
শ্রেণীকক্ষে মিথস্ক্রিয়া বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য (Objectives of Classroom Interaction)
শ্রেণিকক্ষ মিথস্ক্রিয়া বলতে বোঝায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। শিক্ষনের এই দ্বিমুখী প্রক্রিয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পরস্পরকে প্রভাবিত করে। শিক্ষক এখানে দিকনির্দেশ করেন, বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন, প্রশংসা করেন, উৎসাহিত করেন এবং প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের আচরণের সমালোচনা করেন। আর শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষকের উপস্থাপিত উদ্দীপক অনুযায়ী সাড়া দেয় এবং কিছু নির্দিষ্ট কাজকর্ম করতে আগ্রহী হয়। তাই শ্রেণিকক্ষ মিথস্ক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক পরস্পরের অনোন্যক বা পরিপূরক।
শ্রেণিকক্ষে মিথস্ক্রিয়া বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য-
১) শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে মেলবন্ধন গড়ে ওঠে।
২) শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সম্পর্ক সহজতর হয়।
৩) শিক্ষার্থীদের কথোপকথন দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৪) শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতা আসে।
৫) মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করার সুযোগ পায়।
৬) শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে শিক্ষণ-শিখনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
৭) মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন প্রশ্ন বা বিষয় নিয়ে পারস্পরিক মতবিনিময়ের সুযোগ পায়।
৮) মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মনোভাব ও অর্জিত জ্ঞানের যথার্থতা যাচাই করতে পারেন।
৯) মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অর্জিত জ্ঞানের সত্যতা যাচাই করতে পারে এবং প্রয়োজনে সংশোধন ও পরিহার করতে পারে।
১০) মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন চিন্তা ভাবনায় উজ্জীবিত করতে পারেন।
১১) কোন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পর্যাপ্ত না থাকলে মিথস্ক্রিয়া তাদের সাহায্য করে।
১২) শ্রেণিকক্ষে মিথস্ক্রিয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়, সংকোচ, জড়তা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে।
১৩) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সকলের সামনে নিজেকে প্রকাশ করার ও নিজের মতামত জানানোর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
১৪) মিথস্ক্রিয়া চলাকালীন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করতে পারেন। যেমন তাদের উচ্চারণ ত্রুটি, বাক্য ব্যবহারের জড়তা এগুলো দূর করতে পারেন।
১৫) মিথস্ক্রিয়া শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীকে জানার একটি উপায়।
১৬) এর মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষার্থীর জ্ঞান, বোধশক্তি এমনকি কোন্ বিষয়ে শিক্ষার্থীর দখল বেশি সেটিও চিহ্নিত করতে পারেন সহজেই।
১৭) শ্রেণিকক্ষে সকল শিক্ষার্থী যেহেতু সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তুলে সহজেই তাদের পড়াশোনার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
১৮) মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষণ পদ্ধতি পরিবর্তন ও সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়।
বর্তমানে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতিতে মিথস্ক্রিয়া একটি কার্যকর প্রক্রিয়া। গতানুগতিক শ্রেণীকক্ষের তুলনায় শিখনকে যথার্থ করে তুলতে এই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে সক্রিয় রাখতে এবং তাদের কথোপকথন দক্ষতা বৃদ্ধি করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মিথস্ক্রিয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। সুতরাং একথা অনস্বীকার্য যে শ্রেণিকক্ষে মিথস্ক্রিয়া শিক্ষার্থী শিক্ষক ও পাঠ্যবস্তু উভয়ের সংযোগ সাধনের অন্যতম আধুনিক প্রক্রিয়া।
0 Comments: