.jpeg)
লৌকিক সংস্কৃত ও বৈদিক সংস্কৃতের মধ্যে
ধ্বনিতাত্ত্বিক পার্থক্য :-
i) বৈদিক
ভাষায় মূর্ধণ্য ধ্বনির ব্যবহার খুবই কম। কিন্তু লৌকিক সংস্কৃত মূর্ধণ্য ধ্বনির
ব্যবহার বেশী পরিলক্ষিত হয়।
ii) স্বরধ্বনির
মধ্যে ৯-কার প্রাচীন বৈদিক ভাষায় প্রচলিত ছিল, কিন্তু
বেদের শেষের দিকে এই ধ্বনির ব্যবহার লোপ পেতে থাকে। কিন্তু লৌকিক সংস্কৃতে
একমাত্র ক্৯প্-ধাতু ছাড়া
৯ ধ্বনির প্রয়োগ একেবারেই দেখা যায় না।
iii) বৈদিক
ভাষায় স্বরাঘাতের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা ছিল এবং শব্দের মধ্যে একটি অক্ষর থেকে অন্য
অক্ষরের স্থান পরিবর্তন করলে তার ফলে শব্দের অর্থেরও পরিবর্তন হত। কিন্তু লৌকিক
সংস্কৃত স্বরাঘাতের কোনো ভূমিকাই ছিল না।
iv) বৈদিক
সংস্কৃতে সন্ধির বন্ধনের নিয়মাবলী সুনির্দিষ্ট ছিল না। যেমন- তিতউ, প্রউগ।
কিন্তু লৌকিক সংস্কৃতের ক্ষেত্রে সন্ধি ছিল বাধ্যতামূলক। “সংহিতৈকপদে
নিত্যা নিত্যা ধাতুপসর্গয়োঃ…”। এই নিয়মটি
ছিল পালণীয়।
লৌকিক সংস্কৃত ও বৈদিক
সংস্কৃতের মধ্যে রূপতাত্ত্বিক পার্থক্য :-
i) শব্দরূপে লৌকিক সংস্কৃতের চেয়ে বৈদিক সংস্কৃতের বৈচিত্র্য ছিল
অনেক বেশী। একই বিভক্তি ও বচনে অতিরিক্ত বিকল্প বৈদিকে বেশী দেখা যায়। যেমন- অকারান্ত
পুংলিঙ্গ শব্দ নর লৌকিক সংস্কৃতে এই শব্দের
দ্বিবচনের প্রথমা এবং দ্বিতীয়া বিভক্তিতে শুধু একটা রূপ পাওয়া যায় নরৌ। কিন্তু
বৈদিকে আরো একটি রূপ পাওয়া যায় নরা। ঠিক এই রকমই আবার প্রথমার বহুবচনে লৌকিক
সংস্কৃতে আমরা পাই শুধু নরাঃ। কিন্তু বৈদিক সংস্কৃতে আমরা অতিরিক্ত রূপ পাই নরাসঃ।
ii) ক্রিয়া বা
ধাতুরূপের ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাই লৌকিক সংস্কৃতের চেয়ে বৈদিক সংস্কৃতের বৈচিত্র্য
বা প্রাচুর্য অনেক বেশী। বৈদিক ভাষায় ক্রিয়ার পাঁচটি কাল হল- লট্ (বর্তমান) লৃট্ (ভবিষ্যৎ) লঙ্ (অসম্পন্ন অতীত) লিট্
(সম্পন্ন অতীত) লুঙ্ (সদ্য
অতীত)। লক্ষণীয় যে শেষের তিনটিই ছিল বৈদিক ভাষার অতীতকালের প্রকারভেদ। লৌকিক
সংস্কৃতের মধ্যে আমরা আরো দুটি কাল পাই। লৃঙ্(সম্ভাব্য অতীত) লুট্ (বহুভাষিত
ভবিষ্যৎ)।
iii) বৈদিক ভাষায়
উপসর্গ ব্যবহারের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল না। প্র, পরা
প্রভৃতি ধাতুর পূর্বে পরে এবং ধাতুর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও প্রযুক্ত হত। যেমন- উপতাগ্নে….নমোভরন্ত
এমসি। কিন্তু লৌকিক সংস্কৃতে স্বতন্ত্র ভাবে
উপসর্গের ব্যবহার ছিল সীমাবদ্ধ। উপসর্গ প্রধানত ক্রিয়ার পূর্বে বসে ক্রিয়ার
অর্থকে পরিবর্তন করত।
iv) বেদের
ক্ষেত্রে সুদীর্ঘ সমাসবদ্ধ পদের সংখ্যা খুবই অল্প। তিনটির বেশী পদের একপদীভাব
খুবই কম। কিন্তু লৌকিক সংস্কৃতের ক্ষেত্রে বহুপদে গঠিত হয়। যেমন- বাণভট্টের
কাদম্বরী, দণ্ডীর দশকুমারচরিত ইত্যাদি।
v) বৈদিক
ছন্দের সংখ্যা মূলত সাতটি। যথা- গায়ত্রী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ্, বৃহতী,পুঙক্তি,ত্রিষ্টুপ্,জগতি।
কিন্তু পরবর্তীকালে লৌকিক সংস্কৃতে সম, অর্ধসম, বিষম এই
তিন প্রকার ছন্দেরই বিপুল বৈচিত্র্য বিস্ময়কর।
vi) বৈদিক
ভাষায় শতৃ,শানচ্ ইত্যাদি প্রত্যয় যোগ করে বহু
বিচিত্র ক্রিয়াজাত বিশেষণ সৃষ্টি করা হয়। যেমন- √ যজ্ > যজমান।
এইরকম ত্বা, ত্বায় ইত্যাদি প্রত্যয় যোগ করে বহু
অসমাপিকা ক্রিয়াও গঠিত হত। যেমন- √ পা> পিত্বা, লৌকিক
সংস্কৃত এইরকম ক্রিয়াজাত বিশেষণ ও অসমাপিকার প্রয়োগ কমে যায়।
0 Comments: