google.com, pub-5145004260852618, DIRECT, f08c47fec0942fa0 শিক্ষা সমাজবিদ্যা (Educational Sociology)
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

শিক্ষা সমাজবিদ্যা (Educational Sociology)

শিক্ষা সমাজবিদ্যা (Educational Sociology)


সমাজ হল এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে মানুষ কোন সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে জীবনযাত্রা নির্বাহ করার জন্য প্রকৃতির সঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে এবং একে অপরের সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বজায় রেখে একত্রিত হয়।


বিজ্ঞান হল কোন একটি বিষয় সম্পর্কে সুনিয়ন্ত্রিত চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণাপ্রসূত জ্ঞানভান্ডার। অর্থাৎ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বিষয়সমূহের শৃঙ্খলিত জ্ঞানই হল বিজ্ঞান।


উৎপত্তি- ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী অগাষ্ট কোঁৎ ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম sociology শব্দটির উদ্ভাবন করেন। sociology শব্দটি ল্যাটিন শব্দ socius, যার অর্থ সমাজ ও গ্রীক শব্দ Logos, যার অর্থ বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান- এই দুই শব্দ থেকে উদ্ভুত হয়েছে।


সমাজতত্ত্ব-


    ফরাসি চিন্তাবিদ অগাস্ট কোঁৎ (Comte) সর্বপ্রথম সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকাঠামো রচনাসূত্রে স্বতন্ত্র তত্ত্বশাস্ত্র হিসেবে সমাজতত্ত্ব কথাটিকে তাঁর সামাজিক পদার্থবিদ্যা নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন। পরবর্তীকালে Positive Philosophy নামক গ্রন্থে সেটির নাম পরিবর্তন করে সমাজতত্ত্ব (Sociology) শব্দটির প্রবর্তন করেন। তাঁর মতে সমাজবিজ্ঞান হল বিজ্ঞানের প্রয়োগমূলক দিক।


মরিস জিন্সবার্গ মনে করেন, সমাজতত্ত্ব হল মানুষের সকল পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও পারস্পরিক সম্পর্ক এবং তাদের সব অবস্থা ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা। 


গিডিংস বলেছেন, সমাজবিজ্ঞান হল মানুষের মানসিক সংযোগের বিজ্ঞান। সমাজতত্ত্ব বিশেষভাবে কার্যকারণ সম্পর্কিত সামাজিক সংগঠনগুলির ব্যাখ্যা, মানুষের ক্রিয়াকলাপ, সমাজের আঙ্গিক সামঞ্জস্যবিধান, শক্তি সংরক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক তাৎপর্য নিরূপণের বিজ্ঞান। 


অধ্যাপক ম্যাকাইভার এবং পেজ মনে করেন সমাজবিজ্ঞানের অনুশীলনের বিষয়বস্তু মানুষের সামাজিক সম্পর্কের সামগ্রিক রূপ। 


বিশিষ্ট সমাজতাত্ত্বিক অ্যান্থনী গিডেনস বলেন, সমাজতত্ত্ব হল মানুষের সামাজিক জীবনধারা, গোষ্ঠী ও সমাজের পর্যালোচনা, সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের আচরণবিধিকে তুলে ধরা। 


কার্ল মার্কস মনে করেন, বৈষয়িক উৎপাদন, শ্রেণী সংগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পরীক্ষার ফলে সমগ্র সমাজে যে সকল সম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং যে সকল জ্ঞান ও বিশ্বাসের উৎপত্তি হয় তাদের সকল কার্যক্রমের আলোচ্য বিষয়ই হল সমাজতত্ত্ব। 


সমাজবিজ্ঞান-


 যে বিজ্ঞান মানুষের যাবতীয় পারস্পরিক সম্পর্ক, সাংগঠনিক প্রকাশ, কার্যপ্রক্রিয়া, সমস্যা নিরূপণ, সামাজিক বিবর্তন ও প্রগতি, সামাজিক মূল্য বিচার ও নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুশীলন ও বিশ্লেষণ করে তাকেই সমাজবিজ্ঞান বলে।


সমাজবিজ্ঞান/সমাজতত্ত্বের অন্তর্নিহিত বিষয়

  • সমাজের বিজ্ঞান
  • সমাজের পারস্পারিক সম্পর্কের বিজ্ঞান। 
  • সামাজিক জীবনধারার অধ্যয়ন। 
  • গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ মানবীয় আচরণবিধির অধ্যয়ন। 
  • সামাজিক সম্পর্ক গঠনের বিজ্ঞান। 


Émile Durkheim এর মতে সমাজতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়-


সামাজিক অঙ্গ সংস্থানগত বিদ্যা (Social Morphology)- ভৌগোলিক অবস্থান বা জনসংখ্যার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পরিবেশের অন্যান্য প্রভাবের প্রকৃতি, ব্যাপকতা ও গভীরতার সঙ্গে সামাজিক সংগঠনের সম্পর্ক আলোচনা।


সামাজিক শারীরবিদ্যা (Social Physiology)- সমাজের প্রচলিত আচার অনুষ্ঠান, ধর্ম, আইন, নীতি, ভাষা, রাজনীতি প্রভৃতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উৎস ও প্রকৃতি। 


সাধারণ সমাজতত্ত্ব (General Sociology)- সমাজের বিভিন্ন ব্যবস্থাগুলি কীভাবে একে অপরকে প্রভাবিত করে বা অন্য কোন যোগসূত্র দেখা যাচ্ছে কিনা তার বিচার করা। 


সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারার প্রধান মতবাদ-


(১) জীববিজ্ঞানের মতবাদ- সমাজবিজ্ঞানের প্রাথমিক ভিত্তি অবশ্যই জীববিজ্ঞান। জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সমাজ নির্দিষ্ট শ্রেণীর প্রাণী দ্বারা সংগঠিত। মানুষের দেহ মন বিবর্তনের রূপরেখা নির্দেশ করে জীববিজ্ঞান। মানব জীবনের দেহ মনের বিবর্তনের বর্ণনায় হার্বার্ট স্পেন্সর বলেছেন- সমাজ একটি দেহ বিশেষ এবং প্রত্যেক ব্যক্তি এই সমাজ দেহের একটি কোষ। দেহের কোষগুলি যেমন বিভিন্ন প্রকার কাজে নিয়োজিত থাকে, তেমনি জনসমষ্টির মধ্যে ব্যক্তিকেও নানান ভূমিকা পালন করতে হয়। কোষগুলি যেমন দেহের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করে তেমনি সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকেও সমাজের সঙ্গে যথাযথ সম্পর্ক রেখে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারণ সমাজের একক হল জীবন্ত প্রাণী।


    স্পেন্সার ডারউইনের বিবর্তনবাদের নীতিগুলিকে, যেমন- পরিবর্তনশীলতার নীতি, অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম, যোগ্যতমের নির্বাচন ও টিকে থাকার সংগ্রাম ইত্যাদি নীতিকে সমাজতাত্ত্বিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। এছাড়া জীবিজ্ঞানের জাতিসত্তা তত্ত্ব সমাজ গঠনের বিভিন্ন উপাদানের ব্যাখ্যা দেয়। যেমন- জাতি, বংশগতি ইত্যাদি। 


(২) মনস্তাত্ত্বিক মতবাদ- মনোবিদ্যা মানব আচরণ সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান। আর আচরণের স্বরূপ সমাজের একটি মৌলিক উপাদান। তাই মনোবিদ্যা ও সমাজতত্ত্ব নিবিড় বন্ধনে যুক্ত। একে অপরের পরিপূরক। সমাজবদ্ধ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, দৃষ্টিভঙ্গি, হৃদয়াবেগ, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদি সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মনোবিদ্যা। মানব ব্যক্তিত্ব বিকাশে ব্যক্তির আচরণের স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে মনোবিদ্যা, অপরপক্ষে মানুষের সম্পর্ক অনুসন্ধান করে সমাজতত্ত্ব।


 সামাজিক মনস্তত্ত্ব হল ব্যক্তি চরিত্র এবং সমাজ কাঠামোর অন্তর্গত পারস্পরিক সম্পর্কের আলোচনা। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির মিথস্ক্রিয়ার আলোচনা। চিন্তা, অনুভূতি, সেন্টিমেন্ট ও অভ্যাসসমূহকে কীরূপে প্রভাবিত করে তার বিচার বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে সমাজ মনস্তত্ত্ব।


(৩) ভৌগলিক মতবাদ- সমাজের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ভৌগোলিক পরিবেশ। মানব সম্পর্ক বিকাশ ও সংঘবদ্ধ জীবন যাপনের জন্য মানুষের একটি ভৌগোলিক অবস্থান আবশ্যক। ভৌগোলিক অবস্থানের বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট জনবসতির সামাজিক জীবন এবং শিক্ষাকে প্রভাবিত করে। 


    ভৌগোলিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত জল-স্থল, পাহাড়-পর্বত, খনিজ পদার্থ, উদ্ভিদ-প্রাণী, অন্তরীক্ষ, মাধ্যাকর্ষণ, বিদ্যুৎ' তেজস্ক্রিয় পদার্থ যা পৃথিবীর উপর ক্রিয়াশীল এবং মানবজীবনকে প্রভাবিত করে। এই ভৌগোলিক পরিবেশ এবং সামাজিক জীবনের সম্পর্ক থেকেই ভৌগোলিক সমাজতত্ত্বের উদ্ভব। মানব সমাজের উপর ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব অসীম। মানুষের সমাজ জীবন এবং ভৌত পরিবেশের প্রকৃত মিথস্ক্রিয়া মানুষের অনন্ত সম্ভাবনার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


    মানবদেহের গঠন, কর্মক্ষমতা, নৈপুণ্য, খাদ্যাভ্যাস, আচার-অনুষ্ঠান, পোশাক পরিচ্ছদ, বৃত্তি, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিশেষভাবে ভৌগলিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়।

0 Comments: