
শিখন পদ্ধতি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি শিক্ষার্থীদের পঠন, চিন্তন, বর্ণন, ব্যাখ্যা এবং সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে ঘটে থাকে। আর যদি শিক্ষার্থীরা এখানে নিষ্ক্রিয় থাকে তাহলে তাদের কাছ থেকে অধিক শিখন একেবারেই আশান্বিত নয়। এক্ষেত্রে কোন শিক্ষামূলক উপদেশদাতার প্রধান ভূমিকা হল কোন শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা অথবা সংগণকাধারিত মাধ্যম প্রত্যেকের শিখন কার্যাবলীর কর্মদক্ষতাকে উদ্দীপিত করা যাতে ধীরে ধীরে শিখন উদ্দেশ্যের ফলাফলের প্রাপ্তি ঘটে। উপদেষ্টা এখানে শিখনের কার্যাবলীতে সংজ্ঞায়িত করবেন, প্রসঙ্গ প্রদান করবেন এবং শিখন সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সমর্থন করবেন এছাড়া তাদের প্রাপ্ত ফলাফলের ধনাত্মক প্রতিক্রিয়া প্রদান করবেন। শিক্ষা সম্বন্ধীয় বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে ক্রমানুসারে শিক্ষার্থীর শিখন উদ্দেশ্যকে ক্রমান্বয়ে সফল করতে সঠিক সম্পদের প্রয়োগ এবং সহযোগী কৌশল বা পদ্ধতির ব্যবহার যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয় তাকে শিখন নক্শা/অধিগম প্রারূপম্ বলে।
শিখন নকশা শিক্ষা পদ্ধতির বর্ণনা করে। কেবলমাত্র একটি কার্যধারার বর্ণনাই নয়, সমগ্র শিক্ষণ/শিখন অভিজ্ঞতার বিবরণ এখানে পাওয়া যায়। এটি কমবেশি শিক্ষাসম্বন্ধীয় চিত্রনাট্যের নিয়মপূর্বক বিশ্লেষণ করে। শিখন নক্শায় শিখন কার্যের এককের ছক নির্মাণের মাধ্যমে শিখনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়।
Grainne Conole & Koren Fill-এর শিখন নকশার সংজ্ঞাটি সর্বজনবিদিত— "Learning Design are Pedagogically informed learning activities which make effective use of appropriate tools and resources."
শিখন নক্শার গুরুত্ব (Importance of Learning Design) :-
শিখন নকশা হল সার্থক শিখনের যথোপযুক্ত পরিকল্পনা। এই শিখন নকশার বেশ কিছু গুরুত্ব রয়েছে, সেগুলি নিম্নে আলোচিত হল-
(i) মনোবৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে শিক্ষাদান : শিখন নকশা ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য অনুযায়ী অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের অভিরুচি ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে নির্মিত হয় ফলে শিক্ষার্থীরা মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে শিখনের সুযোগ পায়।
(ii) পর্যায়ভিত্তিক শিখন : শিখন নকশায় পূর্বার্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে পর্যায়ভিত্তিক শিক্ষণের মাধ্যমে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় ফলে তাদের আচরণগত শিখন সামর্থ্য তৈরি হয়।
(ii) চিন্তার উন্নতি : শিখন নকশার প্রস্তুতির ফলে শিক্ষক/শিক্ষিকার বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয় ফলে তারা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পাঠদান করেন এবং শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
(iv) শৃঙ্খলাপূর্ণ শ্রেণিকক্ষ : শিক্ষক/শিক্ষিকা তাঁর পাঠে পূর্ণ প্রস্তুত থাকেন বলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বিব্রতবোধ করতে হয় না এছাড়া কোন অনাবশ্যক/অপ্রাসঙ্গিক বিষয় আলোচিত হয় না ফলে স্বতঃস্ফূর্ততা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে পাঠ্য বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা ও পাঠদানের আকর্ষণীয়তা দুই-এর ভারসাম্য বজায় রেখে শিক্ষক/শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে পারেন ফলে শ্রেণীশৃঙ্খলা বজায় থাকে।
(v) শিক্ষক/শিক্ষিকার আত্মমূল্যায়ন : শিখন নকশার প্রয়োগে শিক্ষার্থীদের কতটা সহায়ক হয়েছে সেগুলির আত্মমূল্যায়ন করে শিক্ষক/শিক্ষিকা নিজেদের ভুলগুলি সংশোধন করে নিতে পারেন এবং তাদের শিক্ষণ প্রক্রিয়া ও কৌশল আরও সুদৃঢ় হয়।
(vi) শক্তি ও সময়ের রক্ষা : উপযুক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী শিখন নকশা নির্মিত হয় বলে নির্দিষ্ট সময় ও সীমাবদ্ধ ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয় ফলে সময় ও শক্তির অপচয় ঘটে না।
(vii) নমনীয়তা : শিখন নকশার নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও শিক্ষক/শিক্ষিকা প্রয়োজনবোধে তা পরিবর্তন করতে পারেন ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে মূল বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
0 Comments: