পারদর্শিতার অভীক্ষা, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

পারদর্শিতার অভীক্ষা, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা

পারদর্শিতার অভীক্ষা, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা

 পারদর্শিতার অভীক্ষা- 

    যে কোন কার্য সম্পাদন করার দক্ষতাকে বলা হয় পারদর্শিতা। নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ন্ত্রিত প্রশিক্ষণের প্রভাবে ব্যক্তিজীবনের সাধিত পরিবর্তনকে পরিমাপের জন্য নির্ধারিত উপযুক্ত অভীক্ষাকে বলা হয় পারদর্শিতার অভীক্ষা। এই প্রসঙ্গে Thorndike, R. L. and Elezabeth Hagan-এর ইংরেজি সংজ্ঞাটি প্রণিধানযোগ্য — "Achievement tests measure what a person has learned to do. These tests are thus instruction and concerned with evaluations of Past Progress."




    গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর অগ্রগতি পরিমাপ করার জন্য যে ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত ছিল তার দ্বারা শিক্ষার্থীর যথাযথ মূল্যায়ন সম্ভব হত না। তাই আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় পারদর্শিতার অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন সংঘটিত হয়ে থাকে। এখানে পাঠ্য বিষয়ের সমস্ত দিকের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির গুণগত মান যথাযথভাবে পরিমাপ করা যায়।


    Gronland-এর ভাষায়, “A systametic procedure for determining the | amount a student has learned through instruction.” অর্থাৎ নির্দেশনার মাধ্যমে শিক্ষার্থী কতটা পরিমাণ শিখেছে তা নির্ধারণের জন্য এটি একটি সুসংবদ্ধ পদ্ধতি।


পারদর্শিতার অভীক্ষার বৈশিষ্ট্যাবলী :-


(i) পারদর্শিতার অভীক্ষা শিক্ষার্থীদের আচরণের মূল্যায়ন করে। 

(ii) আদর্শ পারদর্শিতার অভীক্ষা শিক্ষার কাঠিন্য স্তর এবং পার্থক্যমূলক ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন করা হয়।

(iii) অভীক্ষাপত্রটি সেইভাবে নির্মাণ করতে হবে যাতে একজন শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা অপর শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য পরিমাপ করতে সাহায্য করে। 

(iv) অভীক্ষাপত্রটি শিক্ষার্থীদের বয়স, শ্রেণি ও সময় সবদিক বিবেচনা করেই গঠন করা হয়।

(v) পারদর্শিতার অভীক্ষাপত্র শিক্ষার্থীদের বিশেষ বিষয়ের সমগ্র অংশের পারদর্শিতা বিচার করতে পারে। তাই এই অভীক্ষার পরিসর সীমিত নয়।

(vi) আদর্শায়িত অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা বৈজ্ঞানিক কৌশলে নির্ধারণ করা হয়। 

(vii) এখানে পরিমাপযোগ্য বিষয়গুলির বর্ণনা অবশ্যই থাকবে।


পারদর্শিতার অভীক্ষার উদ্দেশ্য :-

    শিক্ষাক্ষেত্রে পারদর্শিতার অভীক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হল বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর শিক্ষার্থী কতখানি শিক্ষা বা দক্ষতা অর্জন করেছে তা নির্ণয় করা। 

পারদর্শিতার অভীক্ষার বিভিন্ন আচরণগত উদ্দেশ্যগুলি হল-

(ক) বৌদ্ধিক উদ্দেশ্য: বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট পাঠ সম্পর্কে বিশেষ শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক জ্ঞান ও জ্ঞানের গভীরতা কতখানি হয়েছে তা যাচাই করাই হল বৌদ্ধিক উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য দুই প্রকার । যথা জ্ঞানমূলক ও বোধমূলক।


জ্ঞানমূলক উদ্দেশ্য : যদি দেখা যায় যে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শিক্ষার্থী খুব বেশি চিন্তা করছে না অথবা বিশেষ উপলব্ধি ছাড়াই সরাসরি উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছে। তবেই জ্ঞানমূলক উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ হবে। বিশেষত সংখ্যা নিরূপণ, উদাহরণ দেওয়া, বিবৃত করা, কোন ব্যক্তি, কোন বস্তু, ঘটনা বা কাল প্রভৃতি জ্ঞানমূলক উদ্দেশ্যের মধ্যে পরে।


বোধমূলক উদ্দেশ্য: দুটির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা, শনাক্ত করা, খুঁজে বার করা, সম্পর্ক নির্ণয় করা প্রভৃতি বোধমূলক উদ্দেশ্যের আওতায় পরে।

 (খ) প্রক্ষোভ প্রতিক্রিয়ামূলক উদ্দেশ্য : একটি নির্দিষ্ট পাঠ শিক্ষণের ক্ষেত্রে নবলব্ধ জ্ঞান নতুন অনুভূতি বা প্রক্ষোভ কতখানি মুক্তভাবে প্রয়োগ করতে পারছে তা যাচাই করাই হল প্রক্ষোভ প্রতিক্রিয়ামূলক উদ্দেশ্য। যেমন সমস্যা সমাধান করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, যুক্তি স্থাপন, প্রমাণ করা ইত্যাদি।

 (গ) মানসিক চেষ্টা মূলক উদ্দেশ্য : শিক্ষার্থীদের দক্ষতার বিকাশ যাচাই করা, মানসিক বোধ বা চেষ্টামূলক উদ্দেশ্যের প্রধান ভিত্তি। বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু অনুসারে চিত্রাঙ্কন, শ্রেণিবিভাগ বিন্যাস, সময় বিচারকরণ ইত্যাদি এই প্রকার উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত।


পারদর্শিতার অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তা :-

    বর্তমান শিক্ষাবিদগণ অনুমান করেন, শিক্ষাব্যবস্থায় এই ধরনের পরীক্ষাগ্রহণ প্রথম চীনদেশে প্রবর্তিত হয়। বিদ্যালয়ে পারদর্শিতার অভীক্ষা শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা বা অগ্রগতির মাত্রা পরিমাপ করে থাকলেও এই পরিমাপের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সিদ্ধান্তেও আসতে পারি। যেমন-


(i) কোন শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিমাপে এই অভীক্ষা সহায়তা করে ফলে কোন্ ধরনের শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থী অর্জন করেছে তা জানা সহজ হয়।


(ii) এই অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ সংক্রান্ত বিষয় নির্বাচন করা সুবিধা হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীর জন্যে কোন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা হবে তাও জানার সুবিধা হয়।


(iii) কোন্ শিক্ষার্থী কোন স্তরের পাঠের যোগ্য তাও বিবেচনা করা যায়।


(iv) অনেক ক্ষেত্রে এই জাতীয় অভীক্ষা শিক্ষার্থীদের বিশেষ শিক্ষাগত ত্রুটি নির্ণয়ে সাহায্য করে।


(v) এই জাতীয় অভীক্ষা সংশোধনমূলক শিক্ষা পরিকল্পনা রচনায় সহায়তা করে বলে শিক্ষকদের পক্ষে ত্রুটি দূরীকরণ সম্ভবপর হয়। 


(vi) এই অভীক্ষা শিক্ষার্থীদের নিজেদের সফলতা সম্পর্কে একটি ধারণা দেয় ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগত বিষয়ের উত্তরণে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকে।


 (vii) এই জাতীয় অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যত শিক্ষা, বৃত্তি শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।


(viii) এই ধরনের অভীক্ষা শিক্ষকের নিজস্ব পাঠদান প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য শিক্ষা সহায়ক কৌশলের মূল্যায়নে সাহায্য করে। এই অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক তার অনুসৃত নীতিগুলির যথার্থ বিচার করতে পারে।


(ix) পারদর্শিতার অভীক্ষা কোন শিক্ষার্থীর ন্যূনতম যোগ্যতা পরিমাপের সহায়তায় তার ভবিষ্যৎ শিক্ষাগতমূলক পরিকল্পনা রচনার ক্ষেত্রেও সহায়তা করে।

0 Comments: