ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual Reality)
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual Reality)

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual Reality)


    প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনার উদ্যোগকারী বিজ্ঞাননির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবের বাস্তবতা কিংবা কল্প বাস্তবতা বলা হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হল কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এক প্রকার সিস্টেম, যাতে মডেলিং ও অনুকরণবিদ্যা প্রয়োগের মাধ্যমে কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন বা উপলব্ধি করতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে অনুকরণকৃত পরিবেশ হুবহু বাস্তব জগতের মত হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক সময় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতাও পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় অনুকরণকৃত বা সিম্যুলেটেড পরিবেশ বাস্তব থেকে অনেকটা আলাদা হতে পারে। যেমন- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমস, এতে ত্রিমাত্রিক ইমেজ তৈরীর মাধ্যমে অতি অসম্ভব কাজও সম্ভব করা যায়। 

    এককথায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হল কম্পিউটার এবং বিভিন্ন প্রকার সেন্সরের সমন্বয়ে গঠিত একটি পরিবেশ। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারকারী সম্পূর্ণরূপে একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তথ্য আদান-প্রদানকারী বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস সংবলিত হেড মাইন্ডেড ডিসপ্লে, ডেটা গ্লোভ, পূর্ণাঙ্গ বডি স্যুট ইত্যাদি পরিধান করার মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে বাস্তবকে উপলব্ধি করত হয়। 


প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব (Impact of Virtual Reality into daily life)-  


ইতিবাচক প্রভাব (Positive Impact)


শিক্ষাক্ষেত্রে: শিক্ষাক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষা প্রদান করা যায়। এর সুবিধা হল এখানে ত্রিমাত্রিক পরিবেশে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শিক্ষার্থীদের বড় গ্রুপ তৈরি করা যায়। জ্যোতির্বিদ্যার শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে অতি সহজেই সৌরমন্ডল সম্পর্কে কীভাবে গ্রহ চলমান থাকে সেসব বিষয় শেখানো হয়ে থাকে। একটি ধূমকেতুর অগ্রগতি, ট্রাক ইত্যাদি ত্রিমাত্রিক পরিবেশে সহজে বোঝানো সম্ভব।


চিকিৎসা ক্ষেত্রে: উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদের আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে সার্জিক্যাল প্রশিক্ষণে SIST ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ল্যাবরোস্কোপিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এই পদ্ধতিতে কম্পিউটার সিম্যুলেশন ব্যবহার করে ল্যাবরোস্কোপিক পরিচালনার বিভিন্ন কৌশল শেখানো হয়। শিক্ষানবীশ ডাক্তাররা এর ফলে অত্যন্ত সহজে ও সুবিধাজনক উপায়ে বাস্তবে অপারেশন থিয়েটারে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ভার্চুয়াল অপারেটিং কক্ষে শিক্ষার্থীরাও কৌশলগত দক্ষতা, অপারেশন এবং রোগ সম্পর্কিত তাত্ত্বিক বিষয়াদির কার্যাবলী অনুশীলন করতে সক্ষম হন। অস্ত্রপচার এবং আতঙ্কগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসা, রোবটিক্স সার্জারি এবং চিকিৎসা প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া দাতব্য চিকিৎসা, ওষুধ, নার্সিং, সার্জারি, অটিজম, প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা হয়। 


ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে আজকাল ড্রাইভিং শেখানো হচ্ছে। স্বল্প মূল্যের মাইক্রো কম্পিউটার প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ড্রাইভিং সিম্যুলেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। কম্পিউটার সিম্যুলেশনের মাধ্যমে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের জন্য চালককে একটি নির্দিষ্ট আসনে বসতে হয়। চালকের মাথায় পরিচিত হেড মাউন্টেড ডিসপ্লের সাহায্যে কম্পিউটার দ্বারা সৃষ্ট যানবাহনের আভ্যন্তরীণ অংশ এবং আশপাশের রাস্তার পরিবেশের একটি মডেল দেখানো হয়। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে একটি হেড ট্র্যাকিং সিস্টেম। ফলে ব্যবহারকারীরা যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অংশের 360 ডিগ্রী দর্শন লাভ করেন এবং কম্পিউটার সৃষ্ট পরিবেশে মগ্ন থাকেন। 


সামরিক বাহিনীতে: সামরিক বাহিনীতে অনেক বছর ধরে মিলিটারি প্রশিক্ষণে ফ্লাইট সিম্যুলেটর ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে প্রচলিত ফ্লাইট সিম্যুলেটরের আরও উন্নতিসাধন করা সম্ভব। এছাড়া ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে সিম্যুলেটেড ওয়্যার দ্বারা সেনাদের অনেক বেশি বাস্তব এবং উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। তিনটি বাহিনীতেই (স্থল, নৌ ও বিমান) এই প্রশিক্ষণের কাজে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিশেষ করে যুদ্ধ কালীন পরিস্থিতি এবং অন্যান্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। 


ব্যবসা-বাণিজ্য: ব্যবসা-বাণিজ্যেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ করা সম্ভব হয়েছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারকারীকে ফাইল ও কেবিনেট দিয়ে কম্পিউটারে ডেক্সটপে তথ্য খুঁজতে হবে না, বরং ব্যবহারকারী নিজেই ফাইল ড্রয়ার খুলতে পারবে এবং নিজের হাতে ফাইলগুলি সাজাতে পারবে। কিছু ব্যবসায় সম্পূর্ণরূপে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয় (যেমন- ala CAVE System)। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ডাটা বিশ্লেষণের কাজেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে ব্যবহার করে থাকে।

 

রোবটিক সার্জারির ক্ষেত্রে: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-র একটি জনপ্রিয় ব্যবহার হল রোবটিক সার্জারি। যেখানে ডাক্তার দ্বারা পরিচালিত রোবটিক্স ডিভাইস কম সময়ে, কম জটিলতা ও কম ঝুঁকিসহ অপারেশন করে থাকে। এক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কে প্রশিক্ষণের কাজেও ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া এই পদ্ধতির আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল- ডাক্তারের যখন কোন হিসেব করার প্রয়োজন হয় তখন সেকেন্ডের মধ্যেই হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। 


প্রকৌশল বিভাগের ক্ষেত্রে: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রকৌশল বিভাগে ত্রিমাত্রিক মডেলিং টুলস এবং পরিকল্পনার নকশা দেখতে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রকৌশলীরা তাদের ত্রিমাত্রিক প্রকল্প দেখতে পারে এবং কীভাবে প্রকল্পটির কাজ করবে তা ভালোভাবে বুঝতে পারবে। কোনও ডিজাইন তৈরি করার শুরুতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে ডিজাইনের ত্রুটি সংশোধন ও পরিবর্তন করা যায়। রেলওয়ে কনস্ট্রাকশনের মত বিভিন্ন স্থানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে অল্প খরচে সহজেই ডিজাইন পরিবর্তন এবং তার ফলাফল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 


খেলাধুলার ক্ষেত্রে: খেলাধুলা ও শরীরচর্চায় দক্ষতা পরিমাপ ও কৌশল বিশ্লেষণের কাজে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যবহার করে খেলোয়াড়দের পোশাক, সরঞ্জাম এবং কৌশল নির্ধারণ করা যায়। খেলোয়াড়রা তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কে কাজে লাগাতে পারে। ড্রাইভিং সরঞ্জামের নকশা এবং নতুন কিছুর নকশা তৈরিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া খেলোয়াড়দের জামাকাপড়, জুতো ও তাদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জামের নকশা তৈরি করতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। গলফ, অ্যাথলেটিক্স, স্ক্রিটিং, সাইক্লিং ইত্যাদি খেলায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ট্রেনিং কিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 


গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের প্রোগ্রামে নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করেছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে যেমন বিভিন্ন ধরনের ইংরেজি চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে তেমনি সংগীত, পুস্তক নির্মাণ, বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনী, টেলিকমিউনিকেশন, নির্মাণ, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ইত্যাদিতেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। 


বিনোদনের ক্ষেত্রে: বর্তমানে বিনোদনের জগতে ভার্চুয়াল জাদুঘর, ভার্চুয়াল থিয়েটার, ভার্চুয়াল গ্যালারি, ভার্চুয়াল থিম পার্ক প্রভৃতি বিনোদনমূলক ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। 


নেতিবাচক প্রভাব (Negative Impact)


ব্যয় বৃদ্ধি: সরঞ্জামাদির অধিক মূল্য এবং জটিলতা বর্তমানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অন্যতম দুটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 


অতিমাত্রায় প্রযুক্তিনির্ভর: বর্তমান সমাজের মনুষ্যত্বহীন ইস্যুটি হল ভার্চুয়াল রিয়েলিটির আরও একটি নেতিবাচক দিক। পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের মনুষ্যত্ব ধরে রাখতে হবে এবং একইসঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত না হই। কিন্তু যদি বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিস্তৃতি লাভ করে তাহলে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। কারণ মানুষ তখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির দ্বারা বাস্তব জীবনের চেয়ে অনেক ভালো বন্ধু এবং মনের মতো পরিবেশ পাবে। আর মানুষ যদি এভাবে কালো চশমা আর গ্লাভসকে মানুষ ও সমাজের বিকল্প হিসাবে বেছে নেয়, তাহলে মানবসমাজ বিলুপ্ত হতে আর বেশি সময় লাগবে না। 


কল্পনানির্ভর: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-র মাধ্যমে মানুষ তার কল্পনার রাজ্যে ইচ্ছামত বিচরণ করতে পারে। ফলে দেখা যায় যে মানুষ বেশিরভাগ সময় কল্পনার জগতে কাটাচ্ছে এবং খুব কম সময়ে বাস্তব জগতে থাকতে পারছে। কিন্তু এভাবে যদি মানুষ কল্পনা ও বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারে তাহলে এই পৃথিবী চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হবে। 


স্বাস্থ্যের অবনতি: গবেষণায় দেখা গেছে যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর। এটি মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। 


ভার্চুয়াল গবেষণাগার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।


0 Comments: