পাঠক্রমের নির্ধারকসমূহ (Determinants of Curriculum)
INFO Breaking
Live
wb_sunny

Breaking News

পাঠক্রমের নির্ধারকসমূহ (Determinants of Curriculum)

পাঠক্রমের নির্ধারকসমূহ (Determinants of Curriculum)

 


একটি নির্দিষ্ট পাঠক্রম বছরের পর বছর ধরে স্থির থাকে না। লক্ষ্য করা গেছে যখনই শিক্ষার লক্ষ্যগুলি শিক্ষার্থী, সমাজ এবং বৃহত্তরভাবে জাতির চাহিদা ও চাহিদা অনুসারে পরিবর্তিত হয় তখনই পাঠ্যক্রমের রূপ পরিবর্তিত হয়। পাঠ্যক্রম বিভিন্ন বিষয় অনুযায়ী পরিচালিত হয় যেগুলিকে পাঠ্যক্রমের নির্ধারক বলা হয়। পাঠ্যক্রমের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক নিম্নে দেওয়া হল:-

১. পাঠ্যক্রমের দার্শনিক নির্ধারক

২. পাঠ্যক্রমের মনস্তাত্ত্বিক নির্ধারক

৩. পাঠ্যক্রমের সমাজতাত্ত্বিক নির্ধারক

৪. পাঠ্যক্রমের বৈজ্ঞানিক নির্ধারক

৫. পাঠ্যক্রমের রাজনৈতিক নির্ধারক

৬. পাঠ্যক্রমের ঐতিহাসিক নির্ধারক


১. পাঠ্যক্রমের দার্শনিক নির্ধারক: দর্শন পাঠ্যক্রমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক কারণ এটি আমাদের শিক্ষাগত লক্ষ্যকে প্রভাবিত করে। এছাড়া আমাদের বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং ব্যক্তিগত আদর্শ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। দর্শনের বিষয়গুলি বিদ্যালয় এবং সমাজের উপর দৃষ্টান্তমূলক প্রভাব ফেলে যা মানবজীবনের আদর্শ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়। এটি তরুণদের মধ্যে জীবনের কাঙ্খিত আদর্শের জন্ম দেয়। এইভাবে শিক্ষাদর্শন প্রভাবিত করে এবং অনেকাংশে আমাদের শিক্ষাগত সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করে।


দর্শনের নিম্নলিখিত স্কুলগুলি পাঠ্যক্রম নির্মাণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে:


1. আদর্শবাদ

2. প্রকৃতিবাদ

3. বাস্তববাদ

4. প্রয়োজনবাদ

5. অস্তিত্ববাদ


২. পাঠ্যক্রমের মনস্তাত্ত্বিক নির্ধারক: পাঠ্যক্রম বহুলাংশে মনোবিজ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত। মনোবিজ্ঞান শিক্ষাদান এবং শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। এটি শিক্ষার্থীর প্রকৃতি এবং শেখার প্রক্রিয়া এবং সর্বোত্তম শিক্ষার সুবিধা প্রদানকারী শর্তগুলির জ্ঞান প্রদান করে। এটি জ্ঞানের বৃদ্ধি, বুদ্ধির বিকাশ ঘটায় এবং উন্নয়ন ক্ষমতা প্রদান করে। পাঠ্যক্রম শিশুকেন্দ্রিক হওয়া দরকার কারণ শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশের সাথে সঙ্গতি রেখে শেখার অভিজ্ঞতাও প্রদান করা উচিৎ। শিক্ষার যেসমস্ত মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব যা পাঠ্যক্রমের বিকাশকে প্রভাবিত করে:

1. আচরণবাদ

2. সমগ্রতাবাদ

3. মানবতাবাদ


৩. পাঠ্যক্রমের সমাজতাত্ত্বিক নির্ধারক: সমাজ এবং পাঠ্যক্রমের মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, বিদ্যালয় সামাজিক প্রেক্ষাপটের মধ্যেই বিদ্যমান। সমাজ আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী, নিয়ন্ত্রিত তথা অনিয়ন্ত্রিত সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। একটি দেশে অবশ্যই একটি পাঠ্যক্রম চালু থাকবে যেখানে তার সংস্কৃতি এবং জাতীয় পরিচয়ের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করবে এবং সংরক্ষণ করবে। সুতরাং, সমাজের এমন অনেক দিক রয়েছে যা পাঠ্যক্রম প্রণয়নে বিবেচনা করা প্রয়োজন। শিক্ষাকে সম্প্রদায়কেন্দ্রিক করার জন্য পাঠ্যক্রম প্রণয়নের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিৎ যেমন-

ক) ভারতীয় সমাজের মূল্যবোধ এবং চাহিদা

খ) মানুষের মূল্যবোধের পরিবর্তন

গ) আধুনিক সমাজের চাহিদা 

ঘ) সুষ্ঠু পারিবারিক জীবন 

ঙ) সমাজের গণতান্ত্রিক অধিকার 

চ) আস্থা, বিশ্বাস এবং মানুষের মনোভাব


৪. পাঠ্যক্রমের বৈজ্ঞানিক নির্ধারক: আধুনিক যুগ হল বিজ্ঞান নির্ভর। যে কোনো জাতির অগ্রগতি তার বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। দেশের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জন্য সব শাখার বিজ্ঞানীদের প্রয়োজন। এজন্য বৈজ্ঞানিক শিক্ষা অপরিহার্য। ভারতের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি প্রয়োজন। তদনুসারে, পাঠ্যক্রম নির্মাণ ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষার লক্ষ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়।


৫. পাঠ্যক্রমের রাজনৈতিক নির্ধারক: রাজনৈতিক সেট-আপ বা ফর্ম পাঠ্যক্রম নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলের শিক্ষা এবং পাঠ্যক্রমের ধরন নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশ তার পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক ন্যায়বিচার, সমাজতন্ত্র, অধিকার এবং কর্তব্যের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকাশের চেষ্টা করে।


৬. পাঠ্যক্রমের ঐতিহাসিক নির্ধারক: পাঠক্রমের ঐতিহাসিক নির্ধারক বলতে বোঝায়, শিক্ষা ও পাঠ্যক্রমের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং দার্শনিক প্রেক্ষাপট কিভাবে পাঠক্রমের রূপরেখা ও বিষয়বস্তুকে প্রভাবিত করেছে। ঐতিহাসিক ঘটনা ও পরিবর্তনও পাঠক্রমের উপর প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, কোন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। 

0 Comments: