মস্তিষ্কঝঞ্ঝা (Brainstorming)
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

মস্তিষ্কঝঞ্ঝা (Brainstorming)

মস্তিষ্কঝঞ্ঝা (Brainstorming)

এই পাঠে যেগুলি পাবেন-

  • মস্তিষ্কঝঞ্ঝার ধারণা
  • মস্তিষ্কঝঞ্ঝার বৈশিষ্ট্যসমূহ
  • মস্তিষ্কঝঞ্ঝা পদ্ধতির নীতি
  • মস্তিষ্কঝঞ্ঝা পদ্ধতির পর্যায়
  • মস্তিষ্কঝঞ্ঝা পদ্ধতির শ্রেণীবিভাগ
  • মস্তিষ্কঝঞ্ঝা পদ্ধতির সুবিধা
  • মস্তিষ্কঝঞ্ঝা পদ্ধতির অসুবিধা

 Brainstorming (মস্তিষ্কঝঞ্ঝা)

     যেকোনো ধরনের সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে হলে সেই সমস্যা কিংবা সমাধানের উপায় কি কি হতে পারে সে সম্পর্কে গভীর ভাবনা চিন্তা করতে হয়। দলগতভাবে ভাবনা চিন্তা বা সকলে মিলে আইডিয়া বের করলে অনেক সহজেই যেকোন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা যায়। দলগতভাবে কিংবা ব্যক্তিগতভাবে কোন কাজ বা সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে উন্মুক্তভাবে চিন্তা প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্লেষণধর্মী পদ্ধতিতে সৃজনশীল ধারণা বা মতামত বিনিময়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা খুঁজে বের করার পদ্ধতিকে ব্রেইনস্টর্মিং বা মস্তিষ্কঝঞ্ঝা বলা হয়। মেরিয়াম ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী- "A problem solving technique that involves the spontaneous contribution of ideas from all members of the group". 

     কমার্শিয়াল কিংবা কর্পোরেট সংস্থায় কাজের ক্ষেত্রে কোন সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে ব্রেইনস্টর্মিং বহুল প্রচলিত এবং ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। Alex F. Osborn এই পদ্ধতির জনক হিসেবে পরিচিত। যিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞাপন প্রচারের কার্যনির্বাহী সম্পাদক (Advertising executive)। তিনি তার দলের সদস্যদের কাছ থেকে সৃজনশীল মতামতের উন্নয়ন ঘটাতে একটি 'গ্রুপ থিঙ্কিং' আলোচনা বিভাগ শুরু করেন এবং তিনি বিভিন্ন ধরনের মতামতের পরিমাণ ও মানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। এই আলোচনা বিভাগটির নাম দেওয়া হয় 'Organised ideation'। পরবর্তীতে 1938 সালে এটির পরিবর্তিত নাম দেন 'Brainstorm session'। এরপর 1942 সালে তিনি 'How to think up' নামে একটি বই প্রকাশ করেন এবং সেখানে ব্রেইনস্টর্মিং শব্দটি ব্যবহার করেন পরবর্তীকালে 1963 সালে তাঁর লেখা 'Applied imagination' এর মাধ্যমে শিক্ষণ কৌশল হিসেবে Brainstorming শব্দটি শিক্ষাক্ষেত্রে পরিচিতি লাভ করে।

     শ্রেণীশিক্ষায় পাঠদানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল মস্তিষ্কঝঞ্ঝা বা ব্রেইনস্টর্মিং। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের 10 থেকে 15 জন সদস্যের কয়েকটি ছোট ছোট দলে ভাগ করে তাদের সামনে কোন নির্দিষ্ট সমস্যা উপস্থাপন করা হয়। এরপর তাদেরকে এই সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে বলা হয় এবং 40 থেকে 45 মিনিট সময় দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদানের সুযোগ পায়। পারস্পরিক গভীর চিন্তার মাধ্যমে জটিল সমস্যা সমাধানের এটি একটি উৎকৃষ্ট কার্যকর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিমত্তার বিনিময় ঘটে। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে এবং মুক্ত চিন্তার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করে। এখানে পারস্পরিক মতামত এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ে একটি প্রাণবন্ত আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়। যার ফলে সমস্যাটির সুষ্ঠু সমাধানে আসা সম্ভব হয়।

Brainstorming পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ-

  • এই পদ্ধতি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে।
  • এটি বিভিন্ন রকম সৃজনশীল ধারণা উৎপন্ন করে।
  • এই পদ্ধতি স্বতন্ত্র পার্থক্য গ্রহণ ও তার প্রতি সম্মান করতে শেখায়।
  • প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং তাদের মতামতকে সম্মানিত ও মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা।
  • বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিতে সমস্যা সমাধানের জন্য এটি একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
  • সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মতামত বিনিময় করতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা।
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলগত দক্ষতা এবং জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো।
  • শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সত্তার প্রতি অনুভূতি প্রদান।
Brainstorming পদ্ধতির নীতি-
     ব্রেইনস্টর্মিং পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের কিছু নীতি অনুসরণ করে চলতে হয় যেমন-
  1. এই পদ্ধতিতে প্রত্যেক সদস্যের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করা হয়।
  2. একজন শিক্ষার্থী দলের অন্য কোনো সদস্যকে ব্যঙ্গ/কটাক্ষ করতে পারবে না বা অন্যদের প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করতে পারবে না, এটা নিশ্চিত করতে হয়।
  3. কোন একটি ধারনার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ধারণা গঠন করা যেতে পারে।
  4. কোন উত্তরই ভুল নয় সেটা সুনিশ্চিত করা হয়। 
  5. এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণযোগ্য।
  6. এই পদ্ধতি চলাকালীন প্রয়োজনে মধ্যে মধ্যে বিরতি নেওয়া যেতে পারে।
Brainstorming এর পর্যায়-



Brainstorming এর শ্রেণীবিভাগ:-

Brainwriting:- এক্ষেত্রে দলের প্রতিটি সদস্যকে তাদের ধারণাগুলিকে নোট করতে বলা হয়। এটি অন্তর্মুখী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী। 
Team idea mapping method/simply mind mapping:- এই পদ্ধতিতে সমস্ত ধারণাগুলি সংগ্রহ করে একটি মানসিক মানচিত্র তৈরি করা হয় এবং সমস্যা সমাধানের একটি সাধারণ ধারণা প্রস্তুত করা হয়। 
Group passing technique:- এই পদ্ধতিতে দলের সদস্যরা পাশাপাশি বসবে এবং প্রত্যেকে একটি করে সুনিশ্চিত মতামত প্রদান করে পাশের জনকে বলার সুযোগ দেবে। 
Nominal group technique:- এক্ষেত্রে প্রত্যেক সদস্যকে তাদের ধারণা লিখতে বলা হয় এবং সেগুলি সংগ্রহের পর ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপ থেকে ভোট চাওয়া হয় তারপর অধিক প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে সমস্যার সমাধান করা হয়। 
Rolestorming:- এখানে রোল মডেল হিসেবে কোন একজন নির্দিষ্ট সদস্যের বক্তব্য বা মতামতকে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। 
Round robin Brainstorming:- এই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি সদস্য বৃত্তাকারে বসবে এবং যিনি পরিচালনা করবেন তিনি বৃত্তের মধ্যে অবস্থান করবেন এইভাবে প্রতিটি সদস্য একের পর এক নিজের ধারণা বা মতামত প্রদান করবে।

Brainstorming পদ্ধতির সুবিধা-
  1. সমগ্র শ্রেণীতে একই সময়ে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
  2. জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব।
  3. সকল শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।
  4. অল্প সময়ে অধিক ফল পাওয়া যায়।
  5. পারস্পারিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাওয়া যায়।
  6. শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পারস্পরিক আলোচনা স্পষ্ট হয় ফলে শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে অধিক প্রাণবন্ত থাকে।
  7. শিক্ষার্থীর গণতান্ত্রিক ও সৃষ্টিশীল চিন্তা সর্বদা উজ্জীবিত থাকে। 
Brainstorming পদ্ধতির অসুবিধা-
  1. আলোচনা বিষয় বহির্ভূত হলে সময় ও শ্রমের অপচয় ঘটতে পারে।
  2. কখনও কখনও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আলোচনা শেষ করা সম্ভব হয় না।
  3. বিষয়বস্তু সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায় না।
  4. অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা অধিক হলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে।
  5. অন্তর্মুখী, লাজুক ছাত্র-ছাত্রীর কাছে এই পদ্ধতি সুবিধাজনক নয়।
  6. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আগ্রহ, মনোযোগ ও ইচ্ছা সমান না হওয়ায় এই পদ্ধতি খুব একটা কার্যকারিতা লাভ করতে পারে না। 


0 Comments: