
শিক্ষা সম্বন্ধীয় বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এর ধারণা, উপাদান ও সংস্কৃত শিক্ষণে এর গুরুত্ব
পেডাগগি বা শিক্ষাবিজ্ঞান: সাধারণ অর্থে শিক্ষাবিজ্ঞান হল শিক্ষার্থীদের কিভাবে শিক্ষণ দেওয়া হবে এবং শিক্ষার্থীরা কিভাবে তা গ্রহণ করবে সেই সংক্রান্ত কলাকৌশল এবং বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞানের সঙ্গে নির্দেশদানের তত্ত্বগুলিও যুক্ত। শিক্ষাবিজ্ঞান শেখায় কিভাবে শিক্ষণ প্রক্রিয়াটি ঘটে। শ্রেণিকক্ষে কীভাবে শিক্ষণের উপাদানগুলি উপস্থাপনা করা হয়, কিভাবে শিক্ষার্থীরা সেগুলি গ্রহণ করে এবং কিভাবে সেগুলির মূল্যায়ন করা হয় এই সমস্ত কিছুই শিক্ষাবিজ্ঞান আলোচনা করে। একজন নির্দেশক বা শিক্ষক শিক্ষিকা ধারণাগত জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে তোলে এবং শিক্ষাবৈজ্ঞানিক কাঠামোয় শিখন সক্রিয়তা উপাদানগুলি নিয়ন্ত্রণ করেন। Pedagogy বা শিক্ষাবিজ্ঞান বিদ্যালয়ীয় বিষয় অথবা কোন সৈদ্ধান্তিক ধারণার বিশ্লেষণ করে।
'Pedagogy informs teaching strategies, teacher actions and teacher judgements and decisions by taking into consideration theories of learning."
শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের কয়েকটি উপাদান লক্ষ্য করা যায়। সেই উপাদানগুলি হল-
বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ : যে পাঠটি শ্রেণিকক্ষে পড়ানো হবে সেই পাঠটিকে বা এককটিকে বেশ কয়েকটি উপ-এককে বিভক্ত করা হয়। পাঠের প্রকার অনুসারে এই উপএককের সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন : পদ্যপাঠের ক্ষেত্রে প্রতি উপ-এককে তিনটি করে শ্লোক নেওয়া হয়। আবার গদ্যপাঠের ক্ষেত্রে প্রতি উপ-এককে দশটি করে পংক্তি নেওয়া হয়। ব্যাকরণপাঠের ক্ষেত্রে প্রতি উপ-এককে তিনটি করে সূত্রের সংযুক্তি ঘটানো। এইভাবে উপ-এককে ভাগ করে পাঠদান করলে তা অনেক বিজ্ঞানসম্মত হয়।
উপ-এককের বিশ্লেষণ : শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় সমগ্র বিষয়কে বিভিন্ন উপ-এককে বিভক্ত করার পরে সেই উপ-এককগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া হয়। যে উপ-এককটি নির্বাচন করা হয়েছে সেই উপ-এককটি শিক্ষক-শিক্ষিকা নিজের ভাষায় বিশ্লেষণ করবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞানও যাচাই করে দেখবেন। এই স্তরে শিক্ষার্থীদের শিখন-সামর্থ্যকে পর্যালোচনা করতে হবে। Bloom'-এর Taxonomy অনুসারে এই সামর্থ্যগুলির তিনটি ভাগ করা যায়, যথা :
(i) বৌদ্ধিক ক্ষেত্র
(ii) আনুভূতিক ক্ষেত্র ও
(iii) সঞ্চালন ক্ষেত্র।
এই বৌদ্ধিক ক্ষেত্রটি আবার জ্ঞানমূলক, বোধমূলক, প্রয়োগমূলক এবং দক্ষতা মূলক ভেদে চতুর্বিধ ।
শিখন কৌশল : সংস্কৃত শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ভাষাশিক্ষণে যে কৌশলগুলি শিক্ষক-শিক্ষিকা অবলম্বন করতে পারেন সেগুলি হল-
(i) বক্তৃতা বা আলোচনা পদ্ধতি
(ii) শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক উপকরণসমূহের প্রয়োগ। যেমন : কৃষ্ণফলক সুধাখণ্ড, মার্জনী প্রভৃতি।
(iii) শিক্ষার্থীদের ভাষাকাঠিন্য দূর করার জন্য বিভিন্ন প্রদীপন পত্র, প্রতিকৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
(iv) শিক্ষার্থীরা ভাষাবিষয়ে কতটা জ্ঞান লাভ করল তা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
ভাষাশিক্ষণে শিক্ষাবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের গুরুত্ব :
শিক্ষাবিজ্ঞানের উপাদানগুলি আলোচনা করে ভাষাশিক্ষণে এর প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্বগুলি নিম্নরূপে বর্ণনা করা যায়। যেমন-
(i) শিক্ষাবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের দ্বারা শিক্ষক শিক্ষিকারা নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করেন। তাঁরা বুঝতে পারেন ছাত্রেরা বা ছাত্রীরা ভাষাশিক্ষণের কোন্ স্তরে রয়েছে তা বুঝে শিক্ষক-শিক্ষিকা ভাষাশিক্ষণ করাতে পারেন।
(ii) শিক্ষাবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের দ্বারা শিক্ষার্থীদের কাঙ্খিত সক্রিয়তা শেখানো যায়।
(iii) এই বিশ্লেষণের ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ভাষাশিক্ষণের স্তরানুগুণ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহারের স্পষ্ট ধারণা লাভ করেন।
(iv) শিক্ষাবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ শিক্ষার্থীদের ভাষাবিজ্ঞানগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
(v) শিক্ষাবিজ্ঞানমূলক বিশ্লেষণ একজন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে মূল্যায়নের বিষয়ে সচেতন করে তোলে।
(vi) এর দ্বারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা বুঝতে পারেন শিক্ষণের জন্য বিভিন্ন কৌশলের যথাযথ প্রয়োগ কিভাবে করা যায়।
0 Comments: