ব্রুনারের আবিষ্কারমূলক শিখন (Bruner's Discovery learning)

 ব্রুনারের আবিষ্কারমূলক শিখন
(Bruner's Discovery learning)

    আমেরিকান মনোবিদ্ Jerome Seymour Bruner ছিলেন একজন ক্রিয়াবাদী (Activist) ও প্রজ্ঞাবাদী মনোবিজ্ঞানী (Cognitive psychologist)। তিনি ১৯১৫ সালের ১লা অক্টোবর আমেরিকার নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। পিয়াজেঁর মতো তিনিও প্রজ্ঞামূলক বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি তাঁর 'The process of education towards a theory of instructions' নামক বইটিতে এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন- 'আমাদের জ্ঞানপ্রাপ্তি ক্রিয়াশীল হয়'। অর্থাৎ আমরা যে জ্ঞান অর্জন করি সেটা বিভিন্ন রকম স্তরে বিভিন্ন রকম শিক্ষার মাধ্যমে, বিভিন্ন রকম অবস্থার মধ্য দিয়ে ঘটে থাকে।

    Discovery learning বা আবিষ্কারমূলক শিখনে শিক্ষার্থী নিজেই নিজের বোধগম্যতাকে তৈরি করে অর্থাৎ নিজেই নিজের জ্ঞানকে সৃষ্টি করে।এটি প্রত্যক্ষ শিখনের বিপরীত। এখানে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সামনে প্রত্যক্ষভাবে তথ্য বা অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করে না।

    ব্রুনার বলেন আমাদের শিক্ষণীয় প্রতিটি বিষয়ের একটি নির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে এবং তার কেন্দ্রে রয়েছে একটি মূল ধারণা যা বাক্য, চিত্র বা সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব। যেমন কোন শিক্ষার্থীকে আমরা যদি পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা দিতে চাই তাহলে তার সামনে একটি গ্লোব আনতে হবে অথবা কাউকে পাহাড় সম্বন্ধে বোঝাতে গেলে একটি পাহাড়ের ছবি দেখাতে হবে। 

    আবার অন্যদিকে ব্রুনার বলেছেন যে, কোন বিষয়বস্তুকে পূর্ব পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপনের মাধ্যমেও শিখন সম্ভব। তিনি বলেছেন শিক্ষনীয় বিষয়বস্তুর সাথে শিক্ষার্থীদের বাস্তব পরিচয় ঘটাতে হবে, যাতে তার বাস্তব জ্ঞানটাও থাকে এবং শিক্ষার্থী কোন সমস্যায় পড়লে বাস্তবমুখী জ্ঞানের সাহায্যে সে নিজেই আবিষ্কারমূলক জ্ঞানের সাহায্য নেবে।

ব্রুনার তার শিখন তত্ত্বে বৌদ্ধিক বিকাশের তিনটি স্তরের কথা বলেছেন-

Enactive stage (সক্রিয়তার স্তর)- এই স্তরের বয়সসীমা জন্ম থেকে 3 বছর পর্যন্ত অর্থাৎ শৈশবকাল। এই স্তরে শিশুরা নিজে কাজটি সম্পাদন করে জ্ঞান অর্জন করতে চায়। অর্থাৎ এখানে শিখন হয় হাতে কলমে। এই স্তরে সক্রিয়তা প্রাধান্য পায়। সেইজন্য এই স্তরে শিখনকে কার্যকরী করতে গেলে বিষয় সংক্রান্ত হাতের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।

Iconic stage (মূর্ততার স্তর)- এই স্তরের বয়সসীমা 3 থেকে 7/ ৪ বছর অর্থাৎ আদি বাল্যকাল। এই স্তরে শিশু দৃষ্টিমূলক উদ্দীপকের সাহায্যে জ্ঞান অর্জন করে। এই স্তরে দৃশ্যমান মূর্ত বস্তু প্রাধান্য পায় অর্থাৎ দৃষ্টিমূলক প্রত্যক্ষণই শিশুর প্রজ্ঞামূলক বিকাশকে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই স্তরের শিখনের জন্য দৃষ্টিমূলক উদ্দীপক বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। সেজন্য কোন ধারণার জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষক/শিক্ষিকা Visual Teaching Aids ব্যবহার করবেন। যেমন- ত্রিভুজের ধারণা দিতে গেলে ত্রিভুজের ছবি দেখানো একান্তভাবে প্রয়োজনীয়।

Symbolic stage (সাংকেতিক স্তর)- এই স্তরের সময়সীমা হল উত্তর বাল্যকাল (late childhood) ও কৈশোরকাল (adolescence)। এই স্তরে ধারণা অর্জনের সময় ব্যক্তি সংকেত, চিহ্ন, যুক্তি প্রভৃতির ব্যবহার করে। এই স্তরে ব্যক্তি বিমূর্ত চিন্তন করতে পারে। এই স্তরে ব্যক্তি কঠিন, বিমূর্ত, সাংকেতিক ধারণা অর্জন করতে সক্ষম হয়।

আবিষ্কারমূলক শিখনের শিক্ষাগত তাৎপর্য-

ক) এই শিখনে শিক্ষার্থী প্রথমে সমস্যাকে আবিষ্কার করে।

খ) আবিষ্কারমূলক শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে যা শিখেছে তাকে ঠিকমতো চিহ্নিত করে নতুন চিন্তার দিকে অগ্রসর হতে পারে।

গ) শিক্ষার্থীরা এখানে নিজেরাই নিজেদের ধারণা গড়ে তোলে তাই শিখনের বিষয়টি তাদের কাছে অনেক বেশি অর্থবহ হয়ে ওঠে।

ঘ) এই শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আত্মবিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা জন্মায়।

ঙ) এখানে সমস্যায় পরার ফলে শিক্ষার্থী তার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগায়।