
EPC-1: পঠন প্রণালীর পাঠ্যপুস্তকে প্রতিফলন, সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (Reading and Reflecting on Texts, short question and answer)
1) আদর্শ পাঠের বৈশিষ্ট্য লিখুন।
উত্তর- যে পাঠ পড়ে শিক্ষার্থীরা স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে বা অন্যের সাহায্য ব্যাতিরেকে কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং নিজস্ব জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারে তাকে আদর্শ পাঠ বলে।
আদর্শ পাঠের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
ক) নির্ভুলতা- নির্দিষ্ট পাঠটি নির্ভুলভাবে পড়তে পারা।
খ) গতি- নির্দিষ্ট গতি বজায় রাখার মাধ্যমে শিক্ষার মান অনুযায়ী বিষয়টি পাঠ করতে পারা।
গ) উপলব্ধি- ভাষা প্রয়োগ, শব্দচয়ন, ছন্দ, উপমা ও অলংকার ইত্যাদি বোঝার মাধ্যমে কোন বিষয়ের অন্তর্নিহিত ভাবটি উপলব্ধি করতে পারা।
ঘ) অভিব্যক্তি- পাঠ্যাংশের মধ্যে যে ভাবনা, আবেগ, ও অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তা যথাযথ প্রকাশের মাধ্যমে বিষয়টিকে মুক্ত করে তোলা।
2) সৃজনমূলক পাঠ বলতে আপনি কী বোঝেন?
উত্তর- যে পাঠে বিষয়বস্তুর অন্তর্নিহিত ভাব যথাযথ উপলব্ধির মাধ্যমে পাঠ রসোত্তীর্ণ হয়ে ওঠে এবং বিষয়বস্তুকে পুরোপুরি আত্মস্থ করার মাধ্যমে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচার বিশ্লেষণের দ্বারা পাঠকের হৃদয় নতুন ভাবনার আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
যে পাঠের মাধ্যমে পাঠকের সৃজনশীল চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটে অর্থাৎ বিষয়বস্তুর অন্তর্নিহিত ভাব যথাযথ উপলব্ধির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে আত্মনুভূতি, সৃজনশীলতা ও সৌন্দর্যবোধ জাগরিত হয়। এককথায় বলা যায় রসানুভূতি বা রসাস্বাদনই হল এই পাঠের মূল উদ্দেশ্য।
3) পুঙ্খানুপুঙ্খ পাঠ কী?
উত্তর- যে পাঠে ভাষাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুশীলন করা হয় অর্থাৎ পাঠে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দের অর্থ, বাক্যের গঠন, ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য প্রভৃতি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে যখন পঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় তখন তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ পাঠ বলে। এই প্রকার পাঠের সাহায্যে পাঠক তাদের পঠন দক্ষতার বিকাশ ঘটায়। তাদের শব্দভান্ডারের বিস্তৃতি ঘটায় এবং তারা ভাষার বিভিন্ন ধরনের প্রকাশভঙ্গি আয়ত্ত করতে পারে। এই প্রকার পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থী যেসব শব্দের ব্যবহার শেখে সেগুলি তারা রচনায় প্রয়োগ করতে পারে।
4) ক্ষেত্রটীকা কী?
উত্তর- সাধারণত কোন গবেষণামূলক কার্য সফলভাবে পরিচালনার জন্য অনেক সময় তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হয় আর ক্ষেত্র টিকা হল তথ্য সংগ্রহের একটি অতীব জনপ্রিয় প্রক্রিয়া অনেক সময় গবেষণাকালে সকল বিষয় সম্পর্কে পূর্ব লিখিত কোন তথ্য পাওয়া যায় না আবার অনেক পূর্ব লিখিত বলে তা গ্রাহ্য হয় না সে সকল ক্ষেত্রে সম্প্রতিক কালের তথ্য জানার জন্য ক্ষেত্র টিকা এর প্রয়োজন হয় এক কথায় ক্ষেত্র টিকা হল গবেষণা কাজ ফলপ্রসু করার উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত প্রত্যক্ষভাবে তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি।
কোন গবেষক পর্যবেক্ষণ স্থলে না গিয়েও সমস্ত ব্যাপার সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জেনে নিতে পারে ক্ষেত্রটীকার মাধ্যমে। যেমন কোন ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থানের বা কোন ভৌগোলিক অবস্থার বর্ণনা। অথবা কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে নিখুঁত তথ্যাবলী ইত্যাদি।
5) পঠনের সংজ্ঞা দিন।
উত্তর- পঠন হল একটি জটিল বৌদ্ধিক প্রক্রিয়া। যার সাহায্যে কোন লিপির অর্থ উপলব্ধি করা হয়। এটি এক ধরনের ভাষা দক্ষতা। দীর্ঘদিন অভ্যাসের ফলে মানুষ পঠন দক্ষতা আয়ত্ত করতে শেখে। পঠনের সাহায্যে বৌদ্ধিক বিকাশ সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন বিষয় পঠনের মাধ্যমে শিশুর জ্ঞানের বিকাশ ঘটে।
পঠনের সংজ্ঞা :
Brunan WK (1989) এর মতে- "Reading is a two way interaction in which information is exchanged between the reader and author".
অর্থাৎ "পঠন হল এমন এক ধরনের দ্বিমুখী প্রক্রিয়া যেখানে লেখক এবং পাঠকের মধ্যে তথ্যের মিথস্ক্রিয়া ঘটে"।
Smith (1973) এর মতে- "Reading is an act of communication in which information is transferred from a transmitter to a receiver".
অর্থাৎ, "যোগাযোগের একটি উল্লেখযোগ্য পন্থা হল পঠন, যার মাধ্যমে প্রেরক ও সংগ্রাহকের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান ঘটে"।
6) শব্দতালিকা বলতে কী বোঝান হয়?
উত্তর- জন্মের পর থেকে প্রায় তিন-চার বছর পর্যন্ত অর্থাৎ প্রাক্ বিদ্যালয় পর্যায়ে একজন শিশু কথা শোনা ও বলার মাধ্যমে প্রচুর শব্দ অর্জন করতে সক্ষম হয়। যেগুলি কেবলমাত্র মৌখিক রূপে গণ্য। আবার বিদ্যালয় জীবন শুরু হওয়ার পর থেকে শিশুর পঠন ও লিখন দক্ষতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন সে মুদ্রিত অক্ষরের মাধ্যমে লিখিত শব্দ অর্জন, শব্দের সঠিক উচ্চারণ ও অর্থ সম্পর্কে অবহিত হয়। শিশুর এই মৌখিক ও লিখিত আকারে অর্জিত শব্দভান্ডারকেই শব্দতালিকা বা Vocabulary বলা হয়।
7) ডিসলেক্সিয়া কী?
উত্তর- মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে যখন কোন শিশুর স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হয়ে যায় তখন তার লিখন, পঠন, উচ্চারণ সবকিছুতেই সমস্যা দেখা দেয় এবং সে অন্যদের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে পরে। শিশুর এই পঠন-প্রতিবন্ধকতাকে ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) বলে। এই রোগের লক্ষণগুলি হল-
i. বানান ভুল করা।
ii. এলোমেলো ভাবে পাঠ পড়া।
iii. এক একটি শব্দ উচ্চারণ করে ধীরে ধীরে পড়া
iv. পাঠের সময় ভুল উচ্চারণ করা।
v. বেশিক্ষণ মনে রাখতে না পারা।
vi. সঠিক ছেদ-যতি-চিহ্নের ব্যবহার করতে না পারা।
vii. ভাব প্রকাশের অক্ষমতা ইত্যাদি।
8) বিস্তৃত পাঠ কী?
উত্তর- পাঠের দ্রুত গতি বজায় রেখে ব্যাপক আয়তনযুক্ত পাঠ্য বিষয়ের বিভিন্ন অংশ যেগুলি পাঠ করার জন্য তেমনভাবে মনোযোগ বা একাগ্রতার প্রয়োজন হয় না বা আলতোভাবে বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ করে তার সাহিত্য ও সৌন্দর্যের রসাস্বাদন করা যায়, সেই ধরনের পাঠকে বিস্তৃত পাঠ (Extensive reading) বলে। এককথায় বলতে গেলে, যে পাঠের মাধ্যমে কোন বিষয়বস্তুকে বিস্তৃতভাবে পাঠ করে তার ভাব ও রস উপলব্ধি করা যায় তাকেই বিস্তৃত পাঠ বলা হয়। যেমন কোন গল্পের বই, উপন্যাস, ছোটগল্প প্রভৃতি দু-তিনবার পড়ে তার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত হওয়া।
9) সরব পাঠের দুটি সুবিধা লিখুন।
উত্তর- স্বশব্দে উচ্চারণ করে কোন পাঠ পড়াকে সরব পাঠ বলে। প্রাক্ প্রাথমিক স্তরে এবং বিদ্যালয় শিক্ষায় বিশেষ করে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য এই পদ্ধতি অত্যন্ত উপযোগী। দর্শন ও কথনের সার্থক সমন্বয়ে ভাষার লিখিত রূপ উদ্ধার করা হয় সরব পাঠের মাধ্যমে। সরব পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ভাব প্রকাশ করতে পারে। ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে সরব পাঠের অভ্যাস শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক বেশি কার্যকরী। কবিতা পাঠ, প্রবন্ধ, গল্প বলা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সরব পাঠ বিশেষ উপযোগী।
10) দুরূহ পাঠের সংজ্ঞা লিখুন।
উত্তর- দুরূহ পাঠ (Critical reading) হল এক ধরনের সক্রিয় পঠন পদ্ধতি। এখানে পাঠককে কোন পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে গভীর ও জটিল সংযোগ স্থাপন করা হয়। এই পাঠ যেকোন পাঠ্য বিষয়ের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মূল্যায়ন-এর সমন্বয় সাধন করে। এখানে পাঠক নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর অন্তর্গত অন্তর্নিহিত অর্থ বিচার বিশ্লেষণের দ্বারা উপলব্ধি করতে পারে। কোন খাদ্যবস্তুর স্বাদ গ্রহণ করতে গেলে যেমন সেটিকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হয়, তেমনি এখানেও পাঠ্যবিষয়ের রসাস্বাদন করতে গেলে পাঠটিকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হয়। এই পাঠ বিচারমূলক পাঠ এবং পাঠের চর্বনমূলক পর্যায় নামেও পরিচিত।
দুরূহ পাঠের সংজ্ঞা :
"Critical reading is an involved version of reading that uses specific processes models, questions and theories to help a reader comprehend the text on a more Complex level. It is the opposite of 'skimming' and helps a reader to get at the deeper stracture of the reading to break down the content into a true logical understanding."
অর্থাৎ, দুরূহ পাঠ বা সমালোচনামূলক পাঠ হল এমন এক ধরনের গভীর পঠন প্রক্রিয়া, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি, নমুনা অথবা প্রশ্নকরণের সাহায্যে কোন পাঠ্য রচনাকে ব্যাখ্যামূলকভাবে পঠন করা হয়। এটি একটি গভীর ও জটিল প্রক্রিয়া। এটি ভাসা ভাসা পাঠের ঠিক বিপরীত প্রক্রিয়া। এটি কোন পাঠ্য বিষয়ের গভীর সংগঠনকে সত্য ও যুক্তিপূর্ণভাবে খুঁজে বের করতে সহায়তা করে।
11) ব্যাখ্যানধর্মী পাঠ বলতে কী বোঝেন?
উত্তর- যে পাঠের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী তার পূর্বজ্ঞান বা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি নতুন বিষয়কে পরিস্ফুট করতে সক্ষম হয় এবং পাঠ্য নির্দিষ্ট শৈলীতে রচিত বর্ণনা, বর্ণনক্রম, তুলনা-বৈপরীত্য, সমস্যা-সমাধান, কারণ-ফলাফল, সারাংশ ইত্যাদি ব্যাখ্যা করতে পারে তাকে ব্যখ্যানধর্মী পাঠ বা Expository text বলে। এই ধরনের পাঠ মূলত বিশ্লেষণভিত্তিক। এই পাঠ শিক্ষার্থীদের মনে আগ্রহের সৃষ্টি করে।
Meyer এবং Freedle ব্যাখ্যানধর্মী পাঠের সংজ্ঞায় বলেছেন- "expository text can follow a range of structures such as descriptions, sequence, compare and contrast, problem and solution, cause and effect and often a text will combine two or more of these structures".
12) পঠন পটুত্ব কী?
উত্তর- শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ও পর্যায়ে আমাদের বিভিন্ন পুস্তক অধ্যয়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে কোন পাঠ বারংবার অধ্যয়নের দ্বারা যখন শিক্ষার্থীর ভাষাজ্ঞান ও উচ্চারণ রীতির বিকাশ ঘটে এবং নির্ভুলভাবে সে দ্রুত পঠনের ক্ষমতা অর্জন করে অর্থাৎ পঠনের সু অভ্যাসের মাধ্যমে কোন বিষয় সম্পর্কে যে বিশেষ অর্থোপলব্ধি ঘটে তাকেই পঠন পটুত্ব বলা হয়। এই পঠন পটুত্বের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায় এবং নিজস্ব বিচারক্ষমতার উন্মেষ ঘটে।
13) পঠন প্রণালীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখুন।
উত্তর- পঠন প্রণালীর বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
ক. পাঠক্রমের অন্তর্গত বিষয়ের বিশ্লেষণ যার সাহায্যে শিক্ষণ ও শিখন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
খ. পঠন প্রণালী কেবলমাত্র অভ্যাস নয়, এটি তথ্য আহরণ করার একটি প্রক্রিয়া।
গ. পঠন প্রণালীর মাধ্যমে শব্দ ও অর্থের সাথে শিক্ষার্থীদের আত্তীকরণ ঘটে।
ঘ. পাঠ্যপুস্তকে মুদ্রিত অক্ষরগুলিতে মনোযোগ সহকারে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা।
14) অধিগত জ্ঞান কথার অর্থ কী?
উত্তর- আমেরিকান মনোবিদ John H. Flavell ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম 'অধিগত জ্ঞান'-এর ধারণা ব্যক্ত করেন। অধিগত জ্ঞান কথাটির অর্থ হল কোনো জ্ঞাতব্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ (Knowning about knowing) বা নিজের চিন্তাভাবনার উপর জ্ঞান। এখানে কোন বিষয় কীভাবে শিখতে হবে সেই সম্বন্ধে শিখনের ব্যবস্থা করা হয়। এটি এক ধরনের বিস্তারিত জ্ঞান যা শিক্ষার্থীদের চিন্তনমূলক প্রক্রিয়া (Reflective thinking)-কে ত্বরান্বিত করে। এককথায় চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে চিন্তা করাই হল অধিগত জ্ঞান বা অধিপ্রজ্ঞা (Meta-cognition)।
অধ্যাপক Fiavell এবং Wellman অধিগত জ্ঞানের ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেন- অধিগত জ্ঞান হল এমন একটি প্রাক্ষোভিক প্রক্রিয়া যেখানে কোন পাঠক পাঠ প্রণালী থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানটির আত্মকেন্দ্রিক বিশ্লেষণ করেন অর্থাৎ পাঠ প্রণালীর দ্বারা কি জ্ঞান অর্জন করলাম, কিভাবে অর্জন করলাম, কিভাবে তার অনুধাবন করলাম, কিভাবে তা স্মরণ করলাম ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলি অধিগত জ্ঞানের ধারণার সাথে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত।
15) পঠনে দ্রুততা বলতে আপনি কী বোঝেন?
উত্তর- যেকোন পাঠ্য বিষয় বা অন্য কোন বিষয় যখন আমরা খুব দ্রুততা, নির্ভুলতা এবং সঠিক অভিব্যক্তি সহকারে পড়তে পারার দক্ষতা অর্জন করি বা পড়তে সক্ষম হই তখন তাকে পঠনে দ্রুততা বলা হয়।
16) পরিচালিত পাঠের দুটি সুবিধা লিখুন।
উত্তর- পরিচালিত পাঠ হল ছোট ছোট গ্রুপে পড়ার নির্দেশক নকশা। যা বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পঠন দক্ষতা বিকাশে সামর্থ্য করে তোলে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা তাদের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করে এবং প্রয়োজনে গভীর মনোনিবেশ করতে পারে।
এই পাঠের সুবিধা হল-
i. পরিচালিত পাঠের মাধ্যমে দৈনন্দিন পাঠের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্ভুলতা ও বোধগম্যতা স্তরের উন্নতি ঘটানো যায়।
ii. স্বতন্ত্র পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পাঠে উৎসাহিত করা সম্ভবপর হয়।
17) ডিকোডিং কী?
উত্তর- একটি ডিজিটাল সংকেতকে অক্ষরের ক্রমে রূপান্তর করার নামই ডিকোডিং। এটি এমন একটি লজিক সার্কিট যা কম্পিউটারের বোধগম্য ভাষাকে মানুষের বোধগম্য ভাষায় রূপান্তর করে। যেমন কোন বার্তা বা তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার্থে তার সংকেতকে Plain text বা পরবর্তী বিন্যাসে রূপান্তর করা হয়।
পঠনের ক্ষেত্রে একটি লিখিত শব্দকে সঠিক কথ্য শব্দে পরিণত করার ক্ষমতাকে ডিকোডিং বলা হয়। এই প্রারম্ভিক পঠন দক্ষতার মাধ্যমে পাঠকদের শব্দের মধ্যেকার অক্ষরগুলিকে বিন্যাস করতে, কখনো শব্দের অক্ষর গুলি মিশ্রিত করতে, আবার কখনো সঠিক অক্ষর প্রতিস্থাপন করতে শেখানো হয়।
18) পঠনের সমস্যাগুলি উল্লেখ করুন।
উত্তর- শিক্ষা একটি ধারাবাহিক জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া হওয়ায় প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে পঠন অত্যন্ত প্রয়োজন। মনোযোগ, একাগ্রতা, অধ্যবসায় ও একান্ত অনুশীলন প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী পাঠে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। পঠনকালে শিক্ষার্থীরা যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলি নিম্নরূপ-
i. ধ্বণির উচ্চারণে সমস্যা- পঠনের সময় বর্ণের উচ্চারণ ভুল করা শিক্ষার্থীদের কাছে এক অন্যতম সমস্যা।
ii. শ্রবণজনিত সমস্যা- শ্রবণযন্ত্রের ত্রুটির জন্য শিক্ষকের পাঠ বা বক্তব্য শিক্ষার্থী যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারে না ফলে পঠনে সমস্যা দেখা দেয়।
iii. উচ্চারণে দ্রুততা- বেশি তাড়াহুড়োয় পাঠ করতে গেলে শব্দের মধ্যস্থ কোন কোন অক্ষর স্খলিত হয়ে ধ্বনিতে পরিবর্তন নিয়ে আসে।
iv. শিক্ষার্থীর অন্যমনস্কতা- শিক্ষার্থীর অন্যমনস্কতার কারণে শব্দের উচ্চারণে বর্ণ বিপর্যয় ঘটে গিয়ে ধ্বনি পরিবর্তন হওয়াতে পাঠে সমস্যা হয়।
v. ব্যাকরণ জ্ঞানের অভাব- ধ্বনি ও বর্ণ, শব্দ ও বাক্য, পদ পরিচয়, সন্ধি, সমাস, প্রত্যয়, সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ, সমার্থক শব্দ প্রভৃতি জ্ঞানের অভাবে পাঠে ব্যাঘাত ঘটে।
vi. উপভাষাজনিত সমস্যা- আঞ্চলিকতার প্রভাব শিক্ষার্থীদের পঠনে সমস্যা সৃষ্টি করে।
vii. মুদ্রণ প্রমাদ- পাঠ্যপুস্তকে ছাপার ভুল থাকলে শিক্ষার্থীরাও ভুল বানান পড়ে ও লেখে, ফলে তাদের পঠনে ক্ষতি হয়।
19) পঠন দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কয়েকটি কার্যাবলীর উল্লেখ করুন।
উত্তর- পঠন একটি জটিল প্রক্রিয়া। মাতৃভাষায় পঠনে পটুত্ব অর্জন করার আগেই শিক্ষার্থী তার বাড়িতে ব্যাপকভাবে অভ্যাস করার সুযোগ পায়। মাতৃভাষায় যে সমস্ত শব্দ রয়েছে তার সঙ্গে অনেক আগেই তাদের পরিচিতি ঘটে এবং ধীরে ধীরে নিজের অজান্তেই ব্যাকরণগত শব্দের সঙ্গেও পরিচয় ঘটে যায়। তবে শুধুমাত্র মাতৃভাষাতেই নয় বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পঠন দক্ষতা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কার্যাবলী নিম্নে আলোচিত হল-
ক. পূর্বার্জিত জ্ঞানের ভিত্তি- পূর্বার্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে শিক্ষক নতুন ধারণা দান করেন, ফলে শিক্ষার্থীদের পঠন দক্ষতা অর্জনে সুবিধা হয়।
খ. সশব্দে চিন্তা করা- পঠিত বিষয় সশব্দে চিন্তা করলে শ্রবণেন্দ্রিয় ও চিন্তনক্ষমতার সমন্বয় ঘটে। এই পদ্ধতি পাঠে পটুত্ব অর্জনের পথকে প্রশস্থ করে।
গ. মনোবিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষাদান- মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করলে শিক্ষার্থীরা পঠনে দক্ষতা অর্জন করে।
ঘ. গ্রন্থাগারে যাওয়া অভ্যাস করানো- নিয়মিত গ্রন্থাগারে যাওয়া ও তার সম্পদ ব্যবহার করার মাধ্যমে পঠনে দক্ষতা অর্জন করা যায়।
ঙ. নিজে লেখা অভ্যাস করা- শিক্ষার্থীদের নিজে লেখা (দেওয়াল পত্রিকা, বাৎসরিক পত্রিকা ইত্যাদি) অভ্যাস করার মাধ্যমে পাঠন দক্ষতায় উন্নতি ঘটানো যায়।
চ. বিভিন্ন ধরনের রচনাশৈলীর মিশ্রণ- বিভিন্ন শৈলীর রচনা পাঠের মিশ্রণ করতে পারলে পঠনে দক্ষতা অর্জন করা যেতে পারে। যেমন সংবাদ, রহস্য, রোমাঞ্চ গল্প, উপন্যাস, কল্পবিজ্ঞান প্রভৃতি নিয়মিত পাঠ করলে যেকোন ধরনের পাঠে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।
20) স্কিমিং বলতে কী বোঝায়?
উত্তর- বিষয়ের গভীরে না পৌঁছে কোন বিষয়বস্তুর ওপর দ্রুততার সঙ্গে চোখ বুলিয়ে তার মূল বক্তব্য ও লেখকের ধারণার সঙ্গে পরিচিত হওয়াকে ভাসা ভাসা পাঠ (Skimming) বলে। এই ধরনের পাঠে পাঠক কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি স্মরণে রেখে বাকি অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলি ভুলে যায়। এই পদ্ধতিতে কোন বিষয়ের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর দেওয়ার দরকার হয় না, ভাসা ভাসা ভাবে বিষয়টির উপর চোখ বুলিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। যেমন সংবাদপত্র পড়ার ক্ষেত্রে মূলত শিরোনাম বা হেডলাইনগুলো দেখে তার বিষয়ের উপর একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অনেকেই নিখুঁতভাবে প্রতিটি লাইন পড়ে না। আবার কোন পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কোন টপিককে খুঁজতে হলে অনেকেই ভাসা ভাসা পাঠ অবলম্বন করে থাকে।
21) পাঠক্রম জুড়ে পঠন কী?
উত্তর- পাঠক্রম জুড়ে পঠন বলতে মূলতঃ পাঠক্রমে পঠনের গুরুত্বকেই বোঝানো হয়। পাঠক্রমে পঠন গুরুত্বপূর্ণ তার কারণ শিক্ষককূল এবং শিক্ষাবিদরা বিশ্বাস করেন যে, ভাষাতত্ত্বের দক্ষতা নির্ভর করে পঠনের উপর। তাই পাঠক্রমে পঠনকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করা হয় এবং সমগ্র পাঠক্রমে সেটি শিক্ষার্থীর পঠনের উন্নয়নকে প্রভাবিত করে। সমগ্র পাঠক্রমে নির্ধারিত পঠনের মধ্য দিয়েই শিক্ষক শিশুর অভিজ্ঞতা, শব্দভাণ্ডার, বাচনক্ষমতা ও ভাষার প্রয়োগ রীতির উন্নতি ঘটাতে পারেন। তাই পাঠক্রমে পঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
22) নিবিষ্ট পাঠের দুটি উপকারিতা লিখুন।
উত্তর- পরিপূর্ণ রসাস্বাদনের মাধ্যমে নিবিড়ভাবে মনোযোগ সন্নিবেশ করে অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে পাঠ্য বিষয়ের বিভিন্ন বিষয়বস্তু ছন্দ-অলংকার, ধ্বনি-রসের অভিব্যক্তি অনুসারে পাঠ করার পদ্ধতিকে নিবিষ্ট পাঠ/ সুসংহত পাঠ/ নিবিড় পাঠ (Intensive reading) বলে। এককথায় বলা যায় যে পাঠের দ্বারা বিষয়ের ভাবোদ্ধার ও রসোদ্ধার করা সম্ভব সেই পাঠকেই নিবিষ্ট পাঠ বলা হয়।
নিবিষ্ট পাঠের উপকারিতা সমূহঃ-
i. নিবিষ্ট পাঠপ্রণালীর দ্বারা পাঠের গভীর অর্থ উপলব্ধি করা যায়।
ii. এই পাঠপ্রণালী শিক্ষার্থীর ধ্বনিবিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে।
iii. নিবিষ্ট পাঠপ্রণালীতে শিক্ষার্থী বা পাঠকের শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।
iv. এই পাঠের দ্বারা পাঠকের পুস্তক সংক্রান্ত গঠনগত জ্ঞান ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
v. এই পাঠপ্রণালীতে পাঠকের পাঠের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
23) বিচারমূলক পাঠ কী?
উত্তর- বিচারমূলক পাঠ (Critical reading) হল এক ধরনের সক্রিয় পঠন পদ্ধতি। এখানে পাঠককে কোন পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে গভীর ও জটিল সংযোগ স্থাপন করা হয়। এই পাঠ যেকোন পাঠ্য বিষয়ের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মূল্যায়ন-এর সমন্বয় সাধন করে। এখানে পাঠক নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর অন্তর্গত অন্তর্নিহিত অর্থ বিচার বিশ্লেষণের দ্বারা উপলব্ধি করতে পারে। কোন খাদ্যবস্তুর স্বাদ গ্রহণ করতে গেলে যেমন সেটিকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হয়, তেমনি এখানেও পাঠ্যবিষয়ের রসাস্বাদন করতে গেলে পাঠটিকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হয়। এই পাঠ দুরূহ পাঠ এবং পাঠের চর্বনমূলক পর্যায় নামেও পরিচিত।
24) দুরূহ পঠন দক্ষতা বিকাশের দুটি সুবিধা লিখুন।
উত্তর- দুরূহ পঠন দক্ষতা বিকাশের সুবিধা-
i. প্রদত্ত বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা তৈরি হয়।
ii. লেখকের মূল বক্তব্য সহজেই অনুধাবন করা যায়।
iii. পঠিত পাঠ্যের উপর ভিত্তি করে মতামত এবং অনুমান তৈরি করা যায়।
iv. গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাঠ্যবিষয়ে বর্ণিত তত্ত্বের প্রমাণ গুলি সঠিক কিনা তা বিবেচনা করে দেখা হয়।
25) সংকেতমূলক/ইঙ্গিতময় পাঠ কী?
উত্তর- সংকেতমূলক/ইঙ্গিতময় পাঠ (Suggestive text) হল বিশেষ শৈলীতে লেখা এক ধরনের পাঠ। যার বাইরের একটি সাধারণ অর্থ থাকে, কিন্তু গভীরভাবে বা নিবিড়ভাবে পাঠ করলে অন্তর্নিহিত আরও একাধিক অর্থ উপলব্ধ হয়। ইঙ্গিতময় পাঠে লেখক বা কবি ভাষা নির্বাচন বিষয়ে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন। এই ধরনের পাঠ নির্মাণকালে সংখ্যাধিক উপমা, লুপ্তোপমা ও অলংকার ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয় যাদের গভীর ও অন্তর্নিহিত অর্থ থাকে।
0 Comments: