাছে সব জাতি, সব ধর্ম, সব ভাষা সমান গুরুত্বপূর্ণ এরকম মনোভাব নিয়েই তিনি সেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন।
৭) সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের নিরসন- এই ধরনের শ্রেণিকক্ষে অনেক সময় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। যার অন্যতম কারণ হল ভাষা। তাই শ্রেণিকক্ষে যাতে কোন ভাষার অমর্যাদা না করা হয় সেদিকে শিক্ষক নজর দেবেন এবং ভাষাকে কেন্দ্র করে যাতে কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেদিকে শিক্ষক বিশেষ লক্ষ্য রাখবেন।
৮) বিভেদ দূরীকরণ কর্মসূচি গঠন- শ্রেণীকক্ষে বিভেদ দূরীকরণের জন্য শিক্ষক মহাশয় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করবেন। যেমন, বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন পোস্টার, গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য ইত্যাদি দিয়ে শ্রেণিকক্ষ সাজাবেন এবং এব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবেন। এছাড়া বিভিন্ন সংস্কৃতির খ্যাতনামা লেখকদের বিভিন্ন গ্রন্থ পড়তে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবেন।
৯) শিক্ষামূলক প্রকল্প গঠন- শিক্ষার্থীরা নিজেকে ও নিজ সংস্কৃতিকে জানবে, অন্যকে এবং অন্যের সংস্কৃতিকে জানতে পারবে এই রকম বিষয়ের উপর শিক্ষামূলক প্রকল্পের ব্যবস্থা করবেন শিক্ষক মহাশয়। তাহলেই বিভিন্ন সংস্কৃতির শিক্ষার্থীর মধ্যে নিজের সংস্কৃতি ও অন্যের সংস্কৃতির প্রতি সম্মানবোধ জাগ্রত হবে।
১০) সংস্কৃতিক উৎসব পালন- শিক্ষক মহাশয় বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা অন্যের সংস্কৃতিকে জানতে পারবে, বুঝতে পারবে এবং সেটার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় বহুসাংস্কৃতিক শ্রেণিকক্ষের সমস্যা নির্বাচন যেমন একজন শিক্ষক করতে পারেন, তেমনি একজন শিক্ষকই সমস্যার সমাধান ঘটিয়ে শিক্ষার লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম। তাই এই ধরনের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে অবশ্যই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে তবেই তিনি উপরিউক্ত ভূমিকাগুলি যত্ন সহকারে পালন করতে পারবেন।
0 Comments: