ন্যায়দর্শন
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News



যুক্তি তর্কের দ্বারা কোন বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়াকে ন্যায় বলা হয়। কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য যুক্তিসিদ্ধ চিন্তা প্রক্রিয়া কিরূপ হওয়া উচিৎ সে বিষয়ে নির্দেশ দান করাই হল ন্যায়। ন্যায়দর্শনের প্রবর্তক হিসেবে ঋষি গৌতম এর নাম উল্লেখ করা যায়, যিনি অক্ষপাদ নামেও পরিচিত। অনেক আধুনিক চিন্তাবিদ ন্যায়দর্শনকে যুক্তিনির্ভর বস্তুবাদ (Logical realism) আখ্যা দিয়ে থাকেন। ভারতীয় দার্শনিকদের মত নৈয়ায়িকগণ মোক্ষকে জীবনের পরম লক্ষ্য হিসেবে স্বীকার করেছেন। ন্যায়দর্শন ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে এবং বেদকেও স্বীকার করে তাই ন্যায়দর্শন এক প্রকারের বৈদিক দর্শন। ভারতীয় ন্যায়দর্শনের দুটি শাখা বর্তমান- ক) প্রাচীন ন্যায় এবং খ) নব্য ন্যায়। প্রাচীন ন্যায়দর্শনের মূল ভিত্তি হল গৌতমের ন্যায়সূত্র। আর নব্য ন্যায়ের সূত্রপাত গৌতমের মতবাদ খন্ডনের মধ্য দিয়ে। 
ন্যায় দর্শন অনুযায়ী জ্ঞান দুই প্রকারের- প্রমা এবং অপ্রমা। প্রমা বা প্রকৃত শুদ্ধ জ্ঞান চার প্রকারে আহরণ করা যায়। এই চারটি প্রক্রিয়া হল- প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শব্দ। প্রত্যক্ষই সকল প্রকার জ্ঞান আহরণের মূল পদ্ধতি। এই দর্শনে বলা হয়েছে ১২টি বিষয়ের জ্ঞান মানুষের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজন। এগুলি হল- ১) আত্মা, ২) শরীর, ৩) ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত বিষয়, ৪) বুদ্ধি, ৫) মন, ৬) প্রবৃত্তি, ৭) দোষ,  ৮) প্রেত্যভাব, ৯) ফল, ১০) অর্থ, ১১)  দুঃখ এবং ১২) অপবর্গ।

ন্যায় দর্শন মতে আত্মা একটি অসাধারণ অভৌতিক বস্তু। নৈয়ায়িকদের মতে জ্ঞান, ইচ্ছা, দ্বেষ, প্রযত্ন, সুখ, দুঃখ, ধর্ম, অধর্ম এগুলি সবই আত্মার গুণ। তাঁরা বলেছেন এতগুলি গুণ একত্রে কোন জড় বস্তুর মধ্যে থাকতে পারে না। তাই এমন একটি অজড় বস্তু বর্তমান যার মধ্যে এই সবগুলি গুণ থাকে আর সেই অজড় বা অভৌতিক বস্তুকেই বলা হয়েছে আত্মা। ন্যায়দর্শনে দুই প্রকার আত্মার কথা বলা হয়েছে, জীবাত্মা এবং পরমাত্মা।

আধুনিক শিক্ষায় ন্যায়দর্শন-

আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে সহায়তা করা সুতরাং আধুনিক শিক্ষার এই লক্ষ্যের সমর্থন পরোক্ষভাবে ন্যায় দর্শনে মেলে। কারণ ন্যায় দর্শনে বলা হয়েছে পরমাত্মার উপলব্ধির মধ্য দিয়ে মোক্ষলাভ করা যায়, যা জীবনের চরম লক্ষ্য আর এই মোক্ষ বা পরমাত্মার উপলব্ধি নির্ভর করে প্রকৃত জ্ঞানের উপর। আবার ন্যায়দর্শনে যে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিগুলির উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলিও আধুনিক শিক্ষাতত্ত্বে স্থান পেয়েছে। জ্ঞানার্জনের পদ্ধতি হিসেবে ন্যায়দর্শনের প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান এবং শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে‌। আধুনিক শিক্ষার ইন্দ্রিয় পরিমার্জনের নীতি এবং ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে শিক্ষণের নীতি ন্যায়দর্শনের প্রত্যক্ষ ভিত্তিক জ্ঞানার্জনের অনুরূপ। শিক্ষণে 'জানা থেকে অজানা'র দিকে অগ্রসর হওয়ার নীতি ন্যায়দর্শনের অনুমান পদ্ধতিতে জ্ঞানার্জনের সামিল। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের যে সকল গুণাবলীর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হল সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্থাৎ যে ব্যক্তির বিষয় জ্ঞান গভীর এবং যিনি শিক্ষার্থীদের যে কোন সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করতে সক্ষম তিনিই শিক্ষকতার যোগ্য। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষক সম্পর্কিত এই ধারণা ন্যায় দর্শনের শাব্দিক জ্ঞানের উৎস সংক্রান্ত মতবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ন্যায়দর্শনের বহুত্বের স্বীকৃতি, আধুনিক শিক্ষাতত্ত্বের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের নীতি এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষণ পদ্ধতির মধ্যে কার্যকরী হয়েছে তা বলাই যায়।

0 Comments: