
B.S.A.E.U Semester-I, Course-IV, পাঠক্রম ও ভাষার সম্পর্ক (Relation between Curriculum and Language)
পাঠক্রম কেবলমাত্র কতকগুলি পাঠ্যপুস্তক বা বিষয়ের তালিকাই নয়, পাঠক্রম হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও বিষয়ের সমষ্টি। পূর্বে গতানুগতিক শিক্ষায় পাঠক্রম বলতে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থীদের সকল চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে যে সমস্ত জ্ঞানমূলক তাত্ত্বিক বিষয় পড়ান হত তার সমষ্টিকে বোঝানো হত। কিন্তু বর্তমানে পাঠক্রমের এই ধারণা পরিত্যক্ত হয়েছে। আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ। শিক্ষার এই আধুনিক লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পাঠক্রম সম্পর্কিত ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী পাঠক্রম হল শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশের উপযোগী জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও কার্যাবলীর পরিকল্পিত, সুসংগঠিত এবং সমন্বিত রূপ। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার সমন্বয়ই হল পাঠক্রম।
শিক্ষাবিদ নান -এর ভাষায় "শিক্ষার বিষয়বস্তু ও জীবন অভিন্ন তাই পাঠক্রমের মধ্যে জীবনাদর্শগুলি প্রতিফলিত হওয়া খুব দরকার।" পাঠক্রমের প্রধান উদ্দেশ্যই হল শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ। তাই শিক্ষার্থীর মানসিক, দৈহিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক, ও নৈতিক বিকাশের জন্য সাবলীল ভাষার প্রয়োজন। সেই কারণে পাঠক্রমে ভাষার প্রাসঙ্গিকতাকে কখনই উপেক্ষা করা যায় না। পাঠক্রমের সাহায্যে শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি পূরণ করতে গেলে পাঠক্রমের সাথে ভাষার সমন্বয় ঘটানো অত্যন্ত জরুরী। কারণ পাঠক্রমে ভাষার ভূমিকা অপরিসীম।
পাঠক্রম ও ভাষার সম্পর্ক নিম্নরূপ-
- পাঠক্রমের ভাষা সহজ সরল হলে পাঠ্যবস্তু সহজেই শিক্ষার্থীর আত্মস্থ হবে এবং শিক্ষার্থীরা খুব দ্রুত জ্ঞান বিনিময় ও জ্ঞানের সঞ্চার ঘটাতে পারে।
- পাঠক্রমে উপযুক্ত ভাষার ব্যবহার শিক্ষার্থীর মানসিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
- বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীর বয়স, রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী পাঠক্রমের ভাষা নির্বাচন করলে সেই পাঠক্রম শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের সহায়ক হয়ে ওঠে।
- পাঠ্যবস্তুর বিষয় অনুযায়ী ভাষা নির্বাচিত হবে এবং ভাষার দুর্বোধ্যতা ও জটিলতাও নির্দেশিত হবে।
- পাঠক্রমের ভাষা সংক্ষিপ্ত অথচ বহুভাব প্রকাশের সক্ষম হলে শিক্ষার্থী খুব অল্প সময়েই অধিক জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হবে।
- অনুবাদমূলক পাঠ্যবস্তুর ক্ষেত্রে ভাষা অনুবাদের সঙ্গে ভাবানুবাদ এবং রসানুবাদ ও প্রয়োজন।
- সমালোচনামূলক পাঠ্যবস্তুর ভাষা হবে তুলনামূলকভাবে তির্যক ও আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
- সাহিত্য বিষয়ক পুস্তকের ভাষা ব্যবহারের রীতি বিভিন্ন প্রকারের হবে। যেমন, প্রবন্ধ ও নিবন্ধনের ভাষা হবে সংক্ষিপ্ত অথচ সাবলীল; আবার পত্র, প্রতিবেদন প্রভৃতির ভাষা হবে সহজ, সাবলীল ও বক্তব্য বিষয়ে উপস্থাপনের উপযুক্ত।
- বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠ্য পুস্তকের ভাষা হবে স্পষ্ট ও সরল। এখানে কোনরকম কাব্যিকতা থাকবে না।
- শিক্ষার্থীর সামাজিক ও মানসিক সম্পর্কের সার্থক বিকাশে ভাষার অনুশীলন প্রয়োজন। কেননা পাঠক্রমে উপযুক্ত ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীর সামাজিক ও মানসিক সত্তার বিকাশ ঘটে।
0 Comments: