
সংস্কৃত নাট্য সাহিত্যের উৎপত্তি বিষয়ে বহু মতামত রয়েছে। অনেকের মতে ভরত মুনি প্রণীত নাট্যশাস্ত্র নাট্যকলার প্রাচীনতম গ্রন্থ। ভরতের মতে ভগবান ব্রহ্মা ললিতকলারূপে নাটকের সৃষ্টি করেছেন। নাট্যশাস্ত্রের বিবরণানুসারে ব্রহ্মা ঋগবেদ থেকে পাঠ্যাংশ, সামবেদ থেকে সংগীত, যজুর্বেদ থেকে অভিনয় এবং অথর্ববেদ থেকে রস আহরণ করে নাটিক রচনা করেন। নাটকে উত্তম, মধ্যম ও অধম সর্ববিধ মানুষের কর্মই অণুকরণযোগ্য এবং সকল শ্রেণির মানুষের মনোবিনোদনের উপকরণ এখানে বিদ্যমান-
“যোহয়ং স্বভাবো লোকস্য সুখদুঃখ সমন্বিতঃ।
সোঅঙ্গাদ্যভিনিয়োপেতো নাট্যমিত্যভিধীয়তে।।"
সংস্কৃত নাটক পাঠের উদ্দেশ্য (Objectives of Teaching Drama):-
নাটক একদিকে যেমন আনন্দ দান করে, অন্যদিকে তেমনি উপদেশও প্রদান করে তাই। নাটকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন—
(i) শিক্ষার্থীকে নাটকে অভিনয় করতে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তাদের সৃজনশক্তি বিকশিত হয়।
(ii) নাটকে অভিনীত চরিত্রগুলির সাথে দৈনন্দিন ব্যবহারিক জীবনের প্রাসঙ্গিকতা উপলব্ধি করতে শেখা।
(iii) নাট্যকারের অনুভূতি, কল্পনা ও নাটকের মূল রস উপলব্ধিতে সহায়তা করা।
(iv) অবসাদগ্রস্থ মনকে বিনোদনের মাধ্যমে আনন্দদান।
(v) অভিনয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সংস্কৃত পাঠে আগ্রহী করে তোলা।
(vi) নাটকের অঙ্ক বিভাজন ও নামকরণের গুরুত্ব উপলব্ধিতে সহায়তা করা।
সংস্কৃত নাটকের গুরুত্ব :-
কোন বিষয়কে পড়ার তুলনায় যদি সেটি অভিনয়ের মাধ্যমে প্রস্তাবিত করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছে তা সহজ ও বোধগম্য হয়ে ওঠে। এমনিতেই নিম্নশ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংস্কৃত ভাষার প্রতি একটা ভীতি থাকে তাই নাট্যরূপের মাধ্যমে শিক্ষাদান তাদের কাছে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। তাছাড়া নাটককে অভিনয়ের মাধ্যমে পরিবেশন করলে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর সুমধুর হয়, উচ্চারণ শুদ্ধ ও স্পষ্ট হয়। শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীদের অভিনয় সম্পর্কে ধারণা জন্মায়, ফলে তাদের জন্মগত প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
'কাব্যেষু নাটকং রম্যম্’–নাটকে সকল প্রকার জ্ঞান, শিল্প, কলা, বিদ্যা বিদ্যমান তাই নাটককে ভরতমুনি পঞ্চমবেদ রূপে আখ্যায়িত করেছেন—
“সর্বশাস্ত্রার্থসম্পন্নং সর্বশিল্প প্রবর্তকম্।
নাট্যাখ্যং পঞ্চমং বেদং সেতিহাসং করোম্যহম্।।”
0 Comments: