
বি.এড দ্বিতীয় সেমিস্টার সংস্কৃত মেথডের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
(1) ভারতবর্ষে কতগুলি গদ্যকাব্য আছে?
উত্তর- আচার্য দণ্ডী তার কাব্যাদর্শ গ্রন্থে গদ্যর লক্ষণ প্রসঙ্গে বলেছেন- “আপাদঃ পদসন্তানো গদ্যম্”- অর্থাৎ, যে পদ সমষ্টি পাদ বা চরণে গ্রথিত নয়, তাই গদ্যকাব্য নামে পরিচিত। আবার বিশ্বনাথ কবিরাজের মতে, যে কাব্যে বৃত্ত বা ছন্দের লেশমাত্র থাকে না তাকে গদ্যকাব্য বলে। সংস্কৃত আলঙ্কারিকগণ গদ্যকাব্যের যে দুটি শ্রেণীবিভাগ কল্পনা করেছেন, তার একটি ঐতিহাসিক তথা বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে 'আখ্যায়িকা' এবং অপরটি কাল্পনিক কাহিনী অবলম্বনে 'কথা'। সংস্কৃত গদ্যকাব্যের জগতে দণ্ডীর “দশকুমারচরিতম্”, সুবন্ধুর “বাসবদত্তা” এবং বানভট্টের “হর্ষচরিত” ও “কাদম্বরী” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
(2) সংস্কৃত ভাষা শিক্ষণের দুটি প্রজ্ঞামূলক তাৎপর্য লিখুন।
উত্তর- অনেক সময় আমাদের কেউ ডাকলে আমরা তা শুনতে পাই এবং তারপর উত্তর দিই। ঘটনাক্রমে, অবচেতনভাবে আমাদের মস্তিষ্কে বা চিন্তায় একটি প্রক্রিয়া ঘটে। এই প্রক্রিয়াটি হল প্রজ্ঞাবাদ বা প্রজ্ঞামূলক তত্ত্ব। Mergel-এর মতানুসারে আচরণের পশ্চাতে থাকা চিন্তনভিত্তিক একটি প্রক্রিয়া হল প্রজ্ঞাবাদ।
প্রজ্ঞামূলক তাৎপর্য-
ক) প্রজ্ঞাবাদ শিশুর সচেতন চিন্তার উপর আলোকপাত করে।
খ) প্রজ্ঞাবাদের সংবেদন, প্রত্যক্ষণ, মনোযোগ ও স্মৃতি নীতিগুলি অনুসরণ করলে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষণ অনেক সহজ হয়।
(3) সংস্কৃত ভাষা শিক্ষণের জন্য দুটি সংস্কৃত সহায়কগ্রন্থের নাম লিখুন।
উত্তর- গবেষণা ও লেখাপড়ার কারণে পাঠকদের উপকারের জন্য ব্যবহৃত গ্রন্থই হল সহায়ক গ্রন্থ। সহযোগী/সহায়ক পুস্তক বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যেমন—অভিধান, কোশগ্রন্থ, বর্ষপঞ্জি, জীবনীমূলক অভিধান, শিক্ষামূলক সহায়ক গ্রন্থ, গ্রন্থপঞ্জি, পত্রিকা ইত্যাদি। সংস্কৃত ভাষার সহায়ক পুস্তকগুলির মধ্যে অন্যতম হল অভিধান ও কোশগ্রন্থ। অন্যান্য ভাষার মত সংস্কৃত ভাষাতেও প্রাচীনকাল থেকেই কোশগ্রন্থের ব্যবহার চলে আসছে। সংস্কৃত ভাষার উল্লেখযোগ্য অভিধান হল— বামন শিবরাম আপ্টে রচিত 'The Students' English- Sanskrit Dictionary' এবং 'সংস্কৃত হিন্দি কোশ'।
সংস্কৃত সাহিত্যের প্রধান কয়েকটি কোশগ্রন্থ হল- যাস্কের 'নিরুক্ত', অমরসিংহ রচিত 'অমরকোশ', মেদিনীকার রচিত 'মেদিনী কোশ', কেশব রচিত 'শব্দকল্পদ্রুমকোশ' ইত্যাদি। মৌখিক কার্যের ক্ষেত্রে কোশগ্রন্থের বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় প্রচলিত সর্বাধিক জনপ্রিয় পত্রিকা 'সম্ভাষণ সন্দেশঃ' রাষ্ট্রিয় সংস্কৃত সংস্থান থেকে প্রকাশিত, পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত সংস্কৃত পত্রিকা 'সত্যানন্দম', 'সংস্কৃত সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা' ইত্যাদি। এগুলি ছাড়াও রয়েছে আন্তর্জাতিক পত্রিকা (বিশ্ববাণী) এবং অনলাইনের সহজপ্রাপ্য অনেক পত্রিকা যেগুলি পাঠ্য বই-এর পাশাপাশি শিক্ষক/শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীর বিশেষ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
(4) সংস্কৃত ভাষা অভীক্ষার দুটি নীতি লিখুন।
উত্তর- সংস্কৃত ভাষা অভীক্ষার নীতিগুলি নিম্নরূপ-
ক) পূর্বজ্ঞান অভিজ্ঞতার নীতি : শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞানের অভিজ্ঞতা বিচার করেই শিক্ষক/শিক্ষিকা অভীক্ষাপত্র নির্মাণ করবেন, কারণ পূর্বে কোন বিষয় না জানা থাকলে সেই বিষয়ের উপর অভীক্ষা গঠন নিরর্থক। এ ব্যাপারে শিক্ষক/শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থী উভয়কেই নির্দিষ্ট শ্রেণির পাঠ্যসূচী সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয় ।
খ) উৎসাহপ্রদানের নীতি : অভীক্ষার প্রশ্নপত্র নির্মাণের সময় সংস্কৃত শিক্ষক/শিক্ষিকা সর্বদা মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করবেন। অর্থাৎ প্রশ্নপত্রের ক্রম ‘সরল থেকে জটিল' অনুসারে পর্যায়ক্রমে বিভাজন করবেন যাতে সংস্কৃত ভাষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও আকর্ষণ বর্ধিত হয়।
গ) স্পষ্ট নির্দেশনার নীতি : অভীক্ষার প্রশ্নপত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত নির্দেশাবলী যাতে সুস্পষ্ট, সহজবোধ্য ও ভাষা সরল হয় সেদিকে পরীক্ষককে (শিক্ষক/শিক্ষিকা) খেয়াল রাখতে হবে নচেৎ শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তির মুখে পড়বে।
ঘ) অভীক্ষার উদ্দেশ্যের নীতি : পাঠ্যসূচির অন্তর্গত সমস্ত বিষয়ের উপর অভীক্ষা নির্মাণ হয় না, কেবলমাত্র শিখনের বিবিধ উদ্দেশ্যগুলির ভিত্তিতেই অভীক্ষা গঠন করা হয়।
(5) কতগুলি ভারতীয় লিপির নাম লিখুন।
উত্তর- সিন্ধুলিপিকে বাদ দিলে ভারতের আদি লিপি ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী। বহু বছর আগে থেকেই এই দুই লিপিতে লেখা অজস্র নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে – এদেশের প্রাচীন মুদ্রায়, ধাতু নির্মিত পাত্রে, পাহাড়ে, পাথরের ফলকে এবং স্তম্ভের গায়ে এগুলি পাওয়া গেছে। এছাড়াও সিদ্ধমাতৃকা, শারদা, গৌড়ী এবং বিভিন্ন দক্ষিণ ভারতীয় লিপির সন্ধান পাওয়া গেছে।
(6) সংস্কৃত ভাষা শিক্ষণের আচরণগত বৈশিষ্ট্য লিখুন।
উত্তর- যে-কোনো শ্রেণিতে পাঠ্যান্তর্গত যে পাঠ-এককেরই পঠন পাঠন করা হোক না কেন, সেই পাঠ্য বিষয়ের পাঠদানের মধ্যে দিয়ে শিক্ষক/শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে যে আচরণের পরিবর্তন প্রত্যাশা করেন, তা ব্যক্ত করাই হল আচরণগত শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য—একথা আগেই বলা হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েরই এই উদ্দেশ্য থাকা প্রয়োজনীয়। শিক্ষাবিজ্ঞানসম্মত বিষয়-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে শিক্ষক/শিক্ষিকা নির্দিষ্ট বিষয়টি পঠন পাঠনের সেই উদ্দেশ্যগুলি যথাযথভাবে নির্ধারণ করে সেগুলির উল্লেখ করবেন।
শিক্ষাবিদ বেঞ্জামিন ব্লুমের Taxonomy অনুসারে শিক্ষামূলক আচরণ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত থাকে, শিক্ষাবিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকে 'মাত্রা' (Domain) বলা হয়। সেগুলি হল-
(ক) জ্ঞানমূলক মাত্রা (Cognitive Domain)
(খ) অনুভূতিমূলক মাত্রা (Affective Domain)
(গ) মনঃসঞ্চালক মাত্রা (Psychomotor Domain)
(7) ভাষা ও উপভাষার দুটি পার্থক্য লিখুন।
উত্তর- ভাষা ও উপভাষার পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ-
১। যে ধ্বনি মানুষের বাক্ যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত হয় এবং যার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা হয় তাকে ভাষা বলে। অন্যদিকে বৃহৎ অঞ্চলে প্রচলিত কোনো ভাষা অঞ্চলভেদে যে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে, ভাষার সেই আঞ্চলিক রূপভেদগুলিকে উপভাষা বলে।
২। ভাষা একটি বৃহৎ অঞ্চলে প্রচলিত। অন্যদিকে উপভাষা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অঞ্চলে প্রচলিত।
৩। ভাষার একটি সার্বজনীন আদর্শ রূপ থাকে। অন্যদিকে উপভাষা সেই আঞ্চলিক ভাষার রূপ।
৪। ভাষায় রচিত হয় সাহিত্য কীর্তি। অন্যদিকে উপভাষায় রচিত হয় লোকগীতি ও লোকসংগীত।
৫। ভাষার নিদিষ্ট ব্যাকরণ থাকে। অন্যদিকে উপভাষার নিদিষ্ট কোন ব্যাকরণ থাকে না।
(8) সংস্কৃত ভাষা শিক্ষণের চারটি তত্ত্ব লিখুন।
উত্তর- আধুনিককালে ভাষাশিক্ষণ পদ্ধতি বহুলাংশে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। প্রাচীন ভাষা শিক্ষণ পদ্ধতি আধুনিক শিক্ষার সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নবরূপ পরিগ্রহ করেছে। ভাষার সঠিক জ্ঞান প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য আবশ্যক। ভাষাশিক্ষণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পঠন বা লিখন নয়, শ্রবণ এবং বাচনও সমান গুরুত্ব পেয়েছে। বর্তমানে ভাষাশিক্ষণের ক্ষেত্রেও মনোবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের প্রয়োগ হচ্ছে। মনোবিজ্ঞানের সিদ্ধান্তের প্রয়োগের ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে ভাষা-শিক্ষণ অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য এবং প্রাঞ্জল হয়ে উঠেছে। ভাষাশিক্ষণের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের যে চারটি তত্ত্ব প্রযুক্ত হয় সেগুলি হল :
(ক) আচরণমূলক তত্ত্ব (Behaviourist Theory)
(খ) প্রজ্ঞামূলক তত্ত্ব (Cognitivist Theory)
(গ) মিথস্ক্রিয়ামূলক তত্ত্ব (Interactionist Theory)
(ঘ) গঠনমূলক তত্ত্ব (Constructivist Theory)
(9) তৃতীয় ভাষা হিসেবে সংস্কৃত শিক্ষণের দুটি নীতি লিখুন।
উত্তর- সংস্কৃত ভাষা বিভিন্ন তৃতীয় ভাষার মধ্যে অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় ভাষারূপে সংস্কৃতের প্রতিষ্ঠা সুদৃঢ় করতে হলে যেটি প্রয়োজনে তা হল আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বনে সংস্কৃত ভাষার শিক্ষাদান করা, যাতে শিক্ষার্থীরা সংস্কৃত ভাষার কাঠিন্যের ভীতি মন থেকে দূরে সরিয়ে অপ্রয়োজনীয়তার গুজবে কর্ণপাত না করে সংস্কৃত ভাষার স্বাতন্ত্র্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে শ্রদ্ধাপূর্ণ হৃদয়ে সচেতন হয়।
তৃতীয় ভাষা হিসেবে সংস্কৃত শিক্ষণের দুটি নীতি-
ক) সংস্কৃতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি- তৃতীয় ভাষারূপে সংস্কৃতের প্রাথমিক জ্ঞানের সাহায্যে ভারতীয় সংস্কৃতির উত্তরাধিকারে ছাত্রকে চিরজীবনের মতো আগ্রহী করে তোলার কাজে ভিত্তি স্থাপন করে।
খ) সংস্কৃত সাহিত্যের রসাস্বাদন-সংস্কৃত ভাষার কাব্যগুণ, পদলালিত্য, শ্রুতিমাধুর্য, সুষম ছন্দ এর বিদগ্ধ কিন্তু সংহত প্রকাশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে সচেতন করা।
0 Comments: