সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাব (Impact of information and communication technology in different areas of Society)
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাব (Impact of information and communication technology in different areas of Society)

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাব (Impact of information and communication technology in different areas of Society)

 Impact of information and communication technology in different areas of Society

(সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাব)

       ক্ষুদ্র মানবজাতির প্রত্যেকে বৃহত্তর সমাজেরই অংশমাত্র।সমাজে বসবাস করতে গেলে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সম্মুখীন হতে হয়। আর প্রতিটি কার্যক্ষেত্রে সুবিধার জন্য আজকাল আমাদের প্রযুক্তির শরনাপন্ন হতে হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যবহার আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় বহুক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তার কয়েকটি নিম্নে আলোচনা করা হল।

Education: শিক্ষাজগতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদ্যার (ICT) অবদান অনস্বীকার্য। শ্রেণীকক্ষের বাইরে বা ভিতরে সমস্ত ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার আধুনিক শিক্ষাকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। শিক্ষকেরা আজ ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে পারেন। আবার শিক্ষার্থীরাও ইন্টারনেটের সাহায্যে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকের গণ্ডি অতিক্রম করে বিপুল জ্ঞানভান্ডারে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। CAI, CAL, CBT প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষাকে অনেক সহজ করে তোলা হচ্ছে। অধুনা ICT -র কল্যাণে শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে যেমন শিক্ষার্থীরা এখন ঘরে বসেই ইমেইল, চ্যাটিং, ভিডিও কনফারেন্সিং প্রভৃতির মাধ্যমে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স করতে পারছে। এছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষাগ্রহণ, মূল্যায়ন, সার্টিফিকেট প্রদান সমস্ত প্রক্রিয়াই ভার্চুয়াল মাধ্যমে অবলীলায় সম্পন্ন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল আমাদের আরও উন্নত থেকে উন্নততর করবে বলে আশা করা যায়।

Communication: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহারের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা আজ আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। বর্তমানে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই স্মার্টফোন ব্যবহার করি তাই পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মানুষের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ সাধন করতে পারি। এছাড়া টেলিভিশন, ফ্যাক্স, টেলিফোন, টেলিপ্রিন্টার, কম্পিউটার, ইমেইল প্রভৃতির মাধ্যমে নিমেষেই বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। আবার টেলিকনফারেন্সিং ও ভিডিও কনফারেন্সিং এর সাহায্যে অডিও ও ভিডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নিবিড় যোগসূত্র স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে ফলে মানুষের সময়ের যেমন সাশ্রয় হয় তেমনি যাতায়াত খরচও অনেকটা লাঘব হয়। 


Health Care: চিকিৎসাশাস্ত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদ্যার উল্লেখযোগ্য প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সংক্রান্ত অধ্যায়ন, গবেষণা ও শল্যচিকিৎসার দ্বারা রোগ নিরাময়ের পদ্ধতিতে ICT -র সাহায্য নেওয়া হয় এবং আলট্রাসোনোগ্রাফি, সাইকোথেরাপি, সার্জারি, টোমোগ্রাফি ও অস্ত্রোপাচারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করা হয়। আবার টেলিভিশনের মাধ্যমে অনলাইনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরিষেবা প্রদান করা হয়। তথ্যের সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে ICT বিশেষ সাহায্য করে। এর মাধ্যমে সংরক্ষিত তথ্য রোগীর কাছে বা পরামর্শের জন্য চিকিৎসকের কাছে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন মেডিকেল রিপোর্ট যেকোন স্থানে যেকোন সময় ব্যবহার করা যায়।

              তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সর্বদা সচেষ্ট। স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে আরও পরিবর্তন আনতে এবং স্বাস্থ্যসেবাকে উচ্চ স্তরে উন্নীত করতে ICT কে আরও বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করতে হবে যা দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

Business: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন এনেছে। যেকোনো ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হল কম সময়ে এবং কম খরচে অধিক পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করা।আজকাল ব্যবসার সাথে যুক্ত ব্যাংক,বীমা, ক্রেডিট কোম্পানি, বিমান, পরিবহন সমস্তটাই প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় স্বল্প সময়ে ও শ্রমে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল ও টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে যেমন দ্রুত বাণিজ্যিক যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে তেমনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটের দ্বারা পণ্য আদান-প্রদানের খবর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। আবার ব্যবসায়ীদের হিসাব খরচের বিভিন্ন তথ্য এর মাধ্যমে সংরক্ষণ করার সুবিধা রয়েছে। 

Banking impact: তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যাংকিং পরিষেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আমাদের টাকা-পয়সা লেনদেন করতে অনেক সময় ব্যয় করে বা কষ্ট করে লাইনে দাঁড়াতে হয় না, ঘরে বসেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা বিভিন্ন অনলাইন পে অ্যাপ এর মাধ্যমে ট্রানজেকশন করতে পারি। এছাড়া জমাখরচের সম্পূর্ণ তথ্য নিমেষের মধ্যে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। 

Agriculture: কৃষিক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগে ব্যাপক উন্নতি পরিলক্ষ্যিত হয়। আমাদের দেশ যেহেতু কৃষিপ্রধান দেশ তাই কৃষিকর্মের উন্নতিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে বিভিন্ন উপায়ে কাজে লাগানো হচ্ছে। মাটির উর্বরতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ও চারা উৎপাদন, অত্যাধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার, কীটনাশক, রাসায়নিক সারের প্রয়োগ ইত্যাদি তথ্যগুলি বায়োটেকনোলজি এবং বায়োইনফরমেটিক্স এর সুবাদে আমাদের হাতের নাগালে। কৃষকদের সুবিধার্থে এখন অনলাইন কৃষি বাজারের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে শুধু তাই নয় চাষবাস সংক্রান্ত প্রতিদিনের আবহাওয়ার তথ্য ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন যেমন- Plantix, kisankraft, Bharat agri এগুলির মাধ্যমে পাওয়া যায়। 

Research: গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাহিত্য, শিল্প, সমাজ বিজ্ঞান, গণিত, বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি গবেষণার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার দৃষ্টিগোচর হয়। গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, তথ্য সঞ্চয় থেকে শুরু করে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ এবং বিশ্লেষণ করতে প্রযুক্তির সাহায্য গ্রহণ করতে হয়। এছাড়া গবেষণার নিমিত্ত বিভিন্ন প্রয়োগশালায় (Laboratory) উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়। 

Career opportunities: অধুনা তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যবহার ব্যক্তিজীবনে অকল্পনীয় চাহিদা পূরণ করেছে। একজন ব্যক্তির ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের পথনির্দেশক হিসেবেও ICT অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, প্রশিক্ষণ, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেয়ে থাকি।

E-Governance: বর্তমানে অফিস ব্যবস্থাপনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার দৈনন্দিন কাজকে অনেক সহজ সরল ও সাবলীল করে তুলেছে। এক্ষেত্রে অনেক উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ই-গভর্নেন্স। রাষ্ট্রীয় পরিচালনাধীন অফিস ও স্বায়ত্তশাসিত অফিসসমূহ ই-গভর্নেন্স এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর উদ্দেশ্য নাগরিকদের উন্নত পরিষেবা প্রদান করা, কর্মে স্বচ্ছতা ও সমৃদ্ধ তথ্যের মাধ্যমে জিজ্ঞাসু ব্যক্তির কৌতুহল নিবৃত্ত করা। 



Social media: প্রযুক্তির সৌজন্যে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার আজকের বিশ্বের মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। আজকাল মানুষ দিনের অধিকাংশ সময় সামাজিক মাধ্যমেই ব্যয় করে। 2022 সালের জুলাই মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতবর্ষের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমগুলির মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় 534.30 লক্ষ, ইনস্টাগ্রাম 503.37 লক্ষ, ফেসবুক 491.53 লক্ষ, টেলিগ্রাম 374.40 এবং ফেসবুক মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় 324.39 লক্ষ। এগুলি ব্যবহারের মাধ্যমে চেনা-অচেনা, দেশ বিদেশের অনেক পরিচিত-অপরিচিত মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই যোগাযোগ সাধন করা যায়। 


0 Comments: