
ভার্চুয়াল গবেষণাগার (Virtual laboratory)
ভার্চুয়াল গবেষণাগার বা ভার্চুয়াল ল্যাবরেটরি হল একটি ভার্চুয়াল শিখন পরিবেশ, যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম, উপকরণ ও কম্পিউটারের ব্যবহারের দ্বারা ব্যবহারিক বিষয়গুলির অন্তর্গত বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়াগুলিকে তাদের নিজস্ব সময় ও স্থান অনুযায়ী পরিচালনা করে থাকে। এই ধরনের গবেষণাগার কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন বিষয়প্রাসঙ্গিক পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়াকে সংগঠিত করার জন্য একটি ইন্টারেক্টিভ পরিবেশ প্রদান করে থাকে। এটি ডোমেইন নির্ভরশীল সিমুলেশন প্রোগ্রাম ও পরীক্ষামূলক ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত। ভার্চুয়াল গবেষণাগার হল ভিন্নধর্মী সমস্যার সমাধান সম্পর্কিত মিথস্ক্রিয়ার একটি মাধ্যম যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ, মূল্যায়ন ও বিষয়বস্তু কপিরাইট আইনের পূর্বানুমতি বোঝার জন্য সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।
ভার্চুয়াল গবেষণাগারের প্রথম সংস্করণটি 1997 সালে 'ভার্চুয়াল ল্যাবরেটরি অফ ফিজিওলজি' নামে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তখন এটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেহতত্ত্ব গবেষণায় প্রযুক্তিগত পূর্বশর্তগুলিকে বিকাশ করা। কিন্তু বর্তমানে এই ভার্চুয়াল গবেষণাগার সাধারণ বিজ্ঞান, সাহিত্য, সমাজবিদ্যা প্রভৃতির ক্ষেত্রেও বিস্তার লাভ করেছে। 2009 সালের এপ্রিল মাসে প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে ভার্চুয়াল গবেষণাগার চালু করা হয়। এর ঠিক এক বছর পর 2010 সালে এটিকে সম্পূর্ণরূপে চালনা করা হয়।
এটি ভারত সরকারের তৎকালীন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষা মিশন (NMEICT) এর অধীনস্থ একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পটির প্রধান লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক থেকে গবেষণা পর্যন্ত সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ল্যাবরেটরি পরিষেবা প্রদান করা।
ভার্চুয়াল গবেষণাগার একটি সম্পূর্ণ শিখন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পদ্ধতি তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের শিখনের জন্য বিভিন্ন ধরনের টুলস যেমন- ওয়েব রিসোর্স, ভিডিও লেকচার, অ্যানিমেটেড শিখন উপকরণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারে।
এই প্রকল্পের অন্তর্গত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি হল- IIT Bombay, IIT Kanpur, IIT Kharagpur, IIT Madras, IIT Roorkee, IIT Guwahati, IIT Hyderabad, Amrita University, Dayalbagh University ইত্যাদি।
ভৌত বিজ্ঞান, রাসায়নিক বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স ও যোগাযোগব্যবস্থা, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি বিষয়গুলিকে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
ভার্চুয়াল গবেষণাগারের বৈশিষ্ট্যসমূহ:-
১) এই ধরনের গবেষণাগার নমনীয় ও মুক্ত শিক্ষাগত পরিবেশ প্রদান করে থাকে।
২) বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাসংক্রান্ত উপকরণ ও মাল্টিমিডিয়া নির্ভর শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া পরিচালনা করে থাকে।
৩) ভার্চুয়াল পরিস্থিতিতে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিকের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে থাকে।
৪) জীবনব্যাপী শিখনের ধারাকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
৫) বৈচিত্র্যময় শিক্ষণ পদ্ধতির দ্বারা পরীক্ষা মূলক প্রক্রিয়াগুলিকে পরিচালনা করে থাকে।
৬) শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বৈষম্যকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে।
৭) শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়কেই ইতিবাচক ও সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করে থাকে।
ভার্চুয়াল গবেষণাগারের উপাদানসমূহ:-
ভার্চুয়াল গবেষণাগারে গতানুগতিক গবেষণাগারের মত সরঞ্জামের প্রাচুর্য না থাকলেও কিছু সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়। যেমন-
Components |
Use |
Computer Devices |
|
Communication Network &
Hardware |
|
Programs |
|
Management |
|
Technical team |
|
ভার্চুয়াল গবেষণাগার ব্যবহারের উপকারিতা/সুবিধা-
ক) বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের দ্বারা শিক্ষার্থীদের শিখন দক্ষতা ও বিশ্লেষণধর্মী চিন্তন ক্ষমতার মাধ্যমে উচ্চগুণমানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে।
খ) এর মাধ্যমে বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করতে পারে।
গ) এখানে অ্যানিমেশন ও ভিডিও সহযোগে শিক্ষা প্রদান করা হয় ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে বিষয়বস্তু উপলব্ধি করতে পারে।
ঘ) এর মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে সামগ্রিক বিষয়কে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হয়।
ঙ) এখানে শিক্ষার্থীরা কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে।
চ) এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কিত ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
ছ) শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো সময়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
0 Comments: