google.com, pub-5145004260852618, DIRECT, f08c47fec0942fa0 গৃহভাষার বোধ (Understanding Home language)
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

গৃহভাষার বোধ (Understanding Home language)

গৃহভাষার বোধ (Understanding Home language)

 


    শিক্ষা, পরিবেশ, সংস্কৃতি ও বংশগত ঐতিহ্যের তারতম্যের কারণে একই ভাষার অন্তর্গত বিভিন্ন পরিবার বা গৃহে বিভিন্নরকম ভাবে কথা বলার রীতি প্রচলিত রয়েছে। তাই শিশু যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করে সেই পরিবারের কথা বলার ভঙ্গিমা সে অনুকরণ করতে থাকে। 

    শিশু যে গৃহে জন্মগ্রহণ করে এবং যে গৃহের ব্যক্তিবর্গ অর্থাৎ মা, বাবা, আত্মীয়-পরিজন প্রমুখের কাছ থেকে সে যে ভাষা শেখে এবং ভাষা প্রয়োগের যে ভঙ্গিমা বা শৈলী আয়ত্ত করে এবং যার মাধ্যমে সে বাবা, মা, আত্মীয়-পরিজনের সাথে ভাবের আদান-প্রদান করে সেটাই হলো তার গৃহভাষা।


গৃহভাষার প্রকারভেদ (Types of Home language)-


    গৃহভাষার শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারের নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই। কারণ তা মানুষের ইচ্ছা, সংস্কার, আচার-বিচার, শৈথিল্য, আঞ্চলিকতা প্রভৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই কালে কালে গৃহভাষার ধরনের হ্রাসও ঘটতে পারে আবার বৃদ্ধিও ঘটতে পারে। নিম্নে গৃহভাষার কয়েকটি প্রকারের উল্লেখ করা হল- 

১. মনুষ্য সৃষ্ট শব্দ ও গৃহভাষা- ভাষায় ব্যবহৃত কিছু কিছু শব্দ বা ধ্বনি বস্তুর প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়, এগুলির সাথে শব্দের কোন কার্য-কারণ সম্পর্ক থাকে না। গৃহভাষায় ব্যবহৃত এই ধরনের শব্দগুলির মধ্যে পিপি, কাকাই, সোনা, রাঙা ইত্যাদি শব্দ যেগুলি সম্পূর্ণ মনুষ্যসৃষ্ট, এগুলি কেবল গৃহেই ব্যবহৃত হয়। 

২. উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব ও গৃহভাষা- গৃহে ব্যবহৃত ভাষার রীতি অনেক সময় আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষার দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেমন 'ছেলে' শব্দটিকে কোথাও 'ব্যাটা' কোথাও 'ছিলা' আবার কোথাও 'পোলা' হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

৩. ভাষার বিকৃত রূপ ও গৃহভাষা- অনেক সময় গৃহে সঠিক উচ্চারণের অভাবে বা নিরক্ষরতার কারণে কিছু কিছু শব্দের বিকৃত রূপ প্রকাশ পায়। যেমন- ইস্কুল, টেশন, লেহাপড়া, কেমন আসো? ইত্যাদি।

৪. কুসংস্কার ও গৃহভাষা- কুসংস্কার, আচার-বিচার ইত্যাদি অনেক পরিবারের গৃহভাষার উপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন- 'কলা' কে অনেকে কুসংস্কারবশত 'পাকা' বলে আবার 'পান' কে অনেকে 'বোঁটা' বলে। 

৫. বিশেষ স্বর বা টানের ব্যবহার ও গৃহভাষা- ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বভাববশত বা মুদ্রাদোষের কারণে অনেক পরিবারের মধ্যে বিশেষ স্বর বা টানের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই ধরনের পরিবারের মধ্যে যে শিশু জন্মগ্রহণ করবে তার গৃহভাষায় এই টানের প্রভাব থাকবে। 

৬. আদর্শ ভাষার সমগোত্রীয় গৃহভাষা- শহরাঞ্চলে বা শিক্ষিত পরিবারের মানুষজনদের গৃহভাষা অনেক উন্নত হয় অর্থাৎ অনেকটা আদর্শ ভাষার মতো আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আদর্শ ভাষা হয়ে থাকে। 


গৃহভাষার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Home language)-


ক) গৃহভাষায় কোন নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে না, যেকোন ব্যক্তি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী এটিকে ব্যবহার করতে পারে। 

খ) গৃহভাষা শিশুর বা ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত আত্মপ্রকাশের মাধ্যম। 

গ) গৃহভাষায় আঞ্চলিকতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। 

ঘ) একটি পরিবারের অন্তর্গত সকল ব্যক্তি একইরকম গৃহ ভাষা ব্যবহার করে থাকে। 

ঙ) শিক্ষা গৃহভাষায় পার্থক্যের সৃষ্টি করে। 

চ) গৃহভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিশ্র প্রকৃতি পরিলক্ষ্যিত হয়। 

ছ) গৃহে যে ভাষা মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করে তা অন্যত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তি অনেকসময় সংকোচ বোধ করে। 

জ) গৃহভাষা হল ভাষার মৌখিক রূপ, লেখার ক্ষেত্রে এটি তেমনভাবে ব্যবহৃত হয় না। 

ঝ) গৃহভাষা কোন বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। 


গৃহভাষার গুরুত্ব (Importance of Home language)- 


    গৃহভাষা যেকোন ব্যক্তির জীবনে তার শেখা প্রথম ভাষা। তাই এই ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে গৃহভাষার কতগুলি গুরুত্ব উল্লেখ করা হল-

i) গৃহভাষা শিশুর প্রথম শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী এবং সহায়ক। 

ii) গৃহ ভাষার দক্ষতা শিশুকে বহুভাষা শিখনে সহায়তা করে। 

iii) প্রাচীন ও আধুনিক সংস্কৃতি রক্ষায় গৃহভাষার জুড়ি মেলা ভার। 

iv) গৃহভাষা শিশুকে পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে। 

v) শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশে গৃহভাষা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। 

vi) গৃহভাষা পারিবারিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ জাগ্রত করে এবং পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। 

vii) গৃহভাষা ব্যক্তির অন্তর্নিহিত বক্তব্য প্রকাশের স্বাভাবিক মাধ্যম, এই ভাষায় বক্তব্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তির শান্তি ও তৃপ্তি অনুভূত হয়। 



0 Comments: