Thorndike's Trial and Error theory of Learning [থর্নডাইকের (প্রচেষ্টা ও ভুল) শিখনের তত্ত্ব]
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

Thorndike's Trial and Error theory of Learning [থর্নডাইকের (প্রচেষ্টা ও ভুল) শিখনের তত্ত্ব]

Thorndike's Trial and Error theory of Learning [থর্নডাইকের (প্রচেষ্টা ও ভুল) শিখনের তত্ত্ব]

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী Edward Lee Thorndike (1874-1949) আমেরিকা তথা সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তিনি জেনেটিক সাইকোলজি, টেস্টিং এন্ড স্যোশাল সাইকোলজি এবং শিখন তত্ত্বের উপর গবেষণায় বিশ্ববাসীর কাছে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন।

  





    1913 সালে থর্নডাইক তাঁর শিখন তত্ত্বের উপাদানে বলেছেন প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রে উদ্দীপনা ও প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সংযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি এই সংযোগগুলি S (Stimulas) ও R (Response) শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করেছেন। তিনি তার তত্ত্বে লিখেছেন- "Learning is connecting, the mind is man's connection system". অর্থাৎ শিখন হল সংযোগ আর মানুষের মন হল সেই সংযোগের ব্যবস্থা।


পরীক্ষা:- থর্নডাইক একটি ক্ষুধার্ত বিড়ালের উপর পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর তত্ত্বের ব্যাখ্যা করেছেন। প্রথমে একটি ক্ষুধার্ত বিড়ালকে খাঁচার মধ্যে এমন ভাবে রাখা হল যেন বিড়ালটি খাঁচার মধ্যে থেকে বাইরে রাখা খাবার দেখতে পায়। এবার খাঁচার দরজাতে এমনভাবে একটি ছিটকানি লাগানো হল যা অল্প চাপ দিলেই খুলে যায়। প্রথমে বিড়ালটি খাঁচা থেকে বেরিয়ে খাবারের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্নভাবে বারবার চেষ্টা করতে শুরু করে। এইভাবে উদ্দেশ্যহীনভাবে ছোটাছুটি করতে করতে হঠাৎ করে ছিটকানিতে চাপ পড়ে দরজা খুলে যায় এবং বিড়ালটি খাবারটি খেতে পারে। দ্বিতীয় দিনেও আবার বিড়ালটিকে একইভাবে খাঁচায় বন্ধ করে খাবার দিলে দেখা যায় বিড়ালটি আবার বিচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা করতে করতে দরজাটি খুলে খাবারের কাছে পৌঁছায় এবং দেখা যায় প্রথম দিনের তুলনায় কম ভুল প্রচেষ্টায় এবং কম সময়ে খাবারের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। এইভাবে রোজ ঘটনাটি ঘটালে দেখা যায় প্রতিবার ভুল প্রচেষ্টার সংখ্যা কমছে এবং একদিন দেখা যায় বিড়ালটি প্রথমবারের প্রচেষ্টাতেই দরজাটি খুলতে পারছে। 




    থর্নডাইকের মতে শিখন প্রক্রিয়া প্রচেষ্টা ও ভুল পদ্ধতি (Trial and Error)-র মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। শিক্ষার্থীর কাছে যখন কোন সমস্যার প্রস্তুত সমাধান থাকে না তখন সে প্রথমে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্নরকম চেষ্টা করে ও বার বার ভুল করে। এইভাবে বারংবার চেষ্টা করতে করতে একসময় সে সমস্যাটির সমাধান করতে পারে। তাই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ ত্রুটি বা অপ্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়াগুলি বাদ দিয়ে সঠিক প্রচেষ্টা গ্রহণই হল শিখনের সর্বোত্তম উপায়।


সূত্র:- থর্নডাইকের শিখনের সূত্রগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-


1) প্রস্তুতির সূত্র (Law of Readiness)- উদ্দীপক ও তার উপযোগী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যক্তির মধ্যে দৈহিক প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। দৈহিক প্রস্তুতি থাকলে যে কোন ব্যক্তির পক্ষে কর্মসম্পাদন করা তৃপ্তিদায়ক হবে। তার যদি এই ধরনের প্রস্তুতি না থাকে তবে কাজটি তার কাছে বিরক্তিকর মনে হবে।


2) অনুশীলনের সূত্র (Law of Exercise)- শিখন পরিস্থিতিতে অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত রেখে কোন উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যদি বারবার সংযোগ স্থাপিত হয় তবে সেই সংযোগ দীর্ঘ হয়। অন্যদিকে যদি কোন উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দীর্ঘ সময়ের কোন সংযোগ স্থাপিত না হয় তবে সেই সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে।


3) ফললাভের সূত্র (Law of Effect)- উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হলে সেই সংযোগের ফল যদি প্রাণীর কাছে তৃপ্তিদায়ক হয় তবে সেই সংযোগ দৃঢ় হয়, আবার সংযোগ ফলটি যদি প্রাণীর কাছে বিরক্তিকর হয় তবে সেই সংযোগ দুর্বল হয়।


4) মানসিক অবস্থার সূত্র (Law of Mental set, attitude or disposition)- শিখনের জন্য দৈহিক প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতি ও প্রয়োজন। মানসিক অবস্থা হল ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ এক ক্রিয়াশীল তন্ত্র যা তাকে যেকোন কাজে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করে বিশেষ ধরনের প্রতিক্রিয়া করতে সাহায্য করে। 


5) আংশিক প্রতিক্রিয়ার সূত্র (Law of partial activity)- প্রাণীরা সামগ্রিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে প্রতিক্রিয়া করে না। তারা ভিন্ন ভিন্ন আংশিক পৃথক পৃথক প্রত্যক্ষ করে এবং একটি বিশেষ অংশের প্রতি প্রতিক্রিয়া করে প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে।


6) বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সূত্র (Law of Multiple Response)- মানুষ বা অন্য যে কোন প্রাণী যখন কোন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয় তখন তারা সম্ভাব্য সব রকম উপায়ে সমাধানের চেষ্টা করে অর্থাৎ নতুন সমস্যার সমাধানে বহুমুখী প্রতিক্রিয়া করে।


7) সাদৃশ্যের সূত্র (Law of Assimilation or Analogy)- যে অবস্থায় অভিযোজন করার মত আমাদের অর্জিত প্রতিক্রিয়া জানা নেই সেরকম অবস্থার সম্মুখীন হলে আমাদের পূর্বের কোন অভিজ্ঞতার সঙ্গে কোন আংশিক মিল খুঁজে বের করি এবং পূর্বে ঠিক যেভাবে প্রতিক্রিয়া করেছিলাম সেই ভাবে প্রতিক্রিয়া করে থাকি। 


8) অনুষঙ্গমূলক সঞ্চালনের সূত্র (Law of Association shifting)- কোন উদ্দীপকের সাথে স্বাভাবিকভাবে যুক্ত কোন প্রতিক্রিয়াকে অন্য কোন উদ্দীপকের সঙ্গে সংযোজিত করা যায়। 



এই তত্ত্বের শিক্ষাগত তাৎপর্য:-


১) প্রস্তুতির সূত্র- শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি কোন প্রস্তুতি না থাকে তাহলে শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদান এই দুটি কাজই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। যে শিখনে শিক্ষার্থী আদৌ দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে প্রস্তুত নয়, সেই শিখন সার্থক হবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষক/শিক্ষিকা মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপনের পূর্বে বিষয় সম্পর্কিত অন্যান্য আলোচনা শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা সৃষ্টিতে সাহায্য করবে। 


২) অনুশীলনের সূত্র- 

i. শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে বিষয় গুলির উপস্থাপন জানা থেকে অজানা দিকে হয়। 

ii. শিক্ষাদানের সময় শিক্ষক জটিল ও নতুন বিষয়গুলি বারবার চর্চা বা একাধিকবার আলোচনা করবেন। 

iii. অব্যবহারের সূত্রের মাধ্যমে ভুল ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলি যাতে পরিত্যাগ করা যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। 

iv. থর্নডাইকের মতে নিম্নশ্রেণিতে অনুশীলনের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা উচিৎ। 


৩) ফললাভের সূত্র- 

i. কোন শিক্ষণীয় বিষয় যদি শিক্ষার্থীর কাছে তৃপ্তিদায়ক মনে হয় তাহলে শিক্ষার্থী সেই বিষয় শিখতে বেশি আগ্রহী হয় এবং সেই শিখন দীর্ঘস্থায়ী হয়।

ii. শিক্ষার্থীরা যদি দৈনন্দিন জীবনের সাথে শিক্ষণীয় বিষয়ের মধ্যে মিল খুঁজে পায় তাহলে তাদের মধ্যে শিখনের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে এবং শিখনের ফল স্থায়ী হবে।

iii. পুরস্কারের দ্বারা শিক্ষার্থীদের শিখনে উৎসাহিত করতে হবে। পুরস্কার শিক্ষার্থীদের ধনাত্মক প্রতিক্রিয়া (Positive feedback) প্রদান করে ফলে তারা শিক্ষাগ্রহণে আরও বেশি আগ্রহী হয়।

iv. পাঠ্যবিষয় যেন শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক ক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।



৪) মানসিক অবস্থার সূত্র- মানসিক অবস্থা হল ব্যক্তির আভ্যন্তরীণ এক ক্রিয়াশীল তন্ত্র। যা তাকে যে কোন কাজে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করে বিশেষ ধরনের প্রতিক্রিয়া করতে সাহায্য করে। এটি শিক্ষার্থীদের প্রেষণা, আগ্রহ, প্রক্ষোভ, বুদ্ধি, স্মৃতি ইত্যাদি শিখনে সহায়তা করে। 


৫) আংশিক প্রতিক্রিয়ার সূত্র- শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অংশকে পৃথকভাবে প্রত্যক্ষণ করে এবং একটি বিশেষ অংশের প্রতি প্রতিক্রিয়া করে প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিক্ষালাভ করে।


৬) বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সূত্র- শিক্ষার্থীদের যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য বারবার সুযোগ দিতে হবে। যাতে তারা নিজেদের ভুলগুলি বুঝতে পেরে নিজেরাই সেগুলি সংশোধনের চেষ্টা করে।


৭) সাদৃশ্যের সূত্র- শিক্ষার্থী যখন একটি নতুন বিষয় পড়বে তখন পুরনো ধারণার সাথে ওই বিষয়টির সাদৃশ্য খুঁজে দিতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীকে জানা থেকে অজানার জ্ঞানের দিকে নিয়ে যেতে হবে।


৮) অনুষঙ্গমূলক সঞ্চালনের সূত্র- শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় জীবনে যেসব শিখন সহায়ক অভ্যাস, মনোভাব, আগ্রহ ইত্যাদি অর্জন করে পরবর্তীকালে তা বৃহত্তর জীবনেও প্রয়োগ করতে পারবে। 


স্কিনারের সক্রিয় অনুবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

0 Comments: