
Designing an activity based curriculum (একটি কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের নকশা)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে David Horsburg নামে একজন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ্ 1972 সালে 'Neelbagh' নামক একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যা ছিল তার উন্নত চিন্তাশক্তির প্রতিফলন। তিনি তার স্ত্রী Doreen এবং পুত্র Nicholas এর সাথে সম্মিলিত হয়ে একটি বহুমুখী পাঠক্রমের পরিকল্পনা করেন যেটি পরবর্তীকালে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই পাঠক্রমে সৃজনশীল কার্যাবলীর মাধ্যমে শিক্ষণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হত। পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত গান-বাজনা, সেলাই, কাষ্ঠদ্রব্য নির্মাণ ইত্যাদি কার্যাবলীর পাশাপাশি সাধারণ বিষয় হিসেবে ইতিহাস, সংস্কৃত, ইংরেজি, গণিত ইত্যাদি বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে David Horsburg তার এই প্রতিষ্ঠানটিকে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের একটি মাইলস্টোন হিসেবে সূচিত করেন যা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় সর্বজন স্বীকৃত।
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম: ইংরেজিতে একটি কথা আছে “Idle brain is the devil’s workshop” অর্থাৎ অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। কোন কাজ না থাকলে অসৎ চিন্তা মাথায় আসে। শিক্ষালয়ের পাঠক্রম যদি কর্মমুখী না হয়ে শুধুমাত্র বিষয়ভিত্তিক হয় তাহলে হাতেনাতে কাজ করার সুযোগ থাকে না, ফলে সে শিক্ষা সার্থক হয় না। এইজন্য পাঠক্রম কর্মকেন্দ্রিক হওয়া প্রয়োজন।
শিশুর সক্রিয়তা ও কর্ম অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে যে পাঠক্রম গড়ে উঠেছে তাকে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম বলে।
জন ডিউই বলেছেন-
"শিশুর ব্যক্তিগত চাহিদা ও আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে অবিচ্ছিন্ন কর্মপ্রবাহই হল কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম।”
কোঠারি কমিশন কর্ম অভিজ্ঞতাকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মূল কথা হল কর্মের মাধ্যমে শিক্ষা (learning by doing)।
শিক্ষাবিদ্ রুশো, জন ডিউই , মন্তেসরী, গান্ধীজী ও রবীন্দ্রনাথ সকলেই স্বীকার করেছেন যে শিক্ষাকে সফল করতে হলে কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য :
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের যে সকল বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে সেগুলি নিম্নরূপ-
১. দেহ ও মনের বিকাশ- এই পাঠক্রমে কর্মের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে ফলে এই পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীর সামগ্রিক দেহ ও মনের বিকাশে সহায়তা করে।
২. বৌদ্ধিক বিকাশ- এই পাঠক্রমে এমন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয় যার দ্বারা শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটে।
৩. শান্তিপূর্ণ নির্বাচন- এই পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর্ম নির্বাচন করা হয়।
৪. জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে যে কর্ম অন্তর্ভুক্ত হয়, সেগুলি শিক্ষার্থীর বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
৫. সক্রিয়তা- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম এমন এক ধরনের পাঠক্রম, যেখানে শিক্ষার্থীর শিখনে সক্রিয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৬. শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ- এই পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর সকল দিকের অর্থাৎ দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক ও নৈতিক বিকাশের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৭. বৈচিত্র্যপূর্ণতা- এই পাঠক্রমে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা থাকে বলে শিক্ষা বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে ওঠে ফলে এই পাঠক্রমের প্রতি শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি আগ্রহী হয়।
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের শ্রেণীবিভাগ :
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়–
ক) দৈহিক কার্যাবলী- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি শরীরশিক্ষা, খেলাধুলা, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কার্যাবলী ইত্যাদি।
খ) পরিবেশ ভিত্তিক কার্যাবলী- সমাজের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা গঠন করাই হল পরিবেশভিত্তিক কার্যাবলী।
গ) গঠনমূলক কার্যাবলী- পাঠক্রমে যে ধরনের কার্যাবলী শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক, বিভিন্ন কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব এবং উৎপাদনমুখী কাজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে তাই হল গঠনমূলক কর্মকেন্দ্রিক কার্যাবলী।
ঘ) সৃজনাত্মক কার্যাবলী- যে পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনাত্মক ক্ষমতার বিকাশ ঘটে তাকে সৃজনাত্মক কার্যাবলী বলে। যেমন- সংগীত, শিল্পকলা, বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি তৈরি, বিভিন্ন ধরনের চার্ট, মডেল তৈরি ইত্যাদি কার্যাবলী হল সৃজনাত্মক কার্যাবলী।
ঙ) কল্পনাত্মক কার্যাবলী- পাঠক্রমের যে কার্যাবলী শিক্ষার্থীদের কল্পনার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে তাই হল কল্পনাত্মক কর্মকেন্দ্রিক কার্যাবলী। যেমন- সাহিত্য পাঠ, অভিনয়, ছবি আঁকা ইত্যাদি।
চ) সামাজিক কার্যাবলী- যে কার্যাবলী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে উৎসাহিত করে তাকে সামাজিক কার্যাবলী সংক্রান্ত পাঠক্রম বলে। যেমন- সমাজসেবামূলক কাজ, প্রাথমিক চিকিৎসা, বয়স্ক শিক্ষা, সমাজ উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী ইত্যাদি।
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের উপযোগিতা:-
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের তাৎপর্য হল কর্মের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনের গতিময়তা প্রকাশ করা। আর সেই গতিময় কর্মজীবনের মধ্য দিয়েই তার শিক্ষা হয়।
“Life is a byproduct of activities and education is born out of activities।”
-John Dewey
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- "শিক্ষা হবে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার অঙ্গ এক তালে, এক সুরে।”
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের উপযোগিতাগুলি হল-
i) দৈহিক বিকাশ- এই পাঠক্রম প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষার্থীর বিকাশে সহায়তা করে।
ii) বৌদ্ধিক বিকাশ- এই পাঠক্রম যথার্থ বিজ্ঞানসম্মত কৌশলে শিক্ষার্থীর বিকাশে সহায়তা করে।
iii) মানসিক বিকাশ- এই পাঠক্রম শিশুর অন্তর্নিহিত জন্মগত প্রবণতাগুলির স্বাভাবিক বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে। যেমন- জন্মগতভাবে শিশুর মধ্যে সৃজন ক্ষমতা ইত্যাদির মতো কতগুলি প্রবণতা বর্তমান থাকে। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম তার বিকাশে সাহায্য করে।
iv) প্রাক্ষোভিক বিকাশ- এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীর প্রাক্ষোভিক উদ্দেশ্য সফল করতে সহায়তা করে।
v) নৈতিক বিকাশ- এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীর নৈতিক ও চারিত্রিক বিকাশে সহায়তা করে।
vi) সামাজিক বিকাশ- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম অনুসরণ করার সময় শিক্ষার্থী দলগতভাবে জীবনযাপনের নিয়ম শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত হয় এবং একত্রে মিলেমিশে বসবাস করার অভ্যাস গঠন করে।
vii) শ্রমের প্রতি মর্যাদা- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রমের প্রতি মর্যাদাবোধ জাগিয়ে তোলা হয়।
viii) স্বনির্ভর- এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীকে একজন স্বনির্ভর, দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ নাগরিক হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
ix) সৃজনশীলতার বিকাশ- এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
x) শিক্ষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষকদেরও সক্রিয় করে তোলে।
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের ত্রুটি:-
শিক্ষাবিদগণ কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের কতগুলি সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। যেমন-
১. শিক্ষার প্রতি আকর্ষণের অভাব- এই পাঠক্রমে শিক্ষার্থীরা কাজের মাধ্যমে শিখতে এসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে কর্মে নিযুক্ত করে ফলে শিক্ষার প্রতি তাদের আর ঝোঁক থাকে না। তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য সফল হয় না।
২. অতীত অভিজ্ঞতাকে অবজ্ঞা- এই ধরনের পাঠক্রমে শিক্ষাকে কেবলমাত্র ভবিষ্যৎ ও বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা হয়। অতীত অভিজ্ঞতাকে কোনরকম গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অতীত না জানা থাকলে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সাফল্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
৩. শিক্ষালয়ের অভাব- এই পাঠক্রম রূপায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ শিক্ষালয় এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব দেখা দেয়। ফলে এই পাঠক্রম অনুসারে পড়ানো সব শিক্ষালয়ে সম্ভব হয় না।
৪. বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয়ের অভাব- এই পাঠক্রমে অনেকগুলো বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। কারণ একটি শিক্ষালয়ে যে কোন একটি কর্মকে গ্রহণ করে তার জন্য পরিকাঠামো বেছে নেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে না।
৫. সময়ের অপ্রতুলতা- এই পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করতে গেলে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। নিম্নস্তরের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় পাওয়া গেলেও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সময়ের অভাবের জন্য এই পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষাদান সম্ভব হয় না।
৬. আর্থিক অনটন- এই পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষাদান করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা কর্মশালার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। কর্মশালার জন্য সবসময় এই অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না, ফলে আর্থিক অনটনের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান এই পাঠক্রম পরিচালনা করতে পারে না।
৭. বিমুর্ত চিন্তনের অভাব- মূর্ত চিন্তনের সঙ্গে বিমুর্ত চিন্তনের অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ। এই পাঠ্যক্ৰমে বিমুর্ত চিন্তনের সুযোগ কম থাকায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের পাঠক্রম যুক্তিযুক্ত নয়।
Objectives:- এই প্রয়োগিক কার্যটির নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যগুলি বিদ্যমান-
i) সক্রিয়তা ভিত্তিক পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক, বৌদ্ধিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক ও সামাজিক বিকাশে সহায়তা করা
ii) শ্রমের প্রতি মর্যাদাবোধ গড়ে তোলা।
iii) শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর করতে সাহায্য করা।
iv) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো।
v) শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও সক্রিয় করে তোলা।
vi) গতানুগতিক পাঠের একঘেয়েমি দূর করে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় করে তোলা।
Guidelines for the activity:- প্রথমে শিক্ষক মহাশয় শ্রেণিকক্ষে সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রমের বিষয়টি স্পষ্ট করলেন, এর পদ্ধতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করলেন এবং শিক্ষার্থীদের সম্মুখে কিভাবে সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠ উপস্থাপন করা হবে তার ধারণা দিলেন। তারপর এই প্রায়োগিক কার্যটি সম্পন্ন করতে শিক্ষক মহাশয় বি.এড বিভাগের আমাদের একটি গ্রুপকে মহাবিদ্যালয়ের নিকটবর্তী দেপাড়া বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়ে পাঠালেন।
Execution:- একটি কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের ব্যবহারিক ক্ষেত্র:
বিদ্যালয়ের নাম- দেপাড়া বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়
শ্রেণী- সপ্তম
বিষয়- সংস্কৃত
-:পাঠক্রমটির পর্যায়ক্রমিক রূপায়ণ:-
কার্যাবলী-১
मित्र भल्लुक कथा
উপকরণ- কেবলমাত্র তিনজন শিক্ষার্থী
স্থান- বিদ্যালয় প্রাঙ্গন
পদ্ধতি- এই সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রমের কাজটি সম্পন্ন করতে প্রথমে সপ্তম শ্রেণীর সংস্কৃত বিষয়ের 'দেববাণী পরিচয়ঃ' পুস্তকান্তর্গত 'মিত্র ভল্লুক কথা' নামক সক্রিয়তামূলক গল্পটি চয়ন করেছি এবং গল্পটি আমি শিক্ষার্থীদের যত্ন সহকারে পড়িয়েছি ও বুঝিয়েছি। তারপর উল্লেখিত বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর তিনজন উৎসাহী শিক্ষার্থী নির্বাচন করে কীভাবে কাজটি ক্রমপর্যায়ে সম্পন্ন করতে হবে সেটা বলে দিলাম।তারপর শ্রেণিকক্ষের সকল শিক্ষার্থী সহ আমি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের ছায়াযুক্ত এক প্রান্তে উপস্থিত হলাম। সেখানে পূর্ব নির্ধারিত তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনকে প্রথম বন্ধু, আর একজনকে দ্বিতীয় বন্ধু এবং অপরজনকে ভাল্লুকের অভিনয় করতে বললাম। এইভাবে আমি উক্ত গল্পটিকে পাঠ্যরূপে উপস্থাপিত করলাম। এইরূপ অভিনয় প্রদর্শনের মাধ্যমে পাঠটির সারমর্ম ও নীতিবাক্য শিক্ষার্থীদের নিকট সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হলাম।
Reporting:- উক্ত কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের প্রায়োগিক কার্যটি দেপাড়া বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিকট প্রয়োগের মাধ্যমে আমি উপলব্ধি করলাম যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাজটি করার যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। শ্রেণীকক্ষের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সফলভাবে এই পাঠে অংশগ্রহণ করেছে। তবে সামান্য কয়েকজন শিক্ষার্থীর এব্যাপারে অনীহা দেখা গেছে।
উপরোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে এই পাঠটি শিক্ষার্থীদের সম্মুখে উপস্থাপন করায় 'মিত্র ভল্লুক কথা' নামক সংস্কৃত গল্পটি খুব সহজেই তাদের বোধগম্য হয়েছে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের স্মৃতিতে থেকে থেকে যাবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া সফল অভিনয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে ও একঘেয়েমি দূরীভূত হয়ে তাদের মনে আগ্রহের সঞ্চার ঘটেছে। তারা এই ধরনের আরও নতুন পাঠ পঠনে উৎসুক হয়েছে।
Concluding remarks:- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম নমনীয় ও পরিবর্তনশীল। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের জীবনকেন্দ্রিক হয়। বাস্তব জীবনের প্রয়োজন বা চাহিদা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চাহিদাও পরিবর্তিত হয়। তুলনামূলকভাবে প্রারম্ভিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য এই পাঠক্রমের উপযোগিতা বেশি। এই পাঠক্রমের সক্রিয়তামূলক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশুর ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে মনস্তত্ত্বভিত্তিক এই পাঠক্রমে শিশুকে একটি বিষয়বস্তুরূপ কামরায় আবদ্ধ করে রাখা হয় না, বরং শিশুকে কেন্দ্র করেই এর বিষয়বস্তু সংগঠিত করা হয়।
অপরদিকে, শিক্ষক-শিক্ষিকারাও কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের দ্বারা বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে গিয়ে নিজস্ব নকশা, হাতে কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা, বিচার বুদ্ধির বিশ্লেষণ ও সৃজনশীলতার প্রয়োগ ঘটাতে পারে।শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষককূলও পাঠদান করতে গিয়ে বিষয় ও সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করার সুযোগ পায়, এখানেই কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের স্বার্থকতা প্রকাশ পায়।
0 Comments: