ন্যানো টেকনোলজি (Nano Technology)
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

 


    পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ন্যানো প্রযুক্তি বা ন্যানো টেকনোলজি বলা হয়। (Nano Technology is the science of manipulating materials on an atomic or molecular scale is especially to build microscopic devices)। 


ন্যানো কি?

    ন্যানো (Nano) শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ nanos থেকে। যার আভিধানিক অর্থ dwarft অর্থাৎ জাদু বিদ্যায় পারদর্শী ক্ষুদ্রাকৃতি মানব। ন্যানো হল একটি পরিমাপের একক। সাধারণত কোন বস্তুর সবচেয়ে সূক্ষ্ম কণাটির ১০০ ন্যানোমিটারের থেকে ছোট কাঠামো নিয়ে এটি কাজ করে। ন্যানোমিটার হলো মেট্রিক পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একটি একক যা এক মিটার এর ১০০ কোটির একভাগের সমান অথবা ১ মিলিমিটারের ১ মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সংবাদপত্রের একটি পাতা প্রায় এক লাখ ন্যানোমিটার পুরু। এটি ন্যানো প্রযুক্তিকে আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের একক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। 

    ন্যানো টেকনোলজি প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়। একটি হলো 'টপ-ডাউন' (Top to Bottom) ও অপরটি হল 'বটম-আপ' (Bottom to Top)। 'টপ-ডাউন' পদ্ধতিতে কোন জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়। আর 'বটম-আপ' পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের ছোট জিনিস দিয়ে বড় কোন জিনিস তৈরি করা হয়। আমাদের বর্তমান ইলেকট্রনিক্স হল 'টপ-ডাউন' প্রযুক্তি আর ন্যানো টেকনোলজি হল 'বটম-আপ' প্রযুক্তি।


ন্যানো টেকনোলজির ইতিহাস: 

    ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জানুয়ারি রিচার্ড ফাইনম্যান ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি তে অনুষ্ঠিত আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির এক সভায় 'There's Plenty of Room at the Bottom' শীর্ষক এক বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতাটিতেই তিনি সর্বপ্রথম ন্যানো প্রযুক্তির ধারণা দেন। তাই রিচার্ড ফাইনম্যান কে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়ে থাকে। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ই নভেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার IBM এর Almaden Research Centre-এ Don Eiglen এবং Schweitzer ৩৫ টি Xenon অণু দিয়ে IBM এর লোগোটি তৈরি করেছিলেন। সেই দিনই প্রথম অনুকে ইচ্ছে মত সাজিয়ে পছন্দমত কিছু তৈরি করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল ঐদিনই প্রথম মানুষ প্রকৃতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি কাঠামো কে ভাঙতে সক্ষম হয়েছিল অনুর গঠন কে ইচ্ছে মত তৈরী করে অনেক কিছু করা সম্ভব এর ফলে এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার মানুষের সামনে সেদিন উন্মোচিত হয়েছিল। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে Cornell বিশ্ববিদ্যালয়ের Wilson Ho এবং তার ছাত্র Hyojune Lee অনুকে জোড়া লাগানোর প্রক্রিয়া প্রদর্শন করেন এতদিন পর্যন্ত অনু-পরমানু সংযোগ শুধুমাত্র রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সংগঠিত হতো কিন্তু এই ন্যানো টেকনোলজি আবিষ্কারের পর এর দ্বারা অনু-পরমানু কে ভাঙ্গা কিংবা জোড়া লাগানো সম্ভবপর হয়েছিল। 


ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহারিক ক্ষেত্র:


ন্যানো রোবট তৈরিতে- বর্তমানে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে অতি ক্ষুদ্র রোবট তৈরির গবেষণাও চলছে যার সাহায্যে মানব দেহের অভ্যন্তরে অস্ত্রোপচার সম্ভব হবে। 

কম্পিউটার হার্ডওয়ারে- কম্পিউটারের ভিতরে যে প্রসেসর রয়েছে তা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানো মিটার স্কেলের সার্কিট। যেটিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়। ইন্টেল প্রসেসরের উপরে সার্কিট বানানো হয় যার বর্তমান সাইজ ১০০ মিটার। ভবিষ্যতে এর আকার ৫০ ন্যানোমিটারে দাঁড়াবে। এছাড়া কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা দিন দিন বেড়ে চলেছে ন্যানোটেকনোলজির প্রয়োগের কারণে।

জ্বালানির উৎস হিসেবে- সুলভে জ্বালানি তৈরিতে এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যাটারির জন্য ফুয়েল সেল তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। 

ঔষধ তৈরিতে- ঔষধ শিল্পে বর্তমানে স্মার্ট ড্রাগ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি- এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরি করা হচ্ছে যেগুলো আকারে ছোট ওজনে হালকা এবং বিদ্যুত সাশ্রয়ী হচ্ছে।

প্যাকেজিং ও প্রলেপ- বিভিন্ন খাদ্য জাতীয় পণ্যের প্যাকেজিং ও প্রলেপ তৈরি করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। 

বস্ত্রশিল্পে- বস্ত্রশিল্পে কাপড়ের ওজন ও ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। 

মহাকাশ অভিযানে- বিভিন্ন ধরনের আকাশযান কে হালকা করে তৈরি করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। 

সানস্ক্রিনের সুরক্ষায়- সানস্ক্রিনে ব্যবহৃত টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। 

কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরিতে- সার্জারির মাধ্যমে বিভিন্ন কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

খেলাধুলার সরঞ্জামে- টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি বাতাসে গল্প বলের দিক নির্দেশ, Racket এর শক্তি ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। 

পরিশুদ্ধ বাতাস পেতে- বিভিন্ন শিল্প ও কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকারক ধোঁয়া ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সুখকর গ্যাসে রূপান্তরিত করে বাতাসকে পরিশোধন করা যায়। 


ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা:-

  1. ভিডিও গেম কনসোল ও পার্সোনাল কম্পিউটারের মেমোরি স্পিড দক্ষতা ইত্যাদি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়ার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
  2. এই টেকনোলজিকে অধিক সাশ্রয়ীমূল্যের ন্যানোটেক সৌর কোষ তৈরিতে ও বিভিন্ন রকম ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 
  3. ওষুধ তৈরির আণবিক গঠনে এটি সাহায্য করে। 
  4. বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়। 
  5. হাইড্রোজেন আয়নের জন্য ফুয়েল সেল তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়। 
  6. ন্যানোটিউব, ন্যানো পার্টিকেল ইত্যাদি দ্বারা তৈরি পণ্য অধিক মজবুত ও টেকসই এছাড়া আকারে তুলনামূলক ছোট এবং ওজনে হালকা হয়। 

ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারের অসুবিধা:-

  1. ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক সার্কিট কল্পনাতীত ছোট হয়ে যায় বলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে একে রক্ষা করা সম্ভবপর হয় না।
  2. এই প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎপাদিত পণ্য ব্যয়বহুল। 
  3. ন্যানো পার্টিকেল মানুষের শরীরে ক্ষতি সাধন করে। 

0 Comments: