কম্পিউটার বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহৃত কিছু অনৈতিক কার্যকলাপের বিবরণ নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
1. স্প্যামিং (Spamming): স্প্যাম হল অনাকাঙ্ক্ষিত ম্যাসেজ যা সাধারণত ইমেইলের মাধ্যমে ইউজারের কাছে প্রেরণ করা হয়। এর মাধ্যমে সাধারণত বিভিন্ন সংস্থার পণ্য পরিসেবার বিজ্ঞাপন, দ্রুততম উপায়ে বড়লোক হবার সুবর্ণ সুযোগ, অর্থ উপার্জনের উপায়, লটারি সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বিজ্ঞাপন ইত্যাদি প্রেরণ করা হয়। আবার অনেক সময় বিভিন্ন নিউজ বুলেটিনের মাধ্যমে পাওয়া অপ্রাসঙ্গিক পোস্টকেই স্প্যাম বলা হয়। আর এই পোস্ট পাঠানোর প্রক্রিয়াকে স্প্যামিং বলা হয়।
2. হ্যাকিং (Hacking): হ্যাকিং একটি প্রক্রিয়া যেখানে কেউ কোনো বৈধ অনুমতি ছাড়া কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে। যারা এই হ্যাকিং করে তাদের হ্যাকার বলা হয়। হ্যাকারকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন-
১) হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার (White Hat Hacker)- যেসব হ্যাকাররা তাদের হ্যাকিং কৌশলকে সৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে সাধারণত তাদের হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার বলা হয়। হোয়াইট হ্যাট হ্যাকাররা কোন সিস্টেম ও নেটওয়ার্কিং এর ত্রুটি বের করে তা মালিক বা কোম্পানিকে দ্রুত জানিয়ে সতর্ক করে দেয়। হোয়াইট হ্যাট হ্যাকাররা বড় বড় কোম্পানি, প্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। সিস্টেম ও নেটওয়ার্কের সব ধরনের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারদের মূল দায়িত্ব।
২) গ্রে হ্যাট হ্যাকার (Grey Hat Hacker)- গ্রে হ্যাট হ্যাকারকে পন্থা অবলম্বনকারী মানুষের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এরা ভালোও করতে পারে আবার খারাপও করতে পারে। এরা যখন কোন সিকিউরিটি সিস্টেমের ত্রুটিগুলি বের করে তখন সে তার নিজের মন মত কাজ করবে, তার মন ওই সময় যেটা চাইবে সেইসময় সে তাই করবে। সে ইচ্ছা করলে ওই সিকিউরিটি সিস্টেমের মালিককে ত্রুটিসমূহ জানাতে পারে অথবা নষ্টও করতে পারে। আবার তা নিজের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করতে পারে।
৩) ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার (Black Hat Hacker)- এরা হল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রকৃতির হ্যাকার। এরা কোন একটি সিকিউরিটি সিস্টেমের ত্রুটিসমূহ বের করে দ্রুত ওই ত্রুটিকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগিয়ে সেই সিস্টেমকে নষ্ট করে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে ভবিষ্যতে নিজে আবার যেন ঢুকতে পারে সেই পথ তৈরি করে রাখে। সর্বোপরি ওই স্থানে যেসব সিস্টেম রয়েছে সেগুলিতেও ঢুকতে চেষ্টা করে। এদের কারণেই সবচেয়ে বেশি সাইবারক্রাইম হয় এবং এরা ইন্টারনেটে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ভাইরাস তৈরি করে থাকে।
3. সাইবার আক্রমণ (Cyber Attack) : সাইবার আক্রমণ হল এক ধরনের ইলেকট্রনিক আক্রমণ যাতে ক্রিমিনালরা ইন্টারনেটের সাহায্যে কারও সিস্টেমে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে ফাইল, প্রোগ্রাম বা হার্ডওয়্যারের ক্ষতি করে থাকে।
4. সাইবার চুরি (Cyber Theft): এই ক্ষেত্রে হ্যাকাররা যেকোন নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকে এবং ইউজারের দেওয়া প্রদত্ত ইনফরমেশনের ডেটাবেসের অনুকপি তৈরি করতে পারে। পরে সেই ইনফর্মেশনগুলি ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে যেকোনো ইউজারের একাউন্ট থেকে তার সমস্ত টাকা নিজ একাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়। সাইবার চুরি দুই ধরনের হয়ে থাকে। এগুলি হল-
ক) ডাটা চুরি (Data Theft)- কোন ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমতি ব্যতীত তথ্য চুরি বা সংগ্রহ করাকে ডাটা চুরি বলা হয়।
খ) ব্যাক্তি পরিচয় চুরি (Identity Theft)- একজনের পরিচয় ব্যবহার করে অন্য কোন ব্যাক্তি কিছু ক্রয় করে তার দায়ভার ওই ব্যক্তির ওপর চাপানোকে ব্যাক্তি পরিচয় চুরি বলা হয়।
5. সময় এবং সম্পদ চুরি (Time and Resource Theft) - অনুমতি ছাড়া কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করাকে টাইম এন্ড রিসোর্স চুরি বলা হয়।
6. সফ্টওয়্যার পাইরেসি (Software Piracy)- প্রস্তুতকারীর বিনা অনুমতিতে কোন সফটওয়্যার কপি করা, নিজের নামে বিতরণ করা, কিংবা কোনো প্রকারে পরিবর্তন করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কার্যক্রমকে সফটওয়্যার পাইরেসি বলে। ওয়ান পিসি লাইসেন্সে একাধিক পিসি চালানো, বেআইনিভাবে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার বা ভাগাভাগি করা সফটওয়্যার পাইরেসির অন্তর্গত।
7. প্লাগিয়ারিজম্ (Plagiarism)- অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া বা বই প্রকাশ করাকে প্লাগিয়ারিজম্ বলে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির কোন সাহিত্য, গবেষণা, সম্পাদনাকর্ম হুবহু বা আংশিক পরিবর্তন করে নিজের নামে প্রকাশ করাই হল প্লাগিয়ারিজম্।
0 Comments: