BSAEU, B.ED, SEM-I, COURSE-IV, বহুভাষাবাদের ধারণা (Concept of Multilingualism/Polyglottism)
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

BSAEU, B.ED, SEM-I, COURSE-IV, বহুভাষাবাদের ধারণা (Concept of Multilingualism/Polyglottism)

BSAEU, B.ED, SEM-I, COURSE-IV, বহুভাষাবাদের ধারণা (Concept of Multilingualism/Polyglottism)

 

Multilingualism/Polyglottism (বহুভাষাবাদ)

কোন ব্যাক্তির দুই এর অধিক ভাষায় বিশুদ্ধ ও অবিমিশ্রভাবে কথা বলতে, বুঝতে ও প্রতিক্রিয়া করতে পারার দক্ষতাকে বহুভাষাবাদ বলে।


Hossen Tavakoli-র মতে-

“Multilingualism is the use of three or more language by an individual or within a speech community.”

বহুভাষাবাদ দুটি উপায়ে সাধিত হয়, যেমন- ব্যাক্তিগত উদ্যোগ এবং দুই এর অধিক জনগোষ্ঠীর একত্র অবস্থান। বর্তমানে পৃথিবীর সর্বত্রই বহুভাষাভাষী মানুষ দেখতে পাওয়া যায়। বহুভাষা যেমন একটি ব্যাক্তিকে সমৃদ্ধ করে তেমনি অন্যান্য ভাষাগুলিকেও মর্যাদার আসনে উন্নীত করে।


বহুভাষা-ভাষী শ্রেণিকক্ষ-

আধুনিক শিখন প্রক্রিয়ার একটি জটিলতম রূপ হল বহুভাষাভাষী শ্রেণিকক্ষএখানে বহুভাষাভাষীর শিক্ষার্থীরা পঠন পাঠন করে। যেমন CBSC, ICSC ত্যাদি শ্রেণিকক্ষ।


 বহুভাষা-ভাষী শ্রেণিকক্ষের বৈশিষ্ট্য-


এই ধরণের শ্রেণিকক্ষের শিখন প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ।

এখানে শিখন প্রক্রিয়া কোন প্রধান ভাষা বা একটি নির্দিষ্ট ভাষায় হয়ে থাকে।

) এই ধরণের শ্রেণিকক্ষে ভাষা ব্যবহার ও উচ্চারণে বিবিধতা ও বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়।

বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি পরস্পরকে সমৃদ্ধ করে।

) এই ধরনের শ্রেণিকক্ষে ভাষা ব্যবহার ও উচ্চারণে ত্রুটি শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে।

) এই ধরনের শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ভাষাভাষী, জনগোষ্ঠী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতিকৃতি থাকা উচিত

) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির সহায়ক

এখানে শিক্ষক যখন কোন উদাহরণ ব্যবহার করবেন তখন তিনি বিভিন্ন ভাষা ও সম্প্রদায় থেকে উদাহরণ দিলে সেটি শিক্ষার্থীদের কাছে হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠবে

বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পারিক মিথস্ক্রিয়া নিজ ভাষায় হয়ে থাকে

) বহুভাষাভাষী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যবহার ও সংস্কৃতির পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়

 

 বহুভাষা-ভাষী শ্রেণিকক্ষের সুবিধা-


১) বহুভাষা-ভাষী শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন সংস্কৃতির শিক্ষার্থী থাকায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির পথ প্রশস্ত হয়

২) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে ভিন্নভাষী শিক্ষার্থীর ভাষা শোনার ফলে অন্য শিক্ষার্থীর সেই ভাষার প্রতি কৌতূহল তৈরি হয় এবং সে সেই ভাষা শিখনের চেষ্টা করে

৩) বহুভাষা-ভাষী শ্রেণিকক্ষ হল ভাষা ও সংস্কৃতির বিশ্বকোষ

৪) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে বহু ভাষা ধর্ম ও সংস্কৃতি থাকায় নিজের ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতিকে সম্মান করার পাশাপাশি অপরের ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতিকেও শিক্ষার্থীরা সম্মান করতে শেখে

৫) এই ধরনের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিসীমা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উদারনৈতিক মনোভাবও গড়ে ওঠে।  

৬) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে অনেক সময় শিক্ষার্থীর মধ্যে মিশ্র ভাষা ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায় অর্থাৎ শিক্ষার্থী বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন শব্দ প্রয়োগ করে ভাষা ব্যবহার করে যা তার বিকাশের পথকে তরান্বিত করে

৭) একই শ্রেণিকক্ষে ভিন্নভাষী শিক্ষার্থী অবস্থান করায় তাদের মধ্যে সহনশীলতার মনোভাব গড়ে ওঠে

৮) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর কৌতুহল অন্য ভাষার প্রতি তাকে আকৃষ্ট করে এবং ভাষার মাধ্যমেই সেই ভাষার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়, এইভাবে সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটে

৯) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষ যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সম্মৃদ্ধ করতে সক্ষম

১০) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষ দেশ ও জাতির সীমানা পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করতে সাহায্য করে

১১) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষ ক্ষুদ্র পরিসরে বৃহৎ জ্ঞানের ভান্ডার অর্থাৎ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জ্ঞানের কর্মক্ষেত্র 

১২) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষ দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, দশের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৌতূহল দুটোই বাড়িয়ে দেয়।


 বহুভাষা-ভাষী শ্রেণিকক্ষের অসুবিধা-


1) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে পঠন-পাঠনে সমস্যা সৃষ্টি করে

2) শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়ায় তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে

3) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় নিজস্ব সংস্কৃতি ছেড়ে অন্য সংস্কৃতিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করতে পারে না।

4) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক কোন একটি ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য রাখলে অযথা কোলাহল ও সমস্যার সৃষ্টি হয়।

5) এই ধরনের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভাষাভাষী হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মের ও হয় তাই বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সমন্বয় না ঘটলে ধর্ম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়।

6) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা যদি অন্যের ধর্ম ও সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায় তাহলে তারা নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতিকে অবহেলা করতে থাকে।

7) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাত্মতাবোধ গড়ে ওঠে না কারন অনেকেই নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে পৃথক থাকতে পছন্দ করে

8) এই ধরনের শ্রেণীকক্ষে সংস্কৃতির ভেদাভেদ অনেক ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক পীড়ন -এর রূপ নিয়ে থাকে।

9) এখানে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর ভাষা ব্যবহারের রীতি ও উচ্চারণ প্রক্রিয়া পৃথক হওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে পঠন-পাঠনে ব্যাঘাত ঘটে।

 

বহুভাষাভাষী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের ভূমিকা-


ক) এই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে প্রথমেই উদার মানসিকতার অধিকারী হওয়া প্রয়োজন।

খ) প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষক মহাশয় নিজ ভাষা ব্যবহারের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেবেন।

গ) শ্রেণিকক্ষে অবসর সময়ে বিভিন্ন ভাষার অনেক মজার গল্প ছড়া ইত্যাদি বলার মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবেন।

ঘ) বহুভাষী শ্রেণীকক্ষ শিক্ষককে শুধু তার নিজের ভাষা নয় অন্যান্য ভাষা গুলিতেও কম বেশি দক্ষ হতে হবে।

ঙ) শিক্ষক মহাশয় শিক্ষার্থীদের অন্য ভাষা শিখনে উৎসাহী করবেন।

চ) এখানে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ভাষায় বক্তৃতা সভার আয়োজন করতে পারেন।

ছ) শিক্ষক মহাশয় সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ভাষার গান, নাটক, আবৃত্তি, নাচ ইত্যাদির আয়োজন করবেন।

 জ) শিক্ষার্থীদের নিজ ভাষায় দেওয়াল পত্রিকা, পোস্টার ইত্যাদি তৈরিতে উৎসাহ দেবেন।

  ঝ) বহুভাষী শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক সর্বদাই একজন ভালো পর্যবেক্ষক হবেন।

0 Comments: