সংস্কৃত গদ্য শিক্ষণের উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও গুরুত্ব
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

সংস্কৃত গদ্য শিক্ষণের উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও গুরুত্ব

সংস্কৃত গদ্য শিক্ষণের উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও গুরুত্ব

 


গদ্য শিক্ষণ (Teaching of Prose) :

    ‘গদমদচরযমশ্চানুপসর্গে’–সূত্রের দ্বারা 'গদ্' ধাতুর উত্তর যৎ প্রত্যয়ের মাধ্যমে গদ্য শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ যে ভাষায় কথা বলা হয় তাই-ই হল গদ্য। সাহিত্যদর্পণকার বিশ্বনাথ কবিরাজ গদ্যের লক্ষণে বলেছেন-

“বৃত্তবন্ধোজ্ঝিতং গদ্যং মুক্ত কং বৃত্তগন্ধি চ।

 ভবেদ্যুৎকলিকাপ্রায়ং চূর্ণকং চ চতুর্বিধম্।। 

আদ্যং সমাসরহিতং বৃত্তভাগযুতং পরম্।

 অন্যদ্দীর্ঘসমাসাঢ্যং তূর্যং চাল্প সমাসকম্।।”


    অর্থাৎ, ছন্দোগত হ্রস্ব দীর্ঘ ইত্যাদি নিয়মরহিত বাক্যকে গদ্য বলা হয়। সংস্কৃত ভাষা সাহিত্যের প্রকাশ ভঙ্গিমায় যে সৌরভ বিদ্যমান তা অত্যন্ত মধুময়। গদ্য হল লেখক ভাবনার সেই সুরভিত রূপের সুসংবদ্ধ ও সুসংহত আত্মপ্রকাশ। সংস্কৃত গদ্য বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন-

1. কাহিনীমূলক

2. জীবনীমূলক

3. বর্ণনামূলক

4. কথোপকথনমূলক ও 

5. সাংস্কৃতিক রচনামূলক


    এগুলির মধ্যে নিম্নতর শ্রেণিতে সাধারণত নীতিমূলক বা বর্ণনামূলক গল্পই পাঠ্য হিসাবে গ্রহনযোগ্য এবং অপেক্ষাকৃত উচ্চতর শ্রেণীগুলির জন্য অন্যান্য বিষয়গুলি পাঠ্য হিসাবে বিবেচিত হয়।


সংস্কৃত গদ্য পাঠের উদ্দেশ্য:- 

সংস্কৃত গদ্য পাঠের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপ—

(i) গদ্য পাঠের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা ভাষার জ্ঞান লাভ করতে পারে। 

(ii) প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটানো। 

(ii) শিক্ষার্থীকে অফুরন্ত সাহিত্যভান্ডারের রসাস্বাদন ঘটানো।

(iv) নীতিমূলক, বর্ণনামূলক ইত্যাদি ধরনের গদ্য পাঠের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। 

(v) মহাপুরুষের জীবনীমূলক গদ্য পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চিত্তের বিকাশ ঘটে।

(vi) স্পষ্টোচ্চারণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সরব পাঠে দক্ষ করে তোলা।

(vii) বিভিন্ন নতুন শব্দের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটানো।

(viii) গদ্য পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তি, মননশীলতা ও চিন্তাশক্তির উন্মেষ ঘটানো।

(ix) উপন্যাস, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ পাঠের মাধ্যমে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করা

(x) গদ্য পাঠের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের শব্দ প্রয়োগ, শব্দচেতনা ও শব্দ ব্যবহারে কৌশল সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।


সংস্কৃত গদ্যপাঠের গুরুত্ব- 


    শিক্ষাজগতে পঠন এবং পাঠনের গুরুত্ব সর্বজনবিদিত। সংস্কৃত গদ্যপাঠের প্রয়োজনীয়তাও আমাদের কারোর অজানা নয়। পূর্বে উল্লেখ্য বিভিন্ন প্রকার গদ্যপাঠের মধ্য দিয়ে আমরা নানান বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পারি। যেমন—কাহিনিমূলক গদ্য পাঠের দ্বারা কাহিনি সম্পর্কে পরিচিতি, বর্ণনা শৈলী, কল্পনাশক্তির উন্মেষ, নীতিবোধ ও চরিত্র গঠন এছাড়া কাহিনি বিস্তারের চমৎকারিত্ব, রসবোধ ও গল্পকারের মানসিক ভাবনার সাথে পরিচয় ঘটানো সম্ভব।


     জীবনীমূলক গদ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিশ্লেষণ, বিভিন্ন মহাপুরুষদের জীবনী সম্পর্কিত সাধারণ ধারণা, চারিত্রিক ভাবাদর্শ ও বাণীর মর্মোপলব্ধিতে সক্ষম ঘটায়, অনুরূপভাবে বর্ণনামূলক গদ্য বর্ণনার রীতি, শৈলী ও ভাব-ভঙ্গিমার উপলব্ধি ঘটায় আবার প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতি আন্তরিক আকর্ষণবোধও সৃষ্টি করে।

    কথোপকথনমূলক গদ্যপাঠের দ্বারা শিক্ষার্থীরা অভিনয় কৌশলের সাথে পরিচিত হয়। চারুকলার প্রতি তাদের আকর্ষণবোধ জন্মায় এবং নাট্যরসের উপলব্ধি ঘটে। সাংস্কৃতিক রচনামূলক গদ্যগুলি শিক্ষার্থীর মস্তিষ্কে সমাজতত্ত্বের সুস্পষ্ট ধারণা, ঔৎসুক্য বৃদ্ধি তথা যুক্তিবাদী সামাজিক জীব হিসাবে সামাজিক ও নৈতিক কর্তব্য এবং দায়িত্ববোধের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক/স্বজাতীয় সম্প্রীতি ও বোঝাপড়ার মানসিকতা সৃষ্টিতে সহায়ক।


সংস্কৃত গদ্য পাঠের পদ্ধতি :-


1. প্রতিপাদন পদ্ধতি – বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে শিক্ষাদানের একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতির নাম প্রতিপাদন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শিক্ষক/শিক্ষিকা তাঁর তাত্ত্বিক জ্ঞানকে ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেন। এক্ষেত্রে সংস্কৃত গদ্য পড়ানোর সময় শিক্ষক/শিক্ষিকা শ্রেণিকক্ষে চার্ট, মডেলের পাশাপাশি প্রক্ষেপণ যন্ত্র (Projector) ব্যবহার করে কোন বিষয়কে উপস্থাপন করতে পারেন।

2. আলোচনা পদ্ধতি — যে পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষক/শিক্ষিকা শিক্ষার্থীর সাথে আলোচনার মাধ্যমে কোন তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়কে উপস্থাপিত করেন তাকে আলোচনা পদ্ধতি বলে। সংস্কৃত গদ্য পাঠদানের ক্ষেত্রে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক/শিক্ষিকা কোন কঠিন গদ্যাংশকে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সরলরূপে পরিবেশন করবেন যাতে সংস্কৃত বিষয়ের প্রতি তাদের ভীতি দূরীভূত হয়।

3. বক্তৃতা পদ্ধতি—শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ক্ষেত্রে এটি একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। সংস্কৃত গদ্য পাঠকালে শিক্ষক/শিক্ষিকা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যাখ্যা করতে বক্তৃতা পদ্ধতি প্রয়োগ করবেন। তবে শিক্ষক/শিক্ষিকার বক্তৃতার ভাষা হবে সহজ, সরল ও স্পষ্ট। বাচনভঙ্গি হবে সাবলীল, গলার স্বর কক্ষানুগুণ হবে যাতে শিক্ষার্থীরা একঘেয়েমি অনুভব না করে। তবে এই পদ্ধতি উচ্চশ্রেণিতে কার্যকরী হলেও নিম্নশ্রেণিতে তেমনভাবে কার্যকর নয়।

4. প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি–শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পরস্পরের মধ্যে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে কোন বিষয় সম্পর্কে ধারণা প্রদান, ক্ষমতা অর্জন ও আচরণের পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়কেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হয়। শিক্ষক/শিক্ষিকা সরল সংস্কৃতে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন এবং তাদের কাছ থেকে সংস্কৃত ভাষাতেই উত্তর গ্রহণে সচেষ্ট হবেন।

5. তুলনা পদ্ধতি–তুলনা পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষক/শিক্ষিকা সমার্থক বিপরীতার্থক-সাদৃশ্যব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্যবাহী ভিন্নার্থবোধক সমোচ্চারণমূলক সংস্কৃত শব্দ ও পদসমূহকে তুলনার ভিত্তিতে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করতে পারবেন। এছাড়া সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে অন্যান্য ভাষার সাহিত্যের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য শিক্ষার্থীকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন।

6. অনুবাদ পদ্ধতি—এই পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষক/শিক্ষিকা পঠনীয় সংস্কৃত গদ্যের প্রত্যেকটি বাক্যের অর্থ মাতৃভাষায় অনুবাদ করে দেবেন প্রয়োজনে কঠিন শব্দগুলির অর্থ কৃষ্ণফলকে লিখে দেবেন। এরপর শিক্ষার্থী সেগুলিকে ঠিকঠাক অনুসরণ করতে পেরেছে কিনা তা দেখার জন্য তাদের পুনরায় অনুবাদ করতে বলবেন। 

7. অনুবন্ধ পদ্ধতি — শ্রেণিকক্ষে সমজাতীয় বিষয়সমূহের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের দ্বারা শিক্ষণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করাকেই বলা হয় অনুবন্ধ পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংস্কৃত গদ্যকে অন্য কোন শিক্ষনীয় বিষয়ের সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপন করে শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হয়।

8. সমীক্ষা পদ্ধতি- সমীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গদ্যের রচনা রীতি রচনা শৈলী বা গদ্যান্তর্গত শিক্ষামূলক দিকগুলিকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা আলোচনা করার সুযোগ লাভ করে।

0 Comments: