.jpeg)
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence)
বর্তমান যুগে প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে মানুষের জায়গায় যন্ত্র ততই আধিপত্য বিস্তার করছে। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে যে কোন জটিল কাজ যন্ত্র খুব সহজেই করে দিতে পারে। অবাক হওয়ার বিষয় হল মানুষের মত যন্ত্রের নিজস্ব ভাবনার ক্ষমতাও তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে কৃত্রিমভাবে। সহজ ভাষায় যেটাকে আমরা রোবট বলে চিনি, আসলে কম্পিউটার সায়েন্সের ভাষায় সেটাই হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)। অধুনা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জগতে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বহুচর্চিত একটি বিষয়। মানুষ নিজস্ব বুদ্ধির আলোকে যেমন যে কোনও কাজ বা সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে একইভাবে এই বিশেষ প্রযুক্তির সহায়তায় তা একটি কৃত্রিম যন্ত্র করে দিতে পারে। অর্থাৎ মানুষ যেভাবে চিন্তাভাবনা করে, কৃত্রিম উপায়ে কম্পিউটারে সেভাবে চিন্তা ভাবনার রূপদান করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা (Artificial Intelligence) বলা হয়। প্রযুক্তির উন্নতিতে যন্ত্র যে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এতে বিস্ময়ের কিছু নেই, কিন্তু একটা যন্ত্র কিভাবে ধীরে ধীরে মানুষের মতো সমস্ত কাজ করে দিতে পারে সেটা আমাদের কাছে কল্পনাতীত।
বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশই স্মার্টফোনে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে চলেছে। এখন ইন্টারনেটের যুগে আমরা যে ইউটিউব সার্চ করি, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করি সবক্ষেত্রেই একটা রেকমেন্ডেশন পদ্ধতি আছে। যার দ্বারা ইচ্ছানুযায়ী বিষয় আমাদের চোখের সামনে চলে আসে। একই রকমের কিছু বিষয় সার্চ করার পরে আমরা অনেকেই লক্ষ্য করে দেখেছি ওই একই রকমের উপলব্ধ সমস্ত ধরনের বিষয় না চাইতে আমাদের সামনে চলে আসে। এই রেকমেন্ডেশন পদ্ধতির পিছনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর অবদান রয়েছে। আবার অনেক সময় সেটি আমাদের গলার স্বর শুনে সেগুলিকে লেখায় রূপান্তরিত করে সার্চ ইঞ্জিনকে নির্দেশ দেয়। সম্প্রতি 'অ্যালেক্সা' নামের একটি বিশেষ প্রযুক্তিসম্পন্ন ইন্টেলিজেন্সের বাজারে প্রচলন ঘটেছে যাকে মুখে কিছু নির্দেশ দিলে সে সেই মতো ঘরে আলো জ্বালানো থেকে শুরু করে এসি বন্ধ করা, ফোনে গান চালু করা সবই করতে পারে। আবার স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, ড্রোন চালনা, COVID-19 টিকা আবিষ্কার, শেয়ার বাজারে কেনাবেচা, এছাড়া এখন পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কিছু লার্নিং ও মেমোরি টাস্ক সম্পন্ন করা হচ্ছে যেখানে যন্ত্র মানুষের থেকেও ভালো কাজ করছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই। ১৯৪৭ সালে অ্যালান ট্যুরিং নামে একজন ব্রিটিশ গণিতবিদ প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে একটি বক্তব্যে যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা থাকার সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন এবং সেই বিষয়ে ১৯৫০ সালে 'কম্পিউটিং মেশিনারি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স' নামক বইটি প্রকাশ করেন। এবিষয়ে তিনি 'ট্যুরিং টেস্ট' -এর কথা বলেন যা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্ট্যানলি ম্যাকার্থি প্রথম 'আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স' শব্দটি ব্যবহার করেন।
বিজ্ঞানীরা এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন-
- Artificial Narrow Intelligence ( ANI)
- Artificial General Intelligence (AGI)
- Artificial Super Intelligence. (ASI)
আমরা এখন রয়েছি প্রথম ধাপ অর্থাৎ ANI ধাপে। ANI সিস্টেম ১৯৯৭ সালে মানুষকে হারিয়ে তার দাপট শুরু করে। ‘ডীপ ব্লু’ নামের একটি কম্পিউটার বিশ্বখ্যাত দাবারু গ্রান্ডমাস্টার চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে হারিয়ে দেয়। তার পরের বছরেই আলফা গো মানুষকে হারায় ANI ব্যাবহার করে। আলফা গো নামক কম্পিউটার প্রোগ্রামটি তৈরি করে গুগলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডীপমাইন্ড। ২০৪০ থেকে ২০৬০ সালকে দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ AGI বলে বিজ্ঞানীরা বেছে নিয়েছে। এটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দ্বিতীয় ধাপ। একে Strong AI বা Human Level AI- ও বলা হয়। AGI ধাপে যন্ত্র মানুষের মত চিন্তা করতে পারবে, পরিকল্পনাকরতে পারবে, সমস্যা সমাধান করতে পারবে, হঠাৎ নতুন ভিন্ন কোন পরিবেশে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার মত সক্ষমতা অর্জন করবে। ১৯৬০ সালের পরবর্তী কুড়ি বছরকে ASI ধাপে ভাগ করা হয়েছে। ASI হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের তৃতীয় ও সর্বাধুনিক পর্যায়। যন্ত্র যখন মানুষের থেকেও দক্ষ ভাবে চিন্তা করতে পারবে তখনই যন্ত্র আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যাবে। অবশ্য এই পর্যায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিজ্ঞানীরা একই সাথে চিন্তিত ও শঙ্কিত।
আজকের তথ্যপ্রযুক্তির জামানায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধি) সম্পন্ন হেল্পার বা স্মার্ট সহায়ক। শারীরিক অস্তিত্বহীন এই অ্যাসিস্ট্যান্ট শুধু গ্রাহকের কমান্ড মেনে কাজই করে না, আগে থেকে বলে রাখা হুইপ যথাসময়ে সঠিকভাবে করে রাখে। আবার সেই কাজ সুসম্পন্ন হয়ে গেলে অতীতে করে আসা কাজ সম্পর্কিত কিছু করতে হবে কিনা তাও প্রভুকে জিজ্ঞাসা করে নেয়। অর্থাৎ, এটি একেবারেই গ্রাহকের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ। আর এসবই করে তার নিজের বুদ্ধি বা মেধা খাটিয়ে। নিউরোন বা স্নায়ু দ্বারা গঠিত কোনো রক্তমাংসের ব্রেন নয়, প্রযুক্তি বা মাইক্রো চিপ দিয়ে তৈরি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (AI) সাহায্যে। আলেক্সা,সিরি,টেসলা,নেটফ্লিক্স,অ্যামাজন,কোজিটো,স্প্যাম ফিল্টার,গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রভৃতি হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এদের মধ্যে আলেক্সা, সিরি ও টেসলা গুগল, অ্যামাজন ও অ্যাপলের তৈরি অ্যাসিস্ট্যান্টের। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে বিজ্ঞানী, টেকনোক্র্যাটদের উন্নতর গবেষণা এবং সাফল্য সেই প্রযুক্তিকে আমাদের বর্তমান জীবনের সঙ্গে এক সারিতে জুড়ে দিয়েছে। বিশেষ করে আজকের ইন্টারনেট-মোবাইলের যুগে। ইন্টারনেট প্রজন্মের (3G, 4G, 5G) উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সেই (AI) নির্ভর প্রযুক্তির ব্যবহার ও কার্যকারিতা বেড়ে চলেছে। সে ইন্টারনেট সার্চ থেকে মোবাইলে অ্যালার্ম দেওয়াই হোক, বা টেক্সট ট্রান্সলেট (এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় অনুবাদ) থেকে সংবাদ পরিবেশন এবং সর্বোপরি রাস্তার সিগন্যালে ট্র্যাফিক পরিষেবা বা সীমান্তে পাহারা।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মূলত মেশিন লার্নিং -এর মাধ্যমে কাজ করে থাকে। মেশিন লার্নিং একপ্রকার বিশেষ প্রোগ্রামিং, যার মধ্যে রয়েছে Python, Java, LISP, PROLOG, C/C++, MATLAB, SHRDLU, ইত্যাদি। কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং ভাষা বিভিন্ন সাইটে বা মোবাইল অ্যাপে কাস্টমারদের সাথে কথা বলা ও যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য একটা 'চ্যাটবট' ব্যবহার করা হয় যার মাধ্যমে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এর জন্য মূলত শিখন (Learning), যুক্তি উপস্থাপন (Reasoning), সমস্যা সমাধান (Problem solving), উপলব্ধি (Perception), ভাষা ব্যবহার (Using language) এর মাধ্যমে অ্যালগরিদম প্রয়োগ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোন নির্দিষ্ট কাজ করে থাকে। আবার আমরা অনেকেই দেখেছি যে বিশেষ ধরনের ই-মেইল সরাসরি ইনবক্সে জমা হওয়ার পরিবর্তে আমাদের মেইলবক্সের স্প্যামে জমা হয়। এগুলি আসলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এরই কাজ।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষেত্র-
স্মার্ট গাড়ি ও ড্রোন : স্বয়ংক্রিয় তথা চালকহীন গাড়ির স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ দিয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। সেক্ষেত্রে নজির তৈরি করেছে মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা টেসলা। AI নির্ভর এই গাড়ি বুঝতে পারে কী করে, কখন ব্রেক মারতে হয়, কীভাবে বদলাতে হয় রাস্তার লেন এবং কীভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে হয়। এছাড়া নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এই গাড়ি ঘুরতে এবং ম্যাপ ব্যবহারও করতে পারে। বর্তমানে আমেরিকাতে ৫০ হাজারেরও বেশি টেসলার এই গাড়ি চলছে। আবার অ্যামাজন ও ওয়ালমার্টের মতো বহুজাতিক সংস্থা তাদের পণ্য গ্রাহকের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেয়ার কাজে ড্রোন ব্যবহার করছে। একইভাবে মাল পরিবহণের জন্য ব্রিটেনে স্বয়ংক্রিয় ট্রাক পরিষেবার কাজ শুরু করেছে ব্রিটেনের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি)।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট : আমরা ফেসবুক, ট্যুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা শেয়ার চ্যাটের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলেও বুঝতে পারি না কীভাবে একের পর এক আপডেট আমাদের কাছে আসছে। তা সে পরিচিত ব্যক্তিকে খোঁজাই হোক বা ফ্রেন্ডস সাজেশান। একটা কিছু লাইক, শেয়ার করলেই সেই সম্পর্কিত আরেকটা জিনিষ নিমেষেই হাজির হয়ে যায়। সবকিছুই গ্রাহকের অচিরে হচ্ছে কৃত্রিম মেধার দৌলতে। আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা, মেলামেশা ইত্যাদি বুঝে ‘কাস্টমাইজড’ (ব্যক্তি বিশেষের জন্য নির্দিষ্ট) আপডেট পাঠাতে থাকে এই প্রযুক্তি।
মিউজিক ও মিডিয়া : কেউ যখন স্পটিফাই, নেটফ্লিক্স বা ইউটিউব ব্যবহার করে তখন গ্রাহকের জন্য পুরো সিদ্ধান্তই নেয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। একজন যদি মনে করে সে বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করছে বা তার নিয়ন্ত্রণে পুরো মিডিয়া চলছে, তা একেবারে ভুল। কারণ, একটি গান শুনতে শুনতে বা একজন শিল্পীকে খোঁজার সময় ‘রিলেটেড’ বা ‘সাজেস্টেড’ গান বা শিল্পী অটোমেটিক চলে আসে। একইভাবে আজকের জনপ্রিয় পাবজি, সিএস গো বা ফোর্টনাইট-এর মতো উন্নত ভিডিও গেমে AI-এর ব্যবহার সফল।
অনলাইন বিজ্ঞাপন : এই প্রযুক্তির একটা বড় গ্রাহক হল অনলাইন বিজ্ঞাপন সেক্টর। এ ক্ষেত্রে AI শুধুমাত্র ইন্টারনেট সার্চকারী ব্যক্তিদের উপর নজর রেখে তথ্য তল্লাশি করে তাই নয়, গ্রাহকদের পছন্দ-অপছন্দ বিচার করে সেইমতো তাদের সামনে বিজ্ঞাপন হাজির করে। ফলে বিশ্বব্যাপী অনলাইন বিজ্ঞাপনের ব্যবসা ২৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
নেভিগেশন এবং ট্রাভেল : ম্যাপের পুরোটাই এই প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত। যখন গুগল, অ্যাপেল বা অন্য সংস্থার ম্যাপ ব্যবহার করে আমরা ক্যাব বুকিং করি, তখন AI বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রাস্তার সেই সময়ের যানজট বা ভাড়া সম্পর্কে আমাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করে।
ব্যাঙ্ক পরিষেবা : বর্তমানে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার একটা বড় অংশ কৃত্রিম মেধা। কোনো একটা লেনদেন করলে আমরা তৎক্ষণাৎ যে এসএমএস বা ইমেল অ্যালার্ট পাই, তা চালনা করে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি। এইভাবে প্রতিটি গ্রাহকের লেনদেন, লগ্নি, প্রতারণা রোধে এটি নীরবে কাজ করে চলেছে।
স্মার্ট হোম ডিভাইস : নিত্যদিনের ব্যবহার্য স্মার্ট হোম ডিভাইস বা যন্ত্রগুলোতে ব্যাপকভবে এর ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের ব্যবহার, পছন্দ-অপছন্দ বুঝে সেই প্রযুক্তি নিজেই সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের সেটিংস পরিবর্তন করছে এবং গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আগেই গুগলের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, স্মার্ট টিভি, স্মার্ট রেফ্রিজেরাটর, স্মার্ট এসি, স্মার্ট মাইক্রোওয়েভের কথা উল্লেখ করা যায়।
নিরাপত্তা ও নজরদারি : এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি কৃত্রিম মেধা ব্যবহার হচ্ছে নিরাপত্তা ও নজরদারির ক্ষেত্রে। ড্রোন তো ছেড়েই দেওয়া যাক। নজরদারির কাজে বিভিন্ন পয়েন্টে লাগানো হাজার হাজার ক্যামেরা থেকে লক্ষ লক্ষ তথ্য একটা নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্লেষণ করা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছাড়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। AI নির্ভর অবজেক্ট রিকগনিশন বা ফেস রিকগনিশনের মতো প্রযুক্তি প্রতিদিন উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে।
বিজনেস ম্যানেজমেন্ট : আজকের জনপ্রিয় অনলাইনে কেনাকাটা বা ই-কমার্সে এই প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। যার জেরে গ্রাহক ঠিক কী চইছে সেই পণ্য দ্রুত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। একঝাঁক পণ্য বা পরিষেবার মধ্যে থেকে বেছে বেছে গ্রাহকের সামনে তুলে ধরা। আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা, মেলামেশা ইত্যাদি বুঝে ‘কাস্টমাইজড’ (ব্যক্তি বিশেষের জন্য নির্দিষ্ট) আপডেট পাঠাতে থাকে এআই প্রযুক্তি।
ডিজিটাল সহায়তা : এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, অনেক সংস্থা তাদের গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগের উপায়কে বাস্তবায়ন করেছে। এগুলি ছাড়াও অনেক সংস্থা ও ব্যাংকে অটোমেটিক মেশিন, অটো জবাবদিহি করার বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছে যাতে কোন ব্যক্তি নিজের সমস্যা সম্পর্কিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন। এখানে জিজ্ঞাসা সম্পর্কিত উত্তরটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অটোমেশনের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে।
ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স -এর অগ্রগতি যোগাযোগ, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামরিক ক্ষেত্র প্রভৃতি সকল ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক জীবনে রূপান্তরিত করবে। একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে আগামী ৪৫ বছরের মধ্যে মানুষের অর্ধেক কাজ স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাবে এবং আগামী ১২০ বছরের মধ্যে মানুষের সকল কাজ স্বয়ংক্রিয় হবে অর্থাৎ সম্পূর্ণটাই কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন রোবট, মেশিন অথবা কম্পিউটার দ্বারা সম্পন্ন হবে। এছাড়া পুঁজিবাদও ধ্বংস হবে। যার আশঙ্কা এখন থেকেই আমাদের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে। পরিসংখ্যানে উঠে আসছে যে ভবিষ্যতে চাকরির বাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত হবে রোবটের দ্বারা। হতে পারে এটা আমাদের মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আবার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স -এর মাধ্যমে চালিত অটোমেটিক তথা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র কিলার রোবট মানবজাতির কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এবিষয়ে স্টিফেন হকিং, এলন মাস্ক, বিল গেটস এর মত বড় বড় বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স -এর ব্যাপারে ব্রিটেনের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছিলেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর পূর্ণাঙ্গ সফলতা মানবজাতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হতে পারে আমাদের জন্য অনেক বড় সম্ভাবনা, আবার হতে পারে আমাদের মানবজাতির ধ্বংসের প্রধান কারণ। তবে ভালো কিংবা খারাপ দুটোই সম্পূর্ণ নির্ভর করবে মানুষের উপর। তাই এখনই যদি আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স -এর ব্যাপারে সতর্ক না হই তবে ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স -এর ক্ষমতা কোন সন্ত্রাসী কিংবা খারাপ মানুষের হাতে পরে গোটা পৃথিবীটা ধ্বংসের মুখে এগিয়ে যাবে।
ন্যানো টেকনোলজি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুন